• facebook
  • twitter
Thursday, 13 March, 2025

চিলিকা কথা

চিলিকা হ্রদ হল বৃহত্তম লোনা জলের হ্রদগুলির একটি। এটি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, ডলফিন, কচ্ছপ, মাছ ছাড়াও নানা উদ্ভিদ, প্রাণীর আশ্রয়স্থল। লিখছেন অজয় বিশ্বাস।

আমার সাম্প্রতিক ওড়িশা সফরে আমি ভারতের বৃহত্তম লবণাক্ত হ্রদ এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপকূলীয় উপহ্রদ দেখতে গিয়েছিলাম। নিঃসন্দেহে এটি ভারতের অন্যতম দর্শনীয় হ্রদ। চিলিকার বিশালতা অভিভূত করে দেয়।

চিলিকা এতটাই বিশাল যে, একদিনে এটি কভার করা প্রায় অসম্ভব। তাই আমি চিলিকার অভ্যন্তরভাগ বেছে নিয়েছিলাম, যেখানে একটি খুব পুরনো দ্বীপ-মন্দির এবং বিস্তৃত পক্ষী অভয়ারণ্য রয়েছে।

ভুবনেশ্বর থেকে বরকুল পর্যন্ত যাত্রায় প্রায় ঘন্টা দুয়েক সময় লাগে। বরকুল পান্থনিবাস (ওটিডিসি) পৌঁছনোর পরই, কালীজাইয়ের টিকিট করে ফেলি। চারদিকে সবুজ টিলা দ্বারা বেষ্টিত, কালীজাই দ্বীপে নৌকা ভ্রমণ ছিল এক পরম আনন্দের বিষয়। পাখি যাঁরা ভালোবাসেন এই সফর তাঁদের স্বর্গীয় মনে হবে। স্পুনবিল, চিল, ব্রাহ্মণী হাঁস, মাছরাঙা- এমন নানা পাখির দর্শন হল চলতে চলতেই। চারপাশে অসংখ্য জলচর পাখি, ডুব দিচ্ছে আর মাথা তুলছে। ইগ্রেট, হেরন এবং সারসের পালের দেখা মিলল কালীজাই দ্বীপে পৌঁছনোর আগেই।

লোককাহিনী অনুসারে, চিলিকা হ্রদের অভ্যন্তরে পারিকুড় গ্রামে ‘জাই’ নামে একটি মেয়ের বিয়ে হয়েছিল। যেদিন তার বাবা এবং অন্যান্য আত্মীয়রা তাকে তার স্বামীর বাড়িতে নিয়ে আসছিলেন, ঝড়ো হাওয়ায় হ্রদের জল অশান্ত হয়ে ওঠে। ঝড়ের মধ্যে নিখোঁজ হয় জাই। কেউ কেউ বিশ্বাস করেন, জাই ডুবে গেছে, কেউ কেউ বিশ্বাস করেন যে সে অন্যদের বাঁচাতে নিজেকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।

যেখানে এই ঘটনাটি ঘটেছিল, তার কাছাকাছি একটি জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ ছিল। সেখানেই তার নামে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চিলিকার বিভিন্ন দ্বীপের স্থানীয় বাসিন্দারা কালী পূজা করেন। দুয়ে মিয়ে ‘কালীজাই’। দ্বীপটি খুবই নির্জন।

দ্বীপ ঘুরে আমি বরকুল ফিরে যাই। আমার পরবর্তী চিলিকা স্টপ- রম্ভা। ইন্দ্রলোকের এক অপ্সরার নামে জায়গাটির নাম। রম্ভা পান্থনিবাস এবং জেটি হল সবচেয়ে সুন্দর। একটি সবুজ গ্রামের ঠিক পাশেই পাথুরে টিলার মধ্যে অবস্থিত রম্ভা জেটি। চিলিকার জেটিগুলির মধ্যে এটি প্রাচীনতম এবং দীর্ঘতম। এখান থেকেই ডাইনোসর দ্বীপ বা হানিমুন দ্বীপ এবং ব্রেকফাস্ট দ্বীপে প্রবেশ করা যায়।

রম্ভায় স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে আমার আলাপ হয়, যিনি আমাকে বলেছিলেন ব্রেকফাস্ট দ্বীপকে আগে বিকন দ্বীপ বলা হতো। ব্রিটিশরা এই দ্বীপে একটি বিশাল রিফ্লেকটর স্থাপন করেছিল, যাতে নৌকাগুলির এবং ছোট জাহাজগুলির তীরে যেতে সুবিধা হয়। ওড়িশা পর্যটন, ৮০-এর দশকে একটি ছোট বিশ্রামাগার তৈরি করেছিল, যা নিয়মিত ঘূর্ণিঝড়ের কারণে নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে ওই দ্বীপ ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড নামে পরিচিত। ওই খালি জায়গায় একটি সাদা কুঁড়েঘরের মতো কাঠামো রয়েছে, যা কেবল ফটো শেসনের জন্য অবশিষ্ট।

শুনলাম আগস্ট পর্যন্ত সাতপাড়ার কাছে কোনও ডলফিন থাকে না, তাই সেখানে বেড়াতে গেলে সময় নষ্ট। ফলে রম্ভাতেই বেশিরভাগ সময় কাটিয়ে দিই। প্রকৃতি, পৌরাণিক কাহিনী, গল্প, বাস্তবতা এবং স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপচারিতার সুযোগ- এই নিয়েই চিলিকা। শান্ত পরিবেশে এক অদ্ভুত জলজীবনকে উপভোগ করি। এটাই চিলিকা হ্রদের সৌন্দর্যের আসল রহস্য।