সোমবার দিল্লির দূষণ ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছল। অত্যন্ত খারাপ আবহাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে ব্যাহত হয় উত্তর ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সোমবার দিল্লিতে খারাপ আবহাওয়ার কারণে বিঘ্নিত হয় বিমান পরিষেবাও। দিল্লির আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৫টি ফ্লাইটের যাত্রাপথ পরিবর্তন করা হয়। অন্যদিকে আপাতত দশম ও দ্বাদশ শ্রেণি ছাড়া বাকি সমস্ত ক্লাসের পড়ুয়াদের অনলাইল ক্লাস হবে বলে ঘোষণা করেছে আপ সরকার। এদিকে দিল্লির বায়ুদূষণ মাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার পরও গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন লাগু করতে দেরি করায় আপ সরকার এবং কেন্দ্রীয় কমিশনকে দায়ী করছে দেশের শীর্ষ আদালত।
সোমবার দিল্লির দূষণ নিয়ে একটি মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধির চতুর্থ স্তরের নিষেধাজ্ঞা চালু থাকবে বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকাল ১০টার সময় সুইস এয়ার টেকনোলজির কোম্পানি আইকিউএয়ারের পরিমাপক অনুযায়ী দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার দূষণ ‘বিপজ্জনক’ আকার নেয়। দেশীয় যন্ত্রে বায়ুদূষণের পরিমাণ ৪০০ থেকে ৫০০র মধ্যে থাকলেও সুইস এয়ার টেকনোলজি কোম্পানির আইকিউএয়ারের পরিমাপে দিল্লির দূষণ ১৩০০ থেকে ১৬০০য় পৌঁছে যায় বলে এক সংবাদ মাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে।
সোমবার বিচারপতি অভয় এস ওকা এবং অগাস্টিন জর্জ মসিহা-র বেঞ্চ দিল্লি সরকারকে বলে, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা জানাতে। বেঞ্চ বলে, ‘আমরা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই যে, আদালতের অনুমতি ছাড়া কোনওভাবেই দূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধির চতুর্থ স্তরের নিষেধাজ্ঞা যেন কমানো না হয়। যদি বাতাসে দূষণের পরিমাণ ৪০০-রও কম হয়, তবুও যেন চতুর্থ স্তরের নিরাপত্তা মেনে চলা হয়। এটাই আদালতের নির্দেশ।’ কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্টের কাছে আদালত জানতে চেয়েছে, শহরে গ্র্যাপ বিধি কবে, কখন থেকে লাগু করা হয়েছে। জবাবে কমিশন জানায়, দূষণের সূচক ৪০০ ছুঁলেই গ্র্যাপ বিধি লাগু করার নিয়ম এবং তাই করা হয়েছে। জবাবে আদালত কমিশনকে ভর্ৎসনার সুরে বলে, দেরিতে বিধি চালু করা গাফিলতি হয়েছে। ৩০০ সূচক পেরনোর পর আপনারা বিধি চালু করে দেরি করেছেন। কেন তিনদিন দেরি করা হল তা জানতে চায় বেঞ্চ।
গত এক সপ্তাহ যাবৎ দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় দূষণ ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছে যায়। তবে সোমবার আগের সব সূচককে ছাড়িয়ে বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছয় দূষণের মাত্রা। দূষণ রোধ করতে আগেই দিল্লিতে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান বা গ্র্যাপ-এর তৃতীয় স্তরের সাবধানতা মেনে চলা হচ্ছিল। এদিন পরিস্থিতি বিবেচনা করে চতুর্থ স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা লাগু করে প্রশাসন।
সোমবার সকালে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় দৃশ্যমানতা অত্যন্ত ক্ষীণ হয়ে যায়। দিল্লির ভোরের আকাশ ছিল ঘন কুয়াশায় ঢাকা। সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্ধকারাছন্ন ছিল চারিদিক। বিশেষ করে মুন্ডকা, দ্বারকা সেক্টর ৮ এবং রোহিনীতে বায়ুদূষণ অত্যন্ত খারাপ জায়গায় পৌঁছয়। এই তিন জায়গায় দূষণের সূচক ছিল যথাক্রমে ১৫৯১, ১৪৯৭ ও ১৪২৭। তবে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের জাতীয় বায়ুদূষণের সূচক অনুযায়ী দিল্লিতে ওই একই সময়ে দূষণের মাত্রা ছিল ৪৮৫।
দৃশ্যমানতা কমে যাওয়ায় ব্যাহত হয় ট্রেন ও বিমান চলাচল। দিল্লি ও আনন্দ বিহারমুখী ২৮টি ট্রেন ২ থেকে ৯ ঘণ্টা দেরিতে চলে।এছাড়াও রাজধানীতে ট্রাকের প্রবেশের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বন্ধ রাখা হয়েছে যে কোনও ধরনের নির্মাণ কাজ। দিল্লির কোনও বিএস ফোর গাড়ি বা পুরনো ডিজেল গাড়ি চালানো যাবে না। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র জরুরি কাজের সঙ্গে যুক্ত গাড়িগুলিকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক অফিসকে ৫০ শতাংশ কর্মচারী নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাকি কর্মচারীদের ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে বলা হয়েছে।
দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিচালনা করে যেখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ৪০০ বিমান ওঠানামা করে। দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড উড়ান সংক্রান্ত সর্বশেষ তথ্যের জন্য সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইনসের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছে।