মমতার উপস্থিতিতে গোয়ায় যোগদানে চমক, তৃণমূলের নাফিসা-লিয়েন্ডার-মৃণালিনী

নাফিসা-লিয়েন্ডার-মৃণালিনী এবং তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ছবিঃএসএনএস)

তৃণমূল সুপ্রিমোর গোয়া সফরের দ্বিতীয় দিনেই ছিল বড় চমক। গোয়ার মানুষের আস্থা জিততে স্থানীয় ও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের দলে টানার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। জল্পনা ছিল, এই সফরে অনেক তারকাই যোগ দেবেন তৃণমূল কংগ্রেসে সেইমতো শুক্রবার অভিনেত্রী-সমাজসেবী নাফিসা আলি, টেনিস তারকা লিয়েন্ডার পেজ এবং পরিবেশপ্রেমী মৃণালিনী দেশপ্রভু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ডেরেক ও ব্রায়েনের উপস্থিতিতে তৃণমুলে যোগ দেন। তিন জনের হাতেই শুক্রবার জোড়া ফুলের পতাকা তুলে দেওয়া হল।

অলিম্পিক্স সিঙ্গলসে ব্রোঞ্জজয়ী লিয়েন্ডার ভারতের অন্যতম সেরা টেনিস তারকা ডাবলসে আটটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম এবং মিক্সড ডাব্লসে দশটি গ্র্যান্ডস্ল্যাম জেতার কৃতিত্ব রয়েছে তাঁর। ভারতের খেলাধুলোয় সর্বোচ্চ সম্মান খেলরত্ন পেয়েছেন তিনি। পদ্মশ্রী পদ্মভূষণ, অর্জুম পুরস্কারেও সম্মানিত হয়েছেন।

তবে তারকা খেলোয়াড় ছাড়াও লিয়েন্ডারের বঙ্গযোগ তৃণমুলে যোগদানের একটি বড় কারণ। লিয়েন্ডার কলকাতায় জনে মছেন। তাঁর মা জেনিফার পেজ বাংলার কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রপৌত্রী। বাবা ভেস পেজ অবশ্য জন্মসূত্রে গোয়ান। তবে লিয়েভার কলকাতাতেও বেশি থেকেছেন।


সেই সুত্রে কলকাতার লা মার্টিনিয়রেও তার পড়াশুনো সেই হিসেবে বাংলা এবং গোয়া দুই রাজ্যেরই প্রতিভূ বলা যায় লিয়েন্ডারকে। বাংলার তৃণমুলের গোয়ার রাজনৈতিক ভিতস্থাপনের উপযুক্ত মুখও বলা যায় লিয়েভারকে। তৃণমূলে যোগ দিয়ে লিয়েন্ডার বলেন, যখন তিনি খেলা শুরু করেছিলেন, সেই সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন কেন্দ্রের ক্রীড়ামন্ত্রী।

তিনি খেলোয়াড়দের উৎসাহ দিতেন। লিয়েন্ডার এদিন বলেন, আমার বিশ্বাস ভারতকে নতুন দিশা দেখাতে পারবেন দিদি অন্যদিকে নাফিসা আলিরও এই শহরের সঙ্গে যোগ রয়েছে। লা মার্টিনিয়রেরও ছাত্রী ছিলেন তিনি। জাতীয় স্তরের সাঁতারু তথ্য প্রাক্তন ভারত সুন্দরী ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটে দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে হেরেছিলেন।

প্রথম ইউপিএ সরকারের আমলে চিলড্রেন ফিল্ম সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার চেয়ারপার্সনও নিযুক্ত হল। ২০০৯ সালে দল বদল করে উত্তরপ্রদেশের লখনউ কেন্দ্রে সমাজবাদী প্রার্থীর হয়েছিলেন। যদিও জিততে পারেননি। শুক্রবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরেই তৃণমূলে যোগ দিলেন।

যোগ দেওয়ার পরে নাফিসা বলেন, আমি বরাবরই কংগ্রেসের ভাবাদর্শে বিশ্বাসী। কিন্তু আজ দেশ জাতি যখন বিজেপির বিভেদকামী রাজনীতির শিকার, তখন আমার প্রশ্ন, নেহরু-ইন্দিরা জমানার কংগ্রেস নাকি মমতার তৃণমূল কংগ্রেস কে বিজেপির বিরুদ্ধে ঠিকমতো লড়তে পারবে?

