• facebook
  • twitter
Thursday, 31 October, 2024

দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশও ‘ভিখারি’ হবে, জানাল মুডি’জ 

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ফিরে  গিয়েছে কোভিড-১৯ কালে। কোভিড মহামারিতে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি অনেকটাই পেছনে চলে গেলেও সেই ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে-ধীরে বিশ্বের বহু দেশ উন্নতির দিকে অগ্রসর। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থিনীতি মুখ ধুবড়ে পড়েছে। যা দেখেশুনে  মুডি’স-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে হাসিনার বিদায় সেই দেশের অর্থনীতির ভয়ানক ক্ষতি করতে চলেছে বলে মনে

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ফিরে  গিয়েছে কোভিড-১৯ কালে। কোভিড মহামারিতে গোটা বিশ্বের অর্থনীতি অনেকটাই পেছনে চলে গেলেও সেই ধাক্কা কাটিয়ে ধীরে-ধীরে বিশ্বের বহু দেশ উন্নতির দিকে অগ্রসর। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থিনীতি মুখ ধুবড়ে পড়েছে। যা দেখেশুনে  মুডি’স-এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদন বলছে হাসিনার বিদায় সেই দেশের অর্থনীতির ভয়ানক ক্ষতি করতে চলেছে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে অর্থনীতি ফের মহামারির সময়ের মতো খাদে পড়ে যেতে পারে বলে সতর্ক করেছে মুডি’স।
এর আগে মুডি’স-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, চলতি আর্থিক বছরে বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫.৪ শতাংশের মতো থাকবে। কিন্তু, সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে জিডিপি বৃদ্ধির হার আরও কমে ৫.১ শতাংশ হয়ে যেতে পারে।
এই প্রতিবেদন বলছে, হাসিনার ১৫ বছরে দুর্দান্ত গতিতে এগোচ্ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতি। ২০১১ থেকে ২০১৯-এর মধ্যে একটানা ৬ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের জিডিপি। ২০১৬-র পর, দেশের মূল্যবৃদ্ধির হার নেমে গিয়েছে ৬ শতাংশের নীচে। ২০১১ সালের তুলনায় বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২০১৯-এ দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছিল ২,১৫৪ মার্কিন ডলার। ২০২৪-র মধ্যে তা থেকে অনেকটাই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে, অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার, বাংলাদেশি টাকার দাম, মাথাপিছু আয়, বৈদেশিক মুদ্রার ভাঁড়ার – সবই কমেছিল। একই সঙ্গে বেড়েছিল মূল্যবৃদ্ধির হার এবং বেকারত্ব।
হাসিনার বিদায়ের আগে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে চলছিল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। গোটা দেশে শুরু হয়েছিল অরাজকতা। জারি করা হয়েছিল অনির্দিষ্টকালের কারফিউ। বন্ধ ছিল কলকারখানা, দোকানপাট। গত সোমবার (৫ অগস্ট), দেশ ছেড়েছিলেন হাসিনা। তার পরের দিন, অর্থাৎ, মঙ্গলবারই প্রত্যাহার করা হয় কারফিউ। তারপরও নৈরাজ্যর অবসান ঘটেনি। এই পরিস্থিতি অনেকটাই কোভিড মহামারির সময়কার লকডাউনের মতো পরিস্থিতি তৈরি করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে মুডি’স। যদি বাংলাদেশের পরিস্থিতি দ্রুত শান্ত না হয় এবং কল-কারখানাগুলি আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ রাখতে হয়, সেই ক্ষেত্রে কোভিড মহামারীর সময়ের মতো রফতানি কমে যেতে পারে বাংলাদেশের, এমনটাই বলা হয়েছে মুডি’স প্রতিবেদনে।
সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের বক্তব্য, দেশের আর্থিক কর্মকাণ্ডকে ঠিক পথে নিয়ে আসা এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরানোই এখন তাঁদের লক্ষ্য। শনিবার তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। জানিয়েছেন, দেশ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে। এখন প্রধান কাজ আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার। তাঁর মতে, আইনশৃঙ্খলার অর্থ শুধু রাস্তাঘাটে বিধি-নিয়ম মানা নয়। ব্যাঙ্ক, বন্দর-সহ গোটা আর্থিক কর্মকাণ্ডকে স্বাভাবিক করা।
