একটি রায় নিয়ে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটল পাকিস্তানে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির মাথার দাম ঘোষণা করা হল ১ কোটি পাকিস্তানি মুদ্রা। শুধু মাথার দাম ধার্য্যই নয়, ক্ষুব্ধ জনতা চড়াও হল পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টেও। অভিযোগ, প্রধান বিচারপতি কাজি ফইজ ইশা ইসলাম ধর্মের ‘অবমাননা’ করেছেন। ওই ‘অপরাধে’ই প্রধান বিচারপতি ইশার মৃত্যুর দাবিও ওঠে।
ইসলামাবাদে ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার। ক্ষুব্ধ জনতার মিছিলের ভিডিও প্রকাশ্যে আসে বুধবার। সমাজমাধ্যম মারফত ছড়িয়ে পড়ে ভিডিওগুলি।
পাকিস্তানের সংবাদ মাধ্যম এবং দেশীয় সংবাদ মাধ্যমে খবর, প্রধান বিচারপতি ইশার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের কট্টরপন্থীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, সম্প্রতি তিনি ‘ধর্মীয় অবমাননা’য় অভিযুক্ত এক ব্যক্তিকে বেকসুর খালাস করে দেন। প্রধান বিচারপতি ইশা বলেছিলেন, অ-মুসলিমেরাও পাকিস্তানে স্বাধীন ভাবে নিজস্ব ধর্মাচরণ করতে পারবেন। কট্টরপন্থীদের দাবি, ওই রায় দিয়ে আদতে ধর্মীয় অবমাননা করেছেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি।
প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভের আঁচ এতটাই তীব্র ছিল যে , হঠাৎ দেখলে মনে হতে পারে আদালতকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে পথে নেমেছে পাকিস্তানের জনতা। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে ক্ষোভ চূড়ান্ত আকার নেয়। পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ শহরের একেবারে মধ্যস্থলে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। তার আশপাশের বেশ খানিকটা জায়গা ফাঁকা। এই ফাঁকা চত্বরের একদিক এগিয়েছে বড় রাস্তায় । হঠাৎই দেখা যায় সেই রাস্তা পেরিয়ে হুড়মুড়িয়ে ছুটে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। লক্ষ্য সুপ্রিম কোর্টের মূল ভবন। অনেকের হাতে পতাকা, তাঁরা দৌড়ে যাচ্ছেন। ভিড়ের বাকি অংশ সংঘবদ্ধভাবে সুপ্রিম কোর্টের মূল ফটকের দিকে এগিয়ে যায়। সেখানে ছিল পুলিশের তৈরী কাঁটাতারের প্রতিরোধ ব্যবস্থা। সেই প্রতিরোধ ভেঙেই পতাকা হাতে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের আহমদিয়া সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি মুবারক আহমেদ সানিকে মুক্তি দিয়েছিল পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট। ২০২৩ সালের ৭ জানুয়ারি মুবারককে গ্রেফতার করা হয় পাকিস্তানের একটি কলেজে ধর্মগ্রন্থ ‘ফকির-এ-সাগির’ প্রচারের জন্য। ‘ফকির-এ-সাগির’ আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ধর্মগ্রন্থ। প্রচারের অপরাধে পাকিস্তানের কোরান আইনে গ্রেফতার করা হয় মুবারককে। গ্রেফতারির ১ বছর ১ মাস পর তিনি মুক্ত হন। আদালতকে মুবারক বলেছিলেন, যে ঘটনায় তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সেটি ঘটে ২০১৯ সালে। অন্যদিকে যে আইনে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়, সেটি সেই সময় ছিল না। এই যুক্তিতে তাঁকে বেকসুর খালাস করা হয়।
এর পাশাপাশি আদালত পাকিস্তানে অ-মুসলিমদের নিজ নিজ ধর্মীয় আচরণের স্বাধীনতার কথাও বলে। প্রধান বিচারপতির সেই মন্তব্য এবং রায়ের বিরুদ্ধেই শুরু হয় কট্টরপন্থী সংগঠন তেহরিক-এ লব্বায়েক পাকিস্তানের প্রতিবাদ বিক্ষোভ। পরে সেই বিক্ষোভে যোগ দেয় অন্য কট্টরপন্থী সংগঠনগুলিও। সোমবার সেই বিক্ষোভই বড় আকার নেয়। সূত্রের খবর, আন্দোলনকারীরা ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টকে সিদ্ধান্ত বদলানোর জন্য সময় দিয়েছে। এর পরে পরিস্থিতি বুঝে প্রতিবাদ- বিক্ষোভ আরও চড়া হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।