ফের হত্যার চেষ্টা ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে । শনিবার উত্তর ইজরায়েলের শহর সিজারিয়াতে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি লক্ষ্য় করে বোমা ছোঁড়া হয়। পর পর ২টি বোমা তাঁর বাড়ির বাগানে এসে পড়ে। সংবাদ সংস্থা সূত্রে খবর, সেই সময় নেতানিয়াহু বা তাঁর পরিবার বাড়িতে ছিলেন না। কোনও রকম ক্ষয়ক্ষতির খবরও পাওয়া যায়নি। যদিও এই ঘটনার পর ইজরায়েল সরকার কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়। ঘটনাটি সমস্ত ‘রেড লাইন’ অতিক্রম করেছে বলে উল্লেখ করেন ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাটজ । তিনি এক্স-এ পোস্ট করেন, ‘ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী, যিনি ইরান এবং তার সহযোগী দেশগুলির হুমকির সম্মুখীন, তারা তাকে হত্যার চেষ্টা করছে। তবে বাড়িতেও তিনি একই রকম হুমকির মুখে পড়বেন তা হতে পারে না।’ এই ঘটনার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে সমস্ত দপ্তরকে।
দেশের নিরাপত্তা ও বিচার বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাটজ। ‘শিন বেট(ইজরায়েলি নিরাপত্তা সংস্থা) এবং ইজরায়েল পুলিশ এবং সমস্ত আইন প্রয়োগকারী এবং বিচার বিভাগীয় সংস্থাগুলিকে অবিলম্বে সমস্ত শক্তি দিয়ে এই গুরুতর ঘটনা বন্ধ করতে এবং এই পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে’ , তিনি বলেন ।
ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজগ এক্স-এ একটি পোস্টে এই ঘটনার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেন, ‘ঘটনার তদন্ত চলছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে উস্কানি সব সীমানা অতিক্রম করছে। আজ রাতে তাঁর বাড়িতে একটি ফ্ল্যাশ বোমা নিক্ষেপ করা হয় এবং আরেকটি লাল রেখা অতিক্রম করে।’ এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্স-এ লেখেন নিরাপত্তা বিষয়ক মন্ত্রী ইতামার বেন-গভিরও।
এদিকে, হিজবুল্লা গোষ্ঠী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। এই ঘটনাকে তারা লেবাননে ইজরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের প্রতিক্রিয়া হিসাবে বর্ণনা করেছে। গোষ্ঠীর একজন মুখপাত্র সতর্ক করে জানিয়েছেন যে আগামীদিনে এই সংঘাতের সম্ভাবনা আরও বাড়তে পারে। এর জবাবে, ইজরায়েল সরকার এই হামলাকে ‘অত্যন্ত গুরুতর ভুল’ বলে অভিহিত করেছে এবং এর পাল্টা জবাব দেওয়ার হুমকি দিয়েছে।
এর আগে অক্টোবরে এক বার নেতানিয়াহুকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। সেবারও লক্ষ্য ছিল তাঁর বাসভবন। আত্মঘাতী ড্রোন তাঁর বাড়ির দিকে উড়ে গিয়ে বিস্ফোরণ ঘটায়। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। নেতানিয়াহু সে দিনও বাড়িতে ছিলেন না। ফলে রক্ষা পান।
এদিকে উত্তর লেবাননে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইজরায়েলি সেনারা হিজবুল্লা জঙ্গিদের সঙ্গে গুলি বিনিময় চালিয়ে যাচ্ছে। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রবিবার ঘোষণা করেছে যে লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় ইজরায়েলি বিমান হানার ফলে গত ২৪ ঘন্টায় ৭ জন নিহত হয়েছেন এবং ৬৫ জন আহত হয়েছেন। প্যালেস্টাইনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ চালাচ্ছে ইজরায়েল। ক্রমে সেই যুদ্ধের ব্যাপ্তি ছড়িয়ে পড়েছে। যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে ইরান-সহ পশ্চিম এশিয়ার অন্যান্য দেশ। লেবাননের ন্যাশনাল নিউজ এজেন্সি সূত্রে খবর, হামলার শুরু থেকে শনিবার পর্যন্ত মোট ৩ হাজার ৪৫২ জন নিহত এবং ১৪ হাজার ৬৬৪ জন আহত হয়েছেন। গত ২৪ ঘন্টায়, লেবাননের বিভিন্ন অঞ্চলে ১৪৫টি বিমান হামলা এবং গোলাগুলির আক্রমণ নথিবদ্ধ করা হয়েছে । এই সমস্ত হামলার ঘটনাকে মিলে মোট হামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ২২২ ৷