• facebook
  • twitter
Monday, 16 September, 2024

বর্ষায় কোপাইয়ের রূপ

জলভরা তালশাঁস কার না ভালো লাগে! কিন্তু একবার যদি দেখে আসেন জলভরা কোপাই সেটাও কিন্তু ভালো লাগবে। আমার তো আবার জলঢাকা কোপাই ব্রিজের উপর এই বর্ষায় হাঁটতে ভীষণ ভালো লাগে। এই বছর বর্ষা অনেক বৃদ্ধ বয়সে শুরু হলেও জুলাইয়ের শেষে যা খেল দেখাচ্ছে তাতে আষাঢ়ের নবীন বর্ষাও লজ্জা পাবে।

পার্থময় চট্টোপাধ্যায়

জলভরা তালশাঁস কার না ভালো লাগে! কিন্তু একবার যদি দেখে আসেন জলভরা কোপাই সেটাও কিন্তু ভালো লাগবে। আমার তো আবার জলঢাকা কোপাই ব্রিজের উপর এই বর্ষায় হাঁটতে ভীষণ ভালো লাগে। এই বছর বর্ষা অনেক বৃদ্ধ বয়সে শুরু হলেও জুলাইয়ের শেষে যা খেল দেখাচ্ছে তাতে আষাঢ়ের নবীন বর্ষাও লজ্জা পাবে।

জুনের বর্ষা দক্ষিণবঙ্গে থেকে দেখা গেলো না বলে ছুটে ছিলাম উত্তরবঙ্গে আর দেড় মাস দেরিতে হলেও বর্ষার মতো বর্ষা দেখতে জুলাই মাসের শেষ দিন এসেছিলাম বীরভূমের বর্ষা দেখতে। মেঘ বৃষ্টি আর গরম নিয়ে দুদিন কাটানোর পরে আজ ‘প্রাণ ভরিয়ে তৃষা হরিয়ে’ বর্ষা দেখছি লাল মাটির দেশে। সারাদিন টানা বৃষ্টি সারা রাত্রি বৃষ্টি শুধু বৃষ্টি… সকালে খবর পেলাম কোপাই বা শাল নদীতে বন্যা পরিস্থিতি… কঙ্কালীতলা কোপাইয়ের জলে ভাসছে। গাড়ি বার করে ছুটলাম গোয়ালপাড়া হয়ে কোপাই ব্রিজের দিকে… গাড়িটা এপারেই পার্ক করে সকলে মিলে নেমে পড়লাম রাস্তায়, কিছুটা হেঁটে পৌঁছে গেলাম কোপাই ব্রিজের উপর প্রায়। আমাদের মতো পর্যটক অনেকেই কোপাই ব্রিজের উপর জলের তোড়ে দাঁড়িয়ে কেউ ছবি তুলছেন কেউ জলের দিকে তাকিয়ে আছেন। বৃষ্টি টিপটিপ করে হয়েই চলেছে। আমরা সবাই হাফ প্যান্ট পরেছিলাম যাতে কোপাইয়ের জলে একটু হেঁটে জলকেলি করতে পারি, ব্রিজের ওপারে গিয়ে নদীর ধারের একটা চা দোকানে বসে গরম ওমলেট আর চা খেতে খেতে এই গোয়ালপাড়া গ্রামটাকে দেখতে দেখতে সকালটা কাটিয়ে দিলাম। ফিরবার সময় বুঝলাম কোপাইয়ের জলের সেই উচ্ছ্বাস কমে গেছে ব্রিজের জল অনেকটাই নেমে গেছে। এবার হোটেলে ফিরবো দুপুরের খাবার খেয়ে কঙ্কালীতলার কোপাই দেখতে যাবো।

