শীতলাখেত ও রানিখেতের ডায়েরি

বিশেষ কাজে দিল্লি যাওয়ার সুযোগ পেতেই, শীতলাখেতে কয়েকটা দিন কাটাবার সব ব্যবস্থা পাকা করে ফেললাম। নিরিবিলিতে দুটো দিন পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এবং প্রকৃতির কোলে সময় কাটাবার সুযোগ হাতছাড়া করতে কে-ই বা চায়।

উত্তরাখণ্ড রাজ্যের আলমোড়া জেলায় অবস্থিত শীতলাখেত, আমার পছন্দের একটি ডেস্টিনেশন। সমুদ্রতল থেকে এর উচ্চতা আনুমানিক ১৯০০ মিটার। এই সফরে আমরা প্রথমে দুটো দিন কাটিয়েছিলাম নয়ালাপের বিলাসবহুল ক্যাম্পিং সাইটে। প্ল্যান ছিল শীতলাখেত ট্রেক করার। সেই মতো আমরা প্রথমে রাউতেলা গ্রামের পাশ দিয়ে হাঁটা শুরু করি, তারপর একটি সুন্দর জঙ্গলের পথ দিয়ে আমাদের ট্রেক শুরু হয় শীতলাখেত পর্যন্ত।

কুমাযুন হিমালয়ের কোলে অবস্থিত এই ছোট্ট গ্রামটি থেকে, চোখে পড়ে চৌখাম্বা, নন্দাদেবী, ত্রিশূল আর পঞ্চচুল্লির উদ্ধত শিখরগুলি। চারপাশে ফলের বাগান। আধুনিক ব্যস্ত জীবন থেকে দূরে শুদ্ধ বাতাস বুকে ভরে নিতে পর্যটকরা আসেন এই জায়গাটিতে।


শীতলাখেত থেকে ৪ কিলোমিটারের মধ্যে দেখে নেওয়া যেতে পারে সাইয়াহি দেবীর মন্দির, গোলু দেবতার মন্দির, মহাদেব মন্দির, কাটারমল সূর্য মন্দির। শীতলাখেতে আসার সবথেকে ভালো সময় হল ফেব্রুয়ারি থেকে জুন আবার সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর। যারা বরফ দেখতে চান তারা ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে ঘুরে আসতে পারেন। হাতে সময় থাকলে একই সফরে ঘুরে নিন চৌবাটিয়া টি গার্ডেন, গোভিন্দবল্লভ পন্থ মিউজিয়াম, গল্ফ কোর্স ইত্যাদি।

চলেছি পাইন, ওক, দেওদার, রোডোডেনড্রন গাছের মিশ্র বনের মধ্যে দিয়ে। পথটি স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা আছে। শীতলাখেতে রয়েছে উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতে সমৃদ্ধ বনাঞ্চল এবং গ্রামের চারপাশের পাহাড় ও জঙ্গলে ১০০ টিরও বেশি প্রজাতির পাখি রয়েছে বলে জানা যায়। সারাটা পথ আজ ছিল কুয়াশায় ঢাকা। কিন্তু অবশেষে যখন শীতলাখেত বাজারে পৌঁছই, দেখি আকাশ পরিষ্কার। হিমালয়ের শৃঙ্গগুলি হেসে যেন আমাদের স্বাগত জানাচ্ছে।

শীতলাখেত বাজারে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করে এমন কয়েকটি দোকান রয়েছে। একটি সুন্দর চেহারার ডাকঘর, একটি ওষুধের দোকান, একটি নীল রঙের চায়ের দোকান আর একটি স্থানীয় ধাবা রয়েছে। ২-৩টি হোটেলও রয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং এখানকার ফরেস্ট রেস্ট হাউস। ১৮৭৩ সালে ব্রিটিশদের তৈরি শীতলাখেতের ভিন্টেজ ফরেস্ট রেস্ট হাউসটি আজও পর্যটকদের কাছে দর্শনীয়। এটি শীতলাখেত বাজার থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে একটি টিলার উপর অবস্থিত। এই রেস্ট হাউসের লোহার গেটের ঠিক সামনে কেএমভিএন টুরিস্ট রেস্ট হাউস রয়েছে। এখানে দুটো দিন থাকব। কিন্তু পরদিন আমরা এখান থেকেই রানিখেত ঘুরে দেখার সিদ্ধান্ত নিই।

স্বাধীনতার পর এবং কুমায়ুন রেজিমেন্টের আবাসস্থল হওয়ার আগে ১৮৬০-এর দশকের শেষের দিক থেকে, রানিখেত ব্রিটিশদের একটি গ্রীষ্মকালীন আবাস ছিল। যেহেতু রানিখেত একটি সেনানিবাস শহর, তাই বেআইনি নির্মাণের অনুমতি নেই। ফলে রানিখেত অন্যান্য জনপ্রিয় পাহাড়ি স্টেশনগুলির মতো কংক্রিটের জঙ্গলের মতো দেখায় না। মল রোড ধরে ৪-৫ কিলোমিটারের মতো হাঁটাপথ পেরিয়ে আমরা চৌবাটিয়ার কাছে মধ্যাহ্নভোজের সারার সিদ্ধান্ত নিলাম। ফেরার পথে ঘণ্টার সারি দিয়ে সাজানো ঝুলাদেবী মন্দিরটিও দেখে নিই। সারাদিন পর ফিরে আসি শীতলাখেতে।

রানিখেত থেকে শীতলাখেতের দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। আর আলমোড়া ৩৬ কিলোমিটার। এই দুটি শহর থেকেই শীতলাখেত যাওয়ার জন্য শেয়ারের সুমো এবং বাস চলাচল করে। যদি সরাসরি বাস বা শেয়ার্ড ট্যাক্সি না পাওয়া যায়- তবে কোশি থেকে শীতলাখেতের শেয়ার্ড ট্যাক্সি পাওয়া যাবে। ঘুরে নিতে পারেন।