সালেহউদ্দিন অর্থনীতিবিদ তথা দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর। সেখানকার গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার পদত্যাগ করেছেন। এই অবস্থায় আপাতত তাঁর প্রধান কাজ শীর্ষ ব্যাঙ্কের কাজকর্ম স্বাভাবিক করে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা ফেরানো। উপদেষ্টার কথায়, ‘বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনীতি মন্থর হয়েছে। বেশ কিছু সমস্যা আছে। বিশেষত ব্যাঙ্কিং, মূল্যবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আমাদের লক্ষ্য দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। অর্থনীতি থমকে গেলে তাকে ফের চালু করা কঠিন। ফলে একে থেমে যেতে দেওয়া যাবে না।’
দ্রুত এই অরাজনৈতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারলে কিন্তু অচিরেই বাংলাদেশের পরিস্থিতি পাকিস্তানের মতো হয়ে যেতে পারে। বর্তমানে পাকিস্তানের অর্থনীতির যা অবস্থা, তাতে তারা এক প্রকার ভিখারিতে পরিণত হয়েছে। তা পাকিস্তানের নেতারা নিজেরাই স্বীকার করেন। পাকিস্তানের অর্থনীতির এই বেহাল দশারও মূল কারণ কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা। বাংলাদেশের কী হয়, এখন সেটাই দেখার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ‘আপাতত, আমরা এই বছরের জন্য বাংলাদেশের জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস, আগের ৫.৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫.১ শতাংশে সংশোধন করেছি। এটি একটি অস্থায়ী চিত্র যা রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভরশীল।’ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন, শেখ হাসিনা জোর দিয়েছিলেন বাংলাদেশের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে। যাতে, বাংলাদেশে শিল্প স্থাপনে আস্থাবান হয় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলি। কিন্তু, মুডি’স-এর প্রতিবেদন বলছে, বর্তমানে বাংলাদেশে যা চলছে, তাতে সংস্থাগুলি বাংলাদেশে আর ব্যবসা করবে কিনা, তা পুনর্বিবেচনা করতে পারে। ইতিমধ্যেই সাপ্লাই চেইন, বা, সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন ঘটায়, বেশ কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান অন্য দেশে সরে যেতে শুরু করেছে। তার মধ্যে ক্রমে বাড়ছে মুদ্রা সংকট। যা বাংলাদেশকে সম্ভাব্য অর্থনৈতিক পতনের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করার তিন দিন পর, বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন শান্তিতে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ, মহম্মদ ইউনুস। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনা উপদেষ্টা হয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর, সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বিলক্ষণ জানেন, দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভাল নয়। শনিবার, তিনি উপদেষ্টার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। তারপরই জানিয়েছেন, দেশের অর্থিনৈতিক কর্মকাণ্ডকে পথে নিয়ে আসা এবং ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় সাধারণ মানুষের আস্থা ফেরানোই তাঁদের প্রধান লক্ষ্য। ব্যাঙ্ক, বন্দর-সহ দেশের আর্থিক কর্মকাণ্ডকে স্বাভাবিক করা। তিনি বলেছেন, “বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনীতি মন্থর হয়েছে। বেশ কিছু সমস্যা আছে। বিশেষত ব্যাঙ্কিং, মূল্যবৃদ্ধি-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে। আমাদের লক্ষ্য দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা। অর্থনীতি থমকে গেলে তাকে ফের চালু করা কঠিন। ফলে একে থেমে যেতে দেওয়া যাবে না।”