‘ভারত জোড়ো যাত্রা’ রাজনীতিতে ভালোবাসার ধারণার প্রবর্তন ঘটিয়েছে, জানালেন রাহুল গান্ধী

‘ভারত জোড়ো যাত্রা রাজনীতিতে ভালোবাসার ধারণার প্রবর্তন করেছে’, এমনটাই জানালেন রাহুল গান্ধী। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস রাজ্যের ডালাস শহরে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের সঙ্গে কথোপকথন চলাকালীন এই কথা বলেন কংগ্রেসের সাংসদ এবং লোকসভার বিরোধী দলনেতা। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তিনদিনব্যাপী সফরে রয়েছেন। তাঁর সঙ্গে আছেন বিদেশে ভারতীয় কংগ্রেসের চেয়ারম্যান স্যাম পিত্রোদা।

রাহুল গান্ধী বলেন, ‘এর (ভারত জোড়ো যাত্রা পরিচালনা) পিছনে কারণ মূলত একটাই – ভারতে সবরকম যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ রাখা হয়েছিল। আমরা যাই করি না কেন, কোনও লাভ হয়নি। আমরা পার্লামেন্টেও বলেছি, যা টিভিতে সম্প্রচারিত হয় না। সংবাদমাধ্যমের কাছেও গেছি আমরা। ওরাও আমাদের কথা শোনেনি।… হঠাৎই আমাদের মাথায় একটা বুদ্ধি খেলে যায়।… যদি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো না যায়, তবে সরাসরি তাদের কাছে পৌঁছোতে হবে। আর তাদের কাছে পৌঁছোনোর সবথেকে ভালো উপায় পায়ে হেঁটে গোটা দেশ ঘোরা, আর সেটাই আমরা করেছি।’

“আমি নিজের কাজকে কীভাবে দেখি, সেটা ভারত জোড়ো যাত্রা আমূল বদলে দিয়েছে।…আমি কীভাবে রাজনীতিকে দেখি, আমাদের লোককে কীভাবে দেখি, আমি কীভাবে সংযোগ করি, কীভাবে শুনি – সমস্তকিছু বদলে গিয়েছে। আর আমার কাছে সবথেকে শক্তিশালী হল এই, যে আমরা কীভাবে ভালোবাসার ধারণাকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি। অধিকাংশ দেশের রাজনৈতিক প্রতর্কে কোথাও “ভালোবাসা” শব্দটা পাওয়া যায় না… অথচ, ঘৃণা, ক্রোধ, ন্যায়, দুর্নীতি পাওয়া যায়। ভারত জোড়ো যাত্রা এই ভালোবাসাকেই ভারতীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিয়ে এসেছে।’


প্রসঙ্গত, ভারত জোড়ো যাত্রা দুটি পর্যায়ে হয়েছিল। প্রথম পর্যায়ের নাম ছিল ‘ভারত জোড়ো যাত্রা’, যা ২০২২ এর ৭ সেপ্টেম্বর দক্ষিণে তামিলনাড়ুর কন্যাকুমারিকা থেকে শুরু হয়। এই পদযাত্রা শেষ হয় উত্তরে, জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে, ২০২৩ এর ৩১ জানুয়ারি। প্রথম পর্যায়ে মোট ১২টি রাজ্যের মধ্যে দিয়ে ৪০৮০ কিমি পথের এই পদযাত্রা হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ের নাম ছিল ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’, যা মণিপুরের থুবাল থেকে ২০২৪ এর ১৪ জানুয়ারি শুরু হয়। মোট ৬৭১৩ কিমি রাস্তা পায়ে হেঁটে পার করা হয়। ১৫টি রাজ্যব্যাপী দ্বিতীয় পর্যায়ের এই পদযাত্রার সমাপ্তি হয় মুম্বাইতে, ২০২৪ এর ১৬ মার্চ তারিখে।

এই সঙ্গে রাহুল গান্ধী আরও বলেন, ভারতে লোকসভা ভোটের পর মানুষ আর বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ভয় পায় না। তিনি বলেন, লোকসভা ভোটের ফলাফলে তাঁর নিজের কিংবা কংগ্রেসের জয় হয়নি, জয় হয়েছে মানুষের ইচ্ছার। আরএসএসের প্রসঙ্গও এসেছে তাঁর কথায়। আরএসএসের সঙ্গে কংগ্রেসের আদর্শগত তফাতের কথা উল্লেখ করে রাহুল বলেন, আরএসএস বিশ্বাস করে ভারত আসলে একটিই ধারণা। কিন্তু, আমরা মনে করি ভারত হল বহু ধারণার সমন্বয়। ভারতের ভাষাগত, ধর্মীয় এবং জাতিগত বৈচিত্র্যের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। লোকসভা ভোটের আগে তাঁর নিজের ভূমিকা কী ছিল, সেই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি মানুষের মধ্যে ভালোবাসার বোধ জাগাতে চেয়েছিলাম। লোকসভা ভোটের প্রচারে তিনি বারবার দেশের সংবিধান রক্ষার কথা বলেছিলেন। সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি সংবিধানকে তুলে ধরেছিলাম। তাতে মানুষ বুঝেছে, আমি কী বলতে চেয়েছি।’
ডালাসে স্যাম রাহুলের প্রশংসা করে বলেন, ‘রাহুল উচ্চশিক্ষিত এবং যে কোনো বিষয়ে গভীরভাবে ভাবতে পারেন। তিনি যেকোনও বিষয়ের রূপরেখা তৈরি করতে পারেন।’