তিন ক্যালগেরি ও বিএএনএফ 

অজিতকৃষ্ণ দে
কানাডার আলবার্টা রাজ্যে ক্যালগেরি ও বিএএনএফ পড়ে৷ আমরা Ontario থেকে ক্যালগেরি ও বিএএনএফ-এ ফ্লেয়ার এয়ার ওয়েজে (FLAIR AIR WAYS) চেপে ক্যালগেরি রাত দুটোর সময় পৌঁছালাম৷উড়োজাহাজ ছাড়ল কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে নটায়৷মোটামুটি ডিনার সেরেই আমরা সাড়ে ছটার মধ্যে টরেন্টো এয়ার পোর্টে সিকিউরেটিং চেকের জন্য চলে এসেছিলাম৷ মনের মধ্যে শুধু লেক এবং বান্প শহর দেখার একটা অন্তিম ইচ্ছা কাজ করছে ৷ আনন্দ সেতো সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছি৷ মনে পড়ছে কবি ওয়ারডস ওয়ারথের ইয়ারো ভিজিট আর আন ভিজিটের কথা৷ প্লেনে উঠে ভাবছি আলবার্টা রাজ্যে ক্যালগেরি ও BANF এ প্রচন্ড ঠান্ডায়৷ প্রায় মাইনাস ডিগ্রী চলছে৷ ব্যাগে সেইরকম লাগেজ রাখা হয়েছে৷ ওসব আবহাওয়ার জন্য আমরা ঠিক অভ্যস্থ নই৷ তাই সাবধানতা অবলম্বন আবশ্যিক৷ রাত প্রায় দুটোয় আমরা আলবার্টা রাজ্যে ক্যালগেরি বিমানবন্দরে পৌঁছালাম ৷ মাসটা অগস্ট মাস৷ যখন আলবার্টা রাজ্যে ক্যালগেরি বিমনাবন্দরে এর গেট দিয়ে রাস্তায় ঠান্ডা বাতাস বইছে৷উবের বুক করা ছিল৷ নিমেষের মধ্যে উবের এসে হাজির৷ আমরা পটাপট উঠে পড়লাম উবেরে৷ কিছুক্ষণের মধ্যে হোটেলে ঢুকে পড়লাম৷ হোটেলের ভেতর ঠান্ডা বোঝা যাচ্ছেনা৷ তার কারণ হিটার চলছে৷ সোফায় বসতেই সিসেপসন থেকে কফি দিয়ে গেল৷ তখন কফিটা খুবই জরুরী৷ তখন য ঘড়িতে রাত দুটো বাজে বোঝা যাচ্ছে না৷ কফি খেয়ে ঘরে গিয়ে শোবার ব্যবস্থা করতে লাগলাম৷ সারাদিনের ক্সান্তি,একটু ঘুম তো দরকার৷
পরের দিন সকালে আমরা সকাল সাতটায় উঠে নীচে হোটেলের জলখাবার টেবিলে প্রাত:রাশ খেতে বসে পড়লাম৷ দু তিনবার কফি খেলাম৷ কফি যে যত ইচ্ছে খেতে পারে৷ যাইহোক প্রাত:রাশের পর্ব শেষ করে আমরা লাগেজ নিয়ে BANFএর উদ্দেশ্য রওনা দিলাম৷ এবার একটা কথা বলি, এই যাত্রায় সঙ্গী ছিল আমার মেয়ে ও জামাই৷ ওদের সঙ্গেই আমার যাওয়া৷আমার জামাই ক্যালগেরি বিমানবন্দরে কাছ থেকে সকাল বেলায় পনের দিনের জন্য একটা গাড়ি ভাড়া করে এনেছিল৷ গাড়ি চলিয়েছে ও৷ ওর গাড়ি চালানোর হাত খুব সুন্দর৷ যাকে বলে দক্ষ৷ আমরা পরের দিন সকালে বেড়িয়ে পড়লাম৷ তারপর ওই গাড়ি করে  টিম হটন-এ সকাল বেলার খাবার সেরে মিনেওয়াঙ্খা লেক দেখতে চলে গেলাম৷ মিনেওয়াঙ্খা লেকে আমরা ক্রুইজে চড়ে প্রায় একঘন্টা লেকটা ঘুরলাম৷
ফরফুরে হাওয়া৷ অপূর্ব দৃশ্য৷ মন শুধু ভরছেনা আনন্দে নেচে উঠছে৷ শরীরে কোন ক্লান্তি নেই৷ চারিদিকে পাহাড় ঘেরা মাঝে মিনেওয়াঙ্খা লেক৷ এ এক স্বর্গীয় আনন্দ৷ মিনেওয়াঙ্খা লেক বা হ্রদ কানাডার ব্যানফ ন্যাশানাল পার্কের পূর্বাঞ্চলে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার (৩.১) মাইল উত্তর–পূর্বে অবস্থিত একটি হিমবাহী হ্রদ৷ ব্যানফ টাউনসাইটের৷ হ্রদটি ২১ কিমি (১৩) মাইল দীর্ঘ এবং ১৪২ মিটার (৪৬৬) ফুট গভীর৷ হ্রদটি ক্যাসকেড মাউনটেনের পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়৷ ক্লোভিড পয়েন্ট স্পিয়ারহেড অনুসারে আদিবাসীরা ১০,০০০ বছর আগে মিনেওয়াঙ্খা লেক বা হ্রদের চারপাশে দীর্ঘকাল ধরে বসবাস করত৷ এলাকাটিতে খচ্চর হরিণ, ভেড়া, ভাল্লুক দেখতে পাওয়া যায়৷
