জয়পুর, ২৫ নভেম্বর – রাজস্থানে এক দফায় বিধানসভা ভোট সম্পন্ন হল শনিবার। প্রায় ৫২.৫ মিলিয়ন ভোটার তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করেছেন বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর। রাজস্থানের ২০০টি আসনের মধ্যে ১৯৯টি আসনে সকাল ৭টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। চলে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। শ্রীগঙ্গানগর জেলার করণপুর কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী গুরমিত সিংহ কুনারের মৃত্যুর কারণে সেই কেন্দ্রে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়েছে। মরুরাজ্যে এবার মুখোমুখি লড়াই বিজেপি এবং কংগ্রেসের। দুই দলই নিজেদের জয় নিয়ে আত্মবিশ্বাসী। তবে শেষ হাসি কে হাসে তা জানা যাবে আগামী ৩ ডিসেম্বর।
সর্দারপুরা বিধানসভা কেন্দ্রের একটি বুথে ভোট দেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট । তিনি নিজেও সর্দারপুরা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী। রাজস্থানের কোটায় ভোট দেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। ভোট দিয়ে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘গণতন্ত্রের এই উৎসবে সকলে সক্রিয় ভাবে অংশগ্রহণ করছে। মতামত প্রকাশের জন্য প্রত্যেক নাগরিকের ভোট দেওয়া উচিত।’’ শনিবার সকালে জয়পুরের একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন জয়পুর গ্রামীণ কেন্দ্রের সাংসদ তথা জোটওয়ারা বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী রাজ্যবর্ধন রাঠৌর।জয়পুরের সিভিল লাইন এলাকায় একটি বুথে গিয়ে ভোট দেন কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী সচিন পাইলট। পাইলট টঙ্ক বিধানসভা কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী। ভোটগ্রহণ চলাকালীন সচিন পাইলট বলেন, ‘জনতা বুঝদার। রাজ্য এবং নিজেদের উন্নতির স্বার্থে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা।’ পাইলটের সংযোজন, ‘আমরা যখন এ রাজ্যে বিরোধী আসনে ছিলাম, ২০১৮ সালে আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু, এখন আমরাই ক্ষমতাসীন। পুরো শক্তি নিয়ে ক্ষমতা পুনর্দখলের লড়াই করছি । আমি আশাবাদী আমরাই আবার সরকার গঠন করব।’ রাজস্থানে কি অশোক গেহলেটই নির্বাচনী মুখ? পার্টির অধিকাংশ ব্যানার এবং পোস্টারে তাঁর মুখেরই প্রাধান্য বেশি । এ প্রশ্নের উত্তরে সচিন পাইলট বলেন, ‘রাজস্থানে আমরা সবাই মিলে ভোটে লড়ি। জনতা জানে কে কাজ করেছে। কার ছবি বড়, কোন পোস্টারে কার মুখ দেখা যাচ্ছে, তাতে কিছু যায় আসে না। নির্বাচনের পর হাইকম্যান্ড চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে জানাবে কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন।’ তিনি এদিন আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তো হিমাচল এবং কর্নাটকেও বিজেপির প্রধান মুখ ছিলেন। কিন্তু, সাধারণ মানুষ সবটাই বোঝেন।’
ঝালাওয়ারের একটি ভোটকেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন রাজস্থানের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং ঝালারাপাটন বিধানসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী বসুন্ধরা রাজে। ভোট দিতে যাওয়ার আগে মন্দিরে পুজো দেন তিনি। অন্য দিকে, রাজস্থানের বিকানের পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা অর্জুন রাম মেঘওয়াল। ভোট দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রাজস্থানে বিজেপি একটি শক্তিশালী সরকার গঠন করবে। আমরা এখানে গণতন্ত্রের শক্তি দেখতে পাচ্ছি। বিপুল সংখ্যক মহিলা ভোট দিতে এসেছেন।’’
২০০ আসনের রাজস্থান বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘ ম্যাজিক সংখ্যা’ ১০১। কোন কোন জনমত সমীক্ষা বলছে, পাঁচ বছর অন্তত সরকার বদলের প্রথা মেনে এ বার কংগ্রেসকে হারিয়ে জয়পুরের কুর্সি দখল করতে পারে বিজেপি। জনমত সমীক্ষার পূর্বাভাস বিজেপি ১১৪ থেকে ১২৪টি আসনে জিতে সরকার গড়তে পারে। কংগ্রেস পেতে পারে ৬৭ থেকে ৭৭টি আসন। নির্দল এবং অন্য দলগুলির ঝুলিতে যেতে পারে ৫ থেকে ১৩টি আসন। যদিও মরুরাজ্যে বরাবরই প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসনে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হয় কম ভোটের ব্যবধানে। তেমন হলে ত্রিশঙ্কু হওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সে ক্ষেত্রে ‘নির্ণায়ক’ হয়ে উঠতে পারে নির্দল এবং ছোট দলগুলির ভূমিকা।
এদিকে রাজস্থানের পালি জেলার সুমেরপুর এলাকায় ভোট চলাকালীন হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হল এক পোলিং এজেন্টের। ভোটগ্রহণ পর্ব চলাকালীন বুথের মধ্যেই আচমকা লুটিয়ে পড়েন তিনি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাজস্থানে এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই কংগ্রেস এবং বিজেপির । এ ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে বিএসপি, আপ। রাজস্থানে দেখা গিয়েছে, প্রতি পাঁচ অন্তর ক্ষমতাসীন দলকে সরে যেতে হয়েছে জনতার রায়ে। সেই দিক ভেবে কংগ্রেস সবরকম প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। অন্যদিকে পাল্টা লড়াই করছে বিজেপিও। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট তিনবার মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেছেন।
২০২৪ সালের ১৪ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে রাজস্থান সরকারের মেয়াদ। ২০১৮ সালের বিধানসভা ভোটে রাজস্থানের ২০০টি আসনের মধ্যে ১০০টিতে জয়ী হয় কংগ্রেস। জোটসঙ্গী আরএলডি পায় একটি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ৭৩টি আসন। তা ছাড়া, বিএসপি ৬, আরএলপি ৩, বিটিপি ২, সিপিএম ২ এবং নির্দল প্রার্থীরা ১৩টি কেন্দ্রে জয়ী হন।