শান্তিনিকেতনের রূপ সারা বছরই খুব শান্তির একটা অনুভূতি। একমাত্র চৈত্র মাসের শেষ থেকে, বৈশাখ আর জ্যৈষ্ঠ শান্তিনিকেতনের গরম মানুষকে অশান্ত করে তোলে তবে এই সময় বেশ কয়েকবার আকাশ কালো করে কালবৈশাখী ঝড় এক অপূর্ব দৃশ্য পাওয়া যায়, আর অলস দুপুরে শঙ্খচিলের ডাকে মন উদাস হয়ে যায়। বর্ষায় এই রূপ অনবদ্ধ। সবুজ আর সবুজ, শরৎ কাল… নীল আকাশ আর অজয় কোপাইয়ের পারে সাদা হয়ে থাকে কাশ খুলে বন, হেমন্তে হিমেল বাতাস, ভোরে শিশিরের শব্দ আর সবুজ ঘাসে মাথায় হীরের মতো শিশিরের কনা, শীতে দিনে মিঠে রোদ মাখা শীতল স্পর্শ আর রাতে শীতের চরম শীতলতায় আঁকড়ে ধরা,বসন্তে পলাশের আগমন শিখতে থাকে তার নরম উষ্ণতা।
এবার বলি, শান্তিনিকেতনে এখন আরও বছর খানেক ট্রেনে আসাই ভালো কারণ যেখানে আগে আমরা সাড়েতিন ঘন্টায় পৌছাতাম সেখানে এখন লাগছে প্রায় ৬ ঘন্টা, রাস্তা মাত্র ১৭২ কিলোমিটার আমার যাদবপুরের বাড়ি থেকে। বর্ধমানের রেনেসাঁ মোড় ক্রস করে ডানদিকের রাস্তায় নামতেই একঘন্টা লেগে গেলো আর সেখান থেকে নবাব গঞ্জের হাট থেকে বোলপুর ৫০ কিলোমিটার পেরোতে লাগলো দুই ঘন্টা। তালিত রেল গেট আর বোলপুর ঢোকার আন্ডারপাসে বিশাল জ্যাম ছিল। এ ছাড়া ডানকুনি থেকে বর্ধমান আসতে রাস্তার ডাইভার্সন অনুসরণ করতে করতে তিন ঘন্টা সময় গেলো, তাই হাওড়া থেকে শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ধরে আসা যাওয়া করলে মাত্র ২ ঘন্টা ১৫ মিনিটে বোলপুর পৌঁছানো যায়, এটাই শান্তির জার্নি। উন্নয়নের জন্য গাড়ি চালানোর ইচ্ছেটাই আহত গতিতে ব্যাহত হয়।

যখন কঙ্কালীতলায় পৌঁছালাম তখন কঙ্কালীতলার মন্দিরের বিশাল চাতাল জলে ঢাকা, স্রোত বইছে। সেখানেও পর্যটক এসেছে প্রচুর। কঙ্কালী মায়ের বিশাল ছবিটির গায়ে শাড়ি জড়ানো। দোকানিদের দেখা নেই। স্বাগত এবার বললো যে লাভপুরে হাঁসুলী বাঁকের কাছে গিয়ে এই শাল নদীর রূপ দেখবে কিন্তু আমার ভয় হলো যে রাস্তায় যদি জল কাদায় আমরা আটকে যাই তবে যে বিপদ কারণ আগামীকাল সকালে আমরা কলকাতা ফিরবো।

অজয়ের ধারে ও অজয়ের বুকে কাশ ফুল ফোটে সেপ্টেম্বর শেষের দিকে তাই তখন আবার আসতে হবে। শুধু কাশ ফুলের টানে। এই সময় থেকেই পর্যটনদের যাতায়াত শুরু হয় বোলপুর শান্তিনিকেতনে। তাই আমি বলি কাশফুলের দোলায় পর্যটকরা বোলপুর আসে আর পলাশের ঝরায় তারা বোলপুর ত্যাগ করে। তবে সারা বছরই বোলপুরে পর্যটক অল্পবিস্তর যাতায়াত করলেও এই বোলপুরের সুন্দর রূপ দেখতে গেলে অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে মার্চের শেষ অবধি আসতে হয়।

এখন বোলপুরের দুর্গাপুজো বেশ নাম করেছে… সোনাঝুরি জঙ্গলের হিরোলি মায়ের পুজো, সুরুলের সরকারবাড়ির পুজো, রেল কলোনির পুজো, ত্রিশূল পট্টি দূর্গা পূজা, জামবুনির পুজো বোলপুরের বিখ্যাত সব পুজো।

বোলপুর দর্শন বলতে আগে ছিল বিশ্ব ভারতী দর্শনের সাথে আমার কুঠি, কঙ্কালীতলা ও ডিয়ারপার্ক আর এখন এর সাথে জুড়েছে, সোনাঝুরির হাট, সৃজনী গ্রাম, সায়ার বীথি, মহর্ষি ভবন, প্রকৃতি ভবন, ফসিলপার্ক, বিশ্ব বাংলা হাট, সবুজ গ্রাম ও হাঁসুলী বাঁক।
কোপাই এর জলোচ্ছাস মুগ্ধ করেছে আমায়, তবে এখন বোলপুর বা এই বাংলায় কাশ ফুলের আগমন হয়নি। দু-দিন অপেক্ষার পর কোপাইকে পূর্ণ যৌবনা দেখে মনটা তৃপ্ত হলো। শ্যামবাটিতে এখন বেশ কয়েকটা হোটেল হয়েছে… যার ভাড়া ১০০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকার মধ্যে। পুজো বুকিং শুরু হয়ে গেছে। কলকাতা ডানকুনি, সিঙ্গুর, বর্ধমান গুসকরা ভেদিয়া হয়ে গাড়িতে শান্তিনিকেতন আসা যায়, তবে এখন ভীষণ সময় লাগছে বলে ট্রেনেই আসা অনেক ভালো।