• facebook
  • twitter
Friday, 11 April, 2025

২১৪ জন পণবন্দিকে হত্যা করল বালুচ বিদ্রোহীরা

এই ট্রেন হাইজ্যাকই প্রমাণ যে পাকিস্তান কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু বালুচিস্তানে আরও শক্তশালী হয়ে উঠেছে বালুচ স্বাধীনতা সংগ্রামীরা।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

পাক সেনার দাবি উড়িয়ে ২১৪ জন পণবন্দিকে হত্যা করা হয়েছে বলে শনিবার বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে বালোচিস্তান লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। গত মঙ্গলবার পাকিস্তানের ট্রেন অপহরণের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছিল। তুমুল লড়াই শেষে বালুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) বিদ্রোহীদের হাত থেকে পণবন্দিদের উদ্ধার করেছিল পাক সেনা। পাকিস্তান সেনার তরফে জানানো হয়েছিল, বুধবার রাতে জাফর এক্সপ্রেস অভিযান শেষ হয়েছে। সকল পণবন্দিকে উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত হয়েছেন ৩৩ জন বালুচ বিদ্রোহী। কিন্তু শনিবার বিএলএ-র বিবৃতিতে পাক সেনার সেই দাবি নস্যাৎ করে পাল্টা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে , তারা যে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল পাক সরকারকে, তা শুক্রবার শেষ হয়েছে। পাক সরকার তাদের দাবি মেনে নেয়নি। ফলে ২১৪ জন পণবন্দিকেই হত্যা করা হয়েছে। এই পণবন্দিরা মূলত পাকিস্তান সেনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন দাবি করেছে বিএলএ বিদ্রোহীরা।

পাকিস্তান সরকারকে একগুঁয়ে বলেছে বিএলএ। তাদের দাবি ছিল, বালোচিস্তান থেকে তাদের যে সদস্যদের গ্রেপ্তার করে পাকিস্তান সেনা বন্দি করে রেখেছে, তাঁদের মুক্তি দিতে হবে। পরিবর্তে পণবন্দিদেরও তারা মুক্তি দেবে। কিন্তু পাক সরকার এ বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি বলে অভিযোগ। বিএলএ-র বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘বরাবরের মতো একগুঁয়েমি এবং সেনার আগ্রাসন দেখিয়েছে পাকিস্তান সরকার। আমাদের সঙ্গে সমঝোতার সম্ভাবনা তারা এড়িয়ে গিয়েছে। বাস্তবকে অস্বীকার করেছে। এই একগুঁয়েমির ফলে ২১৪ জন পণবন্দিকে হত্যা করা হল।’ যদিও বিএলএ-র দাবি প্রসঙ্গে এখনও পাক সরকারের বক্তব্য জানা যায়নি।

গত ১১ জানুয়ারি বালুচিস্তান প্রদেশের কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ারে যাচ্ছিল যাত্রীবাহী জাফার এক্সপ্রেস। পাক সেনাকর্মী থেকে শুরু করে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই ও নিরাপত্তা বাহিনীর অনেকেই ছিলেন ওই ট্রেনে। সকাল ৯টা নাগাদ কোয়েটা থেকে ছেড়েছিল ট্রেনটি। এরপর দুপুর নাগাদ প্রায় ৫০০ যাত্রী সহ এই ট্রেনের দখল নিয়েছিল বালুচ বিদ্রোহীরা। তাদের দাবি ছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। তা না হলে পণবন্দিদের খুন করা হবে। বুধবার রাতে পাক সেনা জানিয়েছিল, তাদের অভিযান শেষ। সব বিদ্রোহীরা নিহত হয়েছেন। বিদ্রোহীদের হাতে ২৮ জন নিরাপত্তা আধিকারিকের মৃত্যুর কথাও স্বীকার করেছিল পাক সেনা

কিন্তু পাক সেনার দাবি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই উড়িয়ে দিয়েছিল বিএলএ। তাদের বক্তব্য ছিল, জাফর এক্সপ্রেস অভিযানে পাক সেনা চূড়ান্ত ব্যর্থ। নিজেদের সম্মান রক্ষার্থে তাই তারা বাস্তবকে অস্বীকার করছে এবং ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। ১২ জন বালুচবিদ্রোহী পাক সেনার গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে বিএলএ-র দাবি।

পাক সরকারকে তোপ দেগে বৃহস্পতিবার বালুচিস্তানের মানবাধিকার কাউন্সিলের তথ্য সচিব কুরশিদ আহমেদ জানিয়েছিলেন, ‘এই ট্রেন হাইজ্যাকই প্রমাণ যে পাকিস্তান কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু বালুচিস্তানে আরও শক্তশালী হয়ে উঠেছে বালুচ স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। ওই উত্তেজনার পরিস্থিতিতেও সংগ্রামীরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেননি। তাঁরা মহিলা ও বয়স্ক মানুষদের ও অন্যান্য পরিবারকে কোয়েটায় ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। বালুচিস্তানের বহু মানুষকে গুম করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মুক্তির দাবিতেই বহু সেনা আধিকারিককে পণবন্দি বানিয়েছিলেন সংগ্রামীরা। মূলত বালুচ লিবারেশন আর্মির সংগ্রামীরা বালোচিস্তানের পাক-চিন প্রকল্পগুলোয় হামলা চালায়। কিন্তু তাঁরা নিজেদের মাতৃভূমিকে রক্ষা করার জন্য এই কাজ করে। এই পরিস্থিতিতে বালুচিস্তানের স্বাধীনতার জন্য ভারত ও পশ্চিমী শক্তিগুলোর সহযোগিতা করা উচিত।’

প্রসঙ্গত, এই জাফার এক্সপ্রেসই প্রথম নয়, অতীতেও বহুবার বড়সড় হামলা চালিয়ে পাকিস্তানকে রক্তাক্ত করেছে এই বিদ্রোহীরা। পাকিস্তানের সব থেকে বড় প্রদেশ বালুচিস্তান। এখানেই জন্ম বালুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ)। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের পর থেকেই আলাদা হওয়ার দাবি জানিয়েছে তারা। ২০০০ সালের শুরুর দিকে এই প্রদেশকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করার দাবিতে পাক সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিল বিএলএ। তারপর থেকে পাকিস্তানি শাসনের শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে বিএলএ।