মিনেওয়াঙ্খা লেক দেখে আমরা সেদিন Banf শহর থেকে দশ মিনিট দুরত্বে ক্যানমোর শহরের ওপর একটি সুসজ্জিত হোটেল স্যালোরায় রাত্রিবাস করলাম৷ হোটেলট খুবই সুন্দর৷ ক্যানমোর থেকে আমরা পরের দিন সকালে লেক লুইজ, লেক মোরেন, লেক বো এবং লেক পেকো পরিদর্শন করলাম৷ প্রত্যেকটা লেক অপূর্ব ও সুন্দর৷ এছাড়া পাহাড়ের ৮,০৪৭ ফুট উঁচুতে গন্ডোলা পরিদর্শন একট বড় আকর্ষণের৷ গন্ডোলা করে ওপরে উঠে সেখান থেকে  পাহাড়ের নীচটা দেখ যায়৷ চারিদিকে পাহাড়৷ পাহাড়ের ওপর থেকে মিনেওয়াঙ্খা লেক বা হ্রদ ছাড়াআরো ছোট ছোট লেক দেখতে পাওয়া যায়৷ ক্যানমোর থেকে লেক লুইজ পরিদর্শন করা যায়৷ এই লেকটিও অপরূপ সুন্দর এখানেও অনেকে বোটিং করে৷ দীর্ঘ লম্বা লেক৷ নীল জল চারিদিকে পাহাড়ে ঘেরা৷ প্রকৃতির এরকম সৌন্দর্য নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায়না৷
প্রকৃতি যেন তার সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য নিজেকে উজার করে দিয়েছে৷ লেক লুইজ কানাডার আলবার্টার বানফ ন্যাশানাল পার্কের মধ্যে একটি গ্রাম৷ প্রিন্সেস লুইজের নামানুসারে ডাচেস অফ আর্গিল ,এটি বো নদীর ওপর আলবার্টার রকিজে অবস্থিত৷ এটি উচ্চতায় ১৬০০ মিটার৷ লেক লুইজের কাছাকাছি লেক মোরেন অবস্থিত৷ মোরাইন লেক বানফ ন্যাশানাল পার্কের একটি তুষার এবং হিমবাহী হ্রদ৷ এটি প্রায় ১,৮৮৪ মিটার (৬.১৮১) ফুট উচ্চতায় দশ শিখর উপত্যকায় অবস্থিত৷ এছাড়া লেক বো, পেকো লেকও খুবই সুন্দর এবং আকর্ষণীয় যা কানাডার আলবার্টার বানফ ন্যাশানাল পার্কের মধ্যে পড়ে৷
আর একটি লেকহল এমেরাল্ড লেক এটি কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশে পড়ে৷ অবস্থান ইয়াহো ন্যাশানাল পার্ক ব্রিটিশ কলম্বিয়া৷ এটিকে বাংলায় পান্নাহ্রদ বলা হয়৷ কানাডা হাইওয়েকে এমেরাল্ড লেকের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে৷ অনেক বন্যপ্রাণী এই অঞ্চলে বসবাস করে এবং পার্ক আইন দ্বারা সুরক্ষিত৷ এখানে কালো ভল্লুক, পাহাড়ি ছাগল, বিঘর্ণ ভেড়া দেখতে পাওয়া যায়৷ এরকম অনেক লেক আমরা চোখের সামনে দেখতে পারলাম৷ এছাড়া পাহাড়ে ৮,০৪৭ ফুট উঁচুতে গন্ডোলা পরিদর্শন সে ও কম ভাগ্যের কথ নয়৷ আবহাওয়া খুবই সুন্দর ছিল৷ আমরা গন্ডোলা করে ওপরে উঠে রোপওয়ের মতো পাহাড়ের ওপরে উঠে পড়লাম৷ ওপর থেকে আমরা মিনেওয়াঙ্খা লেক দেখতে পেলাম৷ খুবই ছোট লাগছিল৷ শোনা যায়, ভার্নিমিয়ান ও মোরেন লেক থেকে সূর্যোদয় খুব ভাল দেখা যায়৷ নায়াগ্রা থেকে সূর্যোদয়ের দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য আমাদের হয়েছিল৷ BANF শহর খুব সুন্দর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন৷ কিছুটা ইউলোপীয় ধাঁচের৷ এখানেও যখন তখন কালো ভাল্লুক দেখা যায়৷ এখানে প্রচুর সুসজজিত হোটেল এবং রেস্টুরেন্ট আছে৷কিছু রেস্টুরেন্টে হরিণ ও অস্ট্রিচের মাংস পাওয়া যায়৷