শীত আসতে আর কিন্তু বেশি দেরি নেই। শীতের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান, বাঙালিরা কিন্তু এই সময় থেকেই শুরু করে দেয়। আর ঠান্ডায় তাদের পছন্দের তালিকায় থাকে পাহাড়। বাঙালির মননে পাহাড় মানে, প্রথমেই আসে দার্জিলিং আর গ্যাংটকের নাম। তবে এবারের শীতের ছুটিতে চেনা পথের বাইরে, ঘুরে আসতে পারেন সিকিমের একটি অফবিট জায়গা থেকে। এই জায়গাটিতে যেতে হলে পারমিটের কোনও ঝামেলাই পোহাতে হবে না। আর এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে আপনার মন ভরতে বাধ্য।
ভাবছেন তো, কোন জায়গার কথা বলা হচ্ছে ? জায়গাটির নাম আগামলোক। পূর্ব সিকিমের ছোট্ট একটি গ্রাম। চারিদিকে পাহাড় ঘেরা এই গ্রামের সৌন্দর্য, ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সিল্ক রুট অঞ্চলে এই গ্রামটি অবস্থিত। সকালে হোটেলের রুমে বেড টি খেতে খেতে, জানালার পর্দাটা সরালেই সামনে দেখতে পাবেন সিঙ্গালিলা রেঞ্জ । পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসছে মেঘ। সে এক অপার্থিব অভিজ্ঞতা!
আগামলোকে গেলে একটি জায়গাতে অবশ্যই আপনাকে যেতে হবে। এই এলাকাতেই পাহাড়ের উপরে রয়েছে একটি মনাস্ট্রি । এটাই এই জায়গার মূল আকর্ষণ বলা যায়। মনেস্ট্রির পিছনে রয়েছে একটি খেলার মাঠ। এক স্থানীয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এই মাঠেই খেলে এলাকার কচিকাঁচারা। মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালে দেখা যাবে শুধুই পাহাড়। বিকেলের দিকে চলে যান পাহাড়ের বুকে প্রাকৃতিক ভাবে তৈরি হওয়া ওই মাঠে। সেখানে মিঠে রোদে বসে উপভোগ করুন স্থানীয় কচিকাঁচাদের ক্রিকেট বা ফুটবল টুর্নামেন্ট।
নির্জন এই জায়গায় একবার গেলে আর ফিরতে ইচ্ছা করবে না। তাই নিখাদ নির্জনতা খুঁজলে, আগামলোকের এই জায়গাটিতে একবার হলেও ঘুরে আসতে পারেন। না হলে মিস করবেন এক অপরূপ সৌন্দর্য। আগামলোকের পাহাড়ি জঙ্গলে প্রচুর পাখি দেখতে পাবেন। বার্ড ওয়াচিং-এর নিশ্চিত ঠিকানা। পাশাপাশি ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফি করতে যারা পছন্দ করেন, তাদের জন্যও এই এলাকা আকর্ষণীয়। জঙ্গল এলাকায় পাখির ছবি তুলতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয় বটে কিন্তু ধৈর্য রাখতে পারলে আগামলোক কাউকে নিরাশ করে না। পাহাড়ি ফুলের চারিদিকে উড়ে বেড়ায় রং-বেরঙের প্রজাপতি। এই সব পাহাড়ি প্রজাপতি দেখলে মন ভালো হতে বাধ্য।
এখানকার সূর্যোদয়ের সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা খুব মুশকিল। আপনি ফোটোগ্রাফির সবটুকু তৃপ্তি পেতে পারেন, পর্বতশৃঙ্গের মাঝখান দিয়ে উদিত সূর্য দেখলে। পাশাপাশি সূর্যাস্তের মূহুর্তে আকাশময় লালচে রঙের খেলা মন কেড়ে নেবে। পাহাড়ের গায়ে লেপটে থাকা গভীর অরণ্য, আগামলোকের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। জায়গাটি পর্যটকদের মনে থেকে যাবে বহুদিন।
পর্যটকদের ভিড় এড়াতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যারা কিছুটা একান্তে সময় কাটাতে চান, আগামলোক তাদের জন্যই আদর্শ। সপ্তাহান্তের একটি ট্রিপে, শহুরে কোলাহল থেকে কিছুটা মুক্তি আপনাকে সতেজ করে তুলবে। ২-৩ দিনের প্ল্যান করে এই এলাকায় এলে অচিরেই সাক্ষী হতে পারবেন এক অতুলনীয় পাহাড়ি সংস্কৃতির। যে-সংস্কৃতিকে এখনও ছুঁতে পারেনি শহুরে আদবকায়দা। স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে তাদের জীবনযাত্রা, উৎসব ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন। তাদের সঙ্গে এক বেলার আড্ডায় আপনি এ অঞ্চলের অনেক অজানা ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবেন।
বেশ কয়েকটি হোমস্টে ও হোটেল রয়েছে এই গ্রামে। সেখানে থাকার জন্য আপনারা পছন্দমতো ঘর পেয়ে যাবেন। তাই আর দেরি না করে টিকিট কেটে ফেলুন। এবার ডিসেম্বর বা জানুয়ারির কয়েকটা দিন পরিবারের সঙ্গে আগামলোক গ্রামে কাটিয়ে আসুন।
আগামলোকের মতো গ্রামের হোমস্টেগুলিতে আপনারা হোটেলের মতো পরিষেবা হয়তো পাবেন না কিন্তু তাদের আন্তরিকতা আর হাতের গরম গরম রান্নার স্বাদ ভোলা খুব কঠিন। ম্যাগি আর মোমো- পাহাড়ে গেলে এই দুটি খাবারের উপরই সব থেকে বেশি ভরসা করতে হয়। এখানেও ঠিক তাই। আর ঠান্ডায় এই খাবার খেতেও লাগে দুর্দান্ত। একমুখ হাসি নিয়ে কখনও ওঁরা বাড়িয়ে দেবেন গরম চায়ের পেয়ালাও। এসব খেতে খেতে মায়াবী পাহাড়ের কোলে, হোমস্টের বারান্দায় বসে উপভোগ করুন ছোট্ট ছুটি। আর যদি আপনি অ্যাডভেঞ্চার পছন্দ করেন, তাহলে তো কোনও কথাই নেই। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে পড়তে পারেন হাইকিংয়ে।
আগামলোকের পাশাপাশি গাড়ি রিজার্ভ করে সিল্ক রুট, জুলুক ইত্যাদি বেড়িয়ে নিতে পারেন। গরমের জন্য আইডিয়াল হলেও, যারা চরম ঠান্ডার অনুভূতি পছন্দ করেন, তাদের জন্য শীতে এই স্পটের জুড়ি মেলা ভার।
কীভাবে যাবেন
শিলিগুড়ি থেকে আগামলোকের দূরত্ব আনুমানিক ১১৫ কিলোমিটার। শিলিগুড়ি থেকে গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে চার থেকে ছয় হাজার টাকা। কম খরচে আগামলোক পৌঁছতে চাইলে, শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটকগামী বাসে উঠে রংপোতে নেমে যান। সেখান থেকে শেয়ার গাড়িতে উঠে পৌঁছে যান রংলি। রংলি থেকে আগামলোকে পৌঁছতে হলে আপনাকে গাড়ি রিজার্ভ করতে হবে। এক্ষেত্রে হোটেল মালিকের সঙ্গে কথা বলে গাড়ির ব্যবস্থা করে নিতে পারেন।