রোম, ৪ এপ্রিল – ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই
সময়টা ৭৯ খ্রিস্টাব্দ। মাউন্ট ভিসুভিয়াসের অগ্ন্যুৎপাতে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায় হারকিউলেনিয়াম ও তার পার্শ্ববর্তী পম্পেই-সহ রোমান সাম্রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা। ১৯ শতকের শুরুর সময় থেকে সেখানে দফায় দফায় খননকাজ হয়েছে।জমে থাকে ছাই ও লাভার আস্তরণ সরিয়ে ধীরে ধীরে প্রকাশ্যে আসে পম্পেই ও হারকিউলেনিয়ামের অনেকটা অংশ। জানা গেছে সেই সময়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ক নানা তথ্য।
হারকিউলেনিয়ামের ‘ভিলা অব প্যাপিরাই’ নামক এক গ্রামে প্যাপিরাসের গ্রন্থাগার ছিল। ১৭৫০ সালে সেটি আবিষ্কার করেছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। কথিত আছে, রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারের শ্বশুরমশাই সেই প্যাপিরাস গ্রন্থাগারের মালিক ছিলেন। এই গ্রন্থাগার থেকে ১৮০০-রও বেশি প্যাপিরাস-পুঁথি উদ্ধার করা সম্ভব হয়। গরম ছাইয়ের তলায় চাপা পড়ে থাকার কারণে বেশির ভাগ প্যাপিরাস এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে সেগুলির পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেছিলেন প্রত্নতত্ত্ববিদেরা। কিন্তু অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এখন সেই সব প্যাপিরাসেরও পাঠোদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে।
পিসা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্রানৎজিয়ানো রানোচিয়া নেপলসের জাতীয় গ্রন্থাগারে সেই ভিলা থেকে পাওয়া এক খণ্ড প্যাপিরাস নিয়ে সম্প্রতি বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। তিনি জানান, এই প্যাপিরাসে লিপিবদ্ধ রয়েছে খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকের গ্রিক দার্শনিক প্লেটোর জীবনকাহিনি। বিশেষ করে তাঁর জীবনের শেষ সন্ধের বর্ণনা রয়েছে। অধ্যাপক রানোচিয়া জানান, সেই সন্ধ্যায় বীণা শুনছিলেন এই বিখ্যাত দার্শনিক। তাঁকে বাঁশি বাজিয়ে শোনাচ্ছিলেন এক ক্রীতদাসী। জ্বরে আছ্বন্ন , অশীতিপর প্লেটো মুগ্ধ হয়ে বাঁশি শুনছিলেন। কিন্তু একবার ‘ছন্দপতন হওয়ায় মেয়েটিকে তিনি ভর্ৎসনা করেন – এমনই বর্ণনার উল্লেখ রয়েছে প্যাপিরাসে।
প্যাপিরাসে বিস্তারিত ভাবে বর্ণনা করা হয়েছে প্লেটোর সমাধিস্থলের কথাও। এত দিন অনুমান করা হত যে, প্লেটোর দ্বারা স্থাপিত বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় ‘অ্যাকাডেমি অব আথেন্স’-এর বাগানে শায়িত রয়েছে তাঁর দেহ। কিন্তু হারকিউলেনিয়াম থেকে পাওয়া প্যাপিরাসে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে সেখানেই প্লেটোকে সমাহিত করা হয়েছিল।
অধ্যাপক রানোচিয়া জানিয়েছেন, প্যাপিরাস পাঠোদ্ধারের কাজ সবে শুরু করেছেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা । তাঁদের আশা, ভবিষ্যতে আরও অনেক অজানা তথ্য উদ্ধার করা সম্ভব হবে। লেখা হবে নতুন ইতিহাস। ছাইয়ের গাদার নিচে চাপা পড়ে থাকা অমূল্য মণি-মাণিক্যে সমৃদ্ধ হবে ইতিহাসনির্ভর গ্রন্থাবলী।