নাফিসা এদিন তৃণমূলের বাংলা জয় প্রসঙ্গে বলেন, মমতা একাই বৃঘিনীর মতো লড়ে সাফল্য ছিনিয়ে এনেছেন। তৃণমুলে যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত। নাফিসার মতে কংগ্রেস ক্ষয়িষ্ণুক্তি, মমতার তৃণমূলই হল আসল কংগ্রেস। গোয়ায় তৃণমূল ভালো ফল করবে হওয়ার জন্য গোয়ায় আসিনি।

এই ছোট্ট সুন্দর রাজ্যের উন্নয়ন, মানুষের কাজ করতে গোয়ায় এসেছি। এই রাজ্যে সব আছে। কিন্তু দেখার লোক নেই আগামী দিনে শক্তিশালী গোয়া দেখতে চাই। গোয়া নিজের পায়ে দাঁড়াবে আমরা সব সাজিয়ে দেব। এই দিন কংগ্রেসকেও আক্রমণ করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, গতবার কংগ্রেস এই রাজ্যে একক শক্তিশালী দল হয়েছিল।

কিন্তু সময়োচিত সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় তারা। নিজেদের বিধায়ককেই ধরে রাখতে পারেনি ওরা সরকার গঠনে বিজেপিকে পরোক্ষে মদত জুগিয়েছে এইভাবে একদিকে বিজেপি এবং অন্যদিকে কংগ্রেসকে নিশানা করে শুক্রবার আপসহীন লড়াইয়ের প্রতিশ্রুতি দিলেন মমতা।

বাংলা মডেলকে হাতিয়ার করে গোয়াবাসীর মধ্যে উন্নয়নের স্বপ্ন বুনে দিতে চাইলেন। কোন মডেলে সৈকত রাজ্যের উন্নয়ন হবে, তারও পথ বাতলে দিলেন। বললেন, বাংলায় গত দশ বছরে উন্নয়নের অনেক কাজ হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে, দারিদ্র্য কমেছে, নারীদের ক্ষমতায়ণ হয়েছে, একাধিক সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পে বহু মানুষ উপকৃত হয়েছে। তৃণমূল জিতলে গোয়াতেও এসব হবে।

শুক্রবার গোয়ায় একাধিক ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পুজো দেন মমতা। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জনসংযোগ করেন। বিকেলে ছিল বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মেলন। শুক্রবার গোয়ায় ছিল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম রাজনৈতিক সভা। সেখানেই তৃণমুলের সম্প্রীতি ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানকে তুলে ধরেন মমতা।

টিএমসি’র নতুন নামকরণ করে বলেন, টিএমসি এখন আর শুধু তৃণমূল কংগ্রেস নয়। টিএমসি হল টেম্পল-মস্ক-চার্চ। অর্থাৎ মন্দির, মসজিদ, গির্জা। ভারতের সম্প্রীতি ও ধর্মীয় ঐক্যের প্রতিভূ।

তৃণমূল নেত্রী এদিন বলেন, আমি দুর্গাপুজো, গণেশ চতুর্থী করি। আবার রমজানেও থাকি। তেমনইআবার পঁচিশে ডিসেম্বর চার্চে গিয়েও প্রার্থনা করি তৃণমূল কংগ্রেস বিভেদের রাজনীতি করে না। আর যারা করে তাদের সঙ্গে সমঝোতাও করে না। মমতা এদিন বলেন, আমি বহিরাগত নই।

এরপর কোঙ্কনি ভাষায় বলেন আমি আপনাদের বোনের মতো। আধি বাংলার মেয়ে ভারতের মেয়ে। ভারত যদি আমার মাতৃভূমি হয়ে থাকে, তবে বাংলাও আমার মাতৃভূমি, গোয়াও আমার মাতৃভূমি। শুক্রবার বারবার বাংলায় সঙ্গে গোয়ার তুলনা টেনেছেন মমতা।

বিশেষ করে, মাছ, ফুটবল আর সংস্কৃতি চর্চায় যে বংলার সঙ্গে গোয়ার প্রচুর মিল রয়েছে সেকথা তুলে ধরেছেন। গোয়ার বাসিন্দাদের উদ্দেশে বলেছেন, অনেককেই তো সুযোগ দিয়েছেন। একবার আমাদেরও সুযোগ দিয়ে দেখুন।

কোঙ্কনি ভাষায় মমতা বলেছেন ‘গোয়িঞ্চি নভিসকাল’। যার অর্থ গোয়ায় নতুন ভোর আসবে। মমতা এই সৈকত রাজ্য সফরে মানুষের মন জিতে নেওয়া উদ্বেগে ফেলেছে কংগ্রেসকে। আজ শনিবার মমতা রাজ্যে ফিরছেন। এরপরই গোয়া যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাহুল গান্ধী।