• facebook
  • twitter
Tuesday, 8 April, 2025

উল্টো পথে হাঁটলেন ইউনূস, ভাষা দিবসে ভাইয়ের রক্ত ভুলতে বসেছে বাংলাদেশ

হাসিনাহীন বাংলাদেশে বেনজির ঘটনা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ১৯৭২ সাল থেকে চলে আসা রীতি ভাঙলেন ইউনূস খান।

ফাইল চিত্র

হাসিনাহীন বাংলাদেশে বেনজির ঘটনা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ১৯৭২ সাল থেকে চলে আসা রীতি ভাঙলেন ইউনূস খান। যে বাংলাদেশে একসময় স্লোগান উঠেছিল ‘মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সমান’, সেই দেশেই এখন ‘পাক প্রেম’-এর হাওয়া বইছে। সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নির্বিচারে অত্যাচার, লাগাতার মন্দিরে ভাঙচুর চলছে বাংলাদেশজুড়ে। এর নেপথ্যে রয়েছে ইউনূস ও ‘বৈষম্যবাদী’ ছাত্ররা। জামাতের মতো মৌলবাদী দল তাদের প্রকাশ্যে মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ।

ইউনূসের বাংলাদেশে একদিকে যেমন দেশের নাম পরিবর্তন থেকে জাতীয় সঙ্গীত ‘আমার সোনার বাংলা’র বদলের দাবি উঠছে, ঠিক তেমনই রবীন্দ্রনাথ, নজরুলকে মুছে ফেলার নির্লজ্জ চেষ্টা চলছে। দেশজুড়ে উর্দু, আরবি ভাষার দাপাদাপি চোখে পড়ছে। ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধের সাক্ষী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যা নামলে এখন উর্দু কাওয়ালির আসর বসে। জুলাই ও আগস্ট মাসের ‘গণঅভ্যুত্থানে’ শহিদদের স্মরণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাঁকজমকপূর্ণ কাওয়ালি গানের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলসিলা এবং ক্বাসীদা ব্যান্ড সেই আসরে যোগ দিয়েছে।

আর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে তো বেনজির ঘটনার সাক্ষী থাকল বাংলাদেশ। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন উপস্থিত থাকাকালীন শহিদ মিনারে গেলেন না বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রপতি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বর থেকে ফিরে যাওয়ার পর সেখানে যান প্রধান উপদেষ্টা। অনেকেই মনে করছেন, ভাষা দিবসে এহেন আচরণ করে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের প্রতি অনাস্থার বার্তা দিয়েছেন ইউনূস।

১৯৭২ সাল চলে আসা রীতি অনুযায়ী, ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ভাষা শহিদদের স্মৃতিস্তম্ভ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে প্রথম শ্রদ্ধা জানাবেন রাষ্ট্রপতি। তারপর শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করবেন দেশের সরকারের প্রধান। গত বছরও এই দিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপতি একসঙ্গে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছিলেন। এবার ইউনূস ও রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর একসঙ্গে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করার কথা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। রাষ্ট্রপতি ফিরে যাওয়ার ঠিক ৭ মিনিটের মাথায় সেখানে পৌঁছন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা।

এখানেই শেষ নয়, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কোনও উপদেষ্টা এদিন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়ও করেননি বলেই খবর। প্রথা অনুযায়ী সেনাপ্রধান ওয়াকারুজ্জামান সহ তিন বাহিনীর প্রধানরা রাষ্ট্রপতির দিকে এগিয়ে যাননি। শহিদদের শ্রদ্ধা জানানোর পর মাথা নীচু করে দূরে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়িতে উঠে বঙ্গভবনে ফিরে যান রাষ্ট্রপতি।

একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাষ্ট্রপতিকে এদিন স্বাগত জানান। তিনি ছাড়া সরকার এবং প্রশাসনের কাউকেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য বিনিময় করতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশ সরকারের নিউজ এজেন্সি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা আবার একুশের বেদিমূলে রাষ্ট্রপতির শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের ছবি প্রকাশ করেনি। প্রথম পাতায় কেবলমাত্র ইউনূসের শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের ছবি এবং খবর ছাপা হয়েছে।

এদিকে এবার রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। বিপ্লবী ছাত্র পরিষদ নামে একটি সংগঠন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বর অবরোধ করেছিল। তাদের দাবি ছিল, রাষ্ট্রপতিকে এই বছর তারা পুস্পস্তবক দিতে দেবেন না। সূত্রের খবর, রাষ্ট্রপতি মহম্মদ সাহাবুদ্দিন চুপ্পু আওয়ামি লিগ সরকারের নির্বাচিত হওয়ায় ভাষা দিবসে শহিদ মিনারে তাঁকে না যাওয়ার নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই নির্দেশ উপেক্ষা করে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতির এহেন আচরণে ইউনূস সরকারের উপদেষ্টারা ক্ষুব্ধ বলে মনে করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে ছাত্র আন্দোলনে রক্তাক্ত হয়েছে বাংলাদেশ। তারপর শেখ হাসিনার পতন হয়েছে। মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। আর তারপর থেকেই বাংলাদেশে জারি রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার প্রক্রিয়া। বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের সূচনা নারায়ণগঞ্জের বায়তুল আমান ভবনের ওপর আক্রমণ নেমে এসেছে। হাসিনা, শেখ মুজিবর রহমানের বাড়িও রক্ষা পায়নি মৌলবাদীদের হাত থেকে। বিভিন্ন ঐতিহাসিক ভবন এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।