উৎসব মানেই দেদার ভুরিভোজের আয়োজন। পুজোর ক’টাদিন বাড়ির হেঁশেলে ভালোমন্দ রান্না যেমন হয়, তেমনই ভোজনপ্রিয় বাঙালিদের কথা ভেবে কলকাতার হোটেলগুলো বেশ কিছু আকর্ষণীয় খাবারের আয়োজন করেছে। শহরের বাঙালি রেস্তরাঁগুলো রকমারি থালির পাশাপশি বুফে সিস্টেমেও খাবার ব্যবস্থা রেখেছে পুজোর এই চারটে দিন।
আমাদের শহরে চিনেপাড়াও যেমন আছে, তেমনি পিছিয়ে নেই তন্দুর, মুঘলাই ঘরানার রেস্তোরাঁগুলোও। এসব জায়গায় মুর্গ জাফরানি, মুর্গ কালিমির্চ, ঝিঙ্গা তন্দুরি, গোস্ত গলৌটি কাবাব, গোস্ত অঔধি হান্ডি বিরিয়ানির মতো সুখাদ্যও যেমন থাকছে- তেমনই থাকছে ছানা কড়াইশুঁটির কাটলেট, মোরগ পোলাও, আম কাসুন্দি পমফ্রেট, ঢাকাই পোড়া মাংস, চট্টগ্রামের ছানার মালাইকারি প্রভৃতি সাবেক বঙ্গ-খানাও।
বাঙালি আদতে সর্বভুক। কন্টিনেন্টাল কুইজিনের যারা ভক্ত, তাদের জন্য পুজো স্পেশাল ডিশগুলি হল, ক্রিম অফ অ্যাসপারাগাস সুপ, ক্রিম অফ টম্যাটো স্যুপ, ক্রিম অফ ক্র্যাব মিট স্যুপ, ক্রিমি প্রন বিস্ক স্যুপ, ভেটকি মেউনিয়ার, প্রন থার্মিডোর, গ্রিলড চিকেন, পর্ক চপ প্রভৃতি।
এর পাশাপাশি যারা বাড়িতে সুস্বাদু রান্না করতে চান পুজোর ক’টা দিন, তারাও নিত্যদিনের খাবারের তালিকায় কিছুটা বদল আনতে পারেন। কথায় বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। তাই বাঙালির প্রিয় চারটি পদ আমরা হাজির করছি ভোজনরসিকদের দরবারে। রইল রেসিপি।
পাবদার ঝাল
উপকরণ: পাবদামাছ ৩০০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি ২৫০ গ্রাম, টম্যাটো ২০০ গ্রাম, আদা-রসুন পেস্ট ১৫ গ্রাম, লংকাগুঁড়ো ১ চা চামচ, হলুদগুঁড়ো ১ চা চামচ, নুন স্বাদমতো, সরষেবাটা ১৫ গ্রাম, কাঁচালংকা ২টি, ধনেপাতাবাটা ১ টেবল চামচ, লেবুর রস ১০ মিলি, সরষের তেল ১০০ গ্রাম।
প্রণালী: পাবদা মাছগুলো নুন হলুদ মাখিয়ে ভালো করে ভেজে আলাদা রাখুন। কড়াইতে সরষের তেল গরম করে কাটা পেঁয়াজ দিয়ে দিন। সেগুলি সোনালি না-হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
আধ কাপ জল দিয়ে, আদা-রসুনের পেস্টের সঙ্গে লংকাগুঁড়ো মিশিয়ে নিন। সঙ্গে দিন হলুদগুঁড়ো। কড়াইতে এই মিশ্রণটি ঢেলে দিয়ে ভালোভাবে কষুন। প্রয়োজনমতো নুন দিন। তেল ছেড়ে না-যাওয়া পর্যন্ত মশলা ভাজুন। এবার কাটা টম্যাটো দিয়ে দিন এবং মিনিট দু’য়েক ভাজুন।
এক কাপ জল যোগ করুন ও গ্রেভি ঘন হওয়া পর্যন্ত কম আঁচে রান্না করুন। সরষের পেস্ট, কাটা কাঁচালংকা, ধনেপাতাকুচি যোগ করুন এবং লেবুর রস দিয়ে কয়েক সেকেন্ড রান্না করুন। গ্রেভির মধ্যে মাছগুলো দিয়ে দিন এবং খুব কম আঁচে দুই থেকে তিন মিনিট রান্না করুন। আঁচ থেকে সরান। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
কলাপাতায় ভাপা ইলিশ
উপকরণ: ইলিশ মাছ ২৫০ গ্রাম (পিস করা), কলাপাতা ২টি, কাঁচালংকা ২টি, রাই সরষে ২৫ গ্রাম, কালো সরষে ২৫ গ্রাম, লেবুর রস ১০ মিলি, সরষের তেল ৩০ গ্রাম, ঘন দই ৫০ গ্রাম, নুন স্বাদমতো।
প্রণালী: কালো সরষে, রাই সরষে এবং কাঁচালঙ্কা একসঙ্গে বেটে একটি পেস্ট তৈরি করুন। লেবুর রস, নুন ও সরষের তেল এবং দই একসঙ্গে মিশিয়ে প্রতিটি মাছের পিস-এ মাখিয়ে নিন। মাছগুলো এই পেস্ট দিয়ে ম্যারিনেট করে তিন ঘন্টার জন্য আলাদা রাখুন।
কলাপাতাগুলো টুকরো করে তাওয়ায় একটু সেঁকে নিন। তারপর ম্যারিনেট করা মাছগুলো কলাপাতায় এক এক করে রাখুন। ভালোভাবে মুড়ে সুতো বেঁধে দিন। মাছগুলি ১৫ মিনিটের জন্য স্টিম করুন তারপর গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
পটলের দোরমা
উপকরণ: পটল ২০০ গ্রাম, টম্যাটো পেস্ট ১০০ গ্রাম, পেঁয়াজবাটা ১০০ গ্রাম, আদা-রসুনবাটা ২০ গ্রাম, লংকাগুঁড়ো ১ চা চামচ, হলুদগুঁড়ো ১ চা চামচ, সরষের তেল ১০০ মিলি, গরমমশলাগুঁড়ো ১ চিমটে, কুচোনো কাজু পরিমাণমতো, কিশমিশ ৩ গ্রাম, সেদ্ধ আলু ২টি, জিরেগুঁড়ো ১ চা চামচ, নুন ও চিনি স্বাদমতো, নারকেলকোরা ২৫ গ্রাম, কাজুবাটা ১০ গ্রাম, ঘি ৫ গ্রাম।
প্রণালী: পটলের ভিতর থেকে শাঁস বের করে নিন স্কুপারের সাহায্যে। এটা আলাদা রাখুন পুর বানানোর জন্য। পটলগুলো কড়ায় ডিপ ফ্রাই করুন। প্লেটে তুলে নিন। এবার কড়ার তেলে আলাদা করে রাখা পটলের শাঁসটা দিয়ে ভাজতে থাকুন। এর মধ্যে হলুদগুঁড়ো, লংকাগুঁড়ো, জিরেগুঁড়ো, সেদ্ধ আলু, কাজু, কিশমিশ ও নারকেল দিয়ে কষতে থাকুন। সুন্দর গন্ধ বের হতে শুরু করলেই বুঝবেন পুরটা তৈরি হয়ে গেছে।
এই পুর এবার এক এক করে পটলের ভিতরে ভরুন। কড়াইতে তেল গরম করুন। পেঁয়াজবাটা, আদা-রসুনবাটা দিয়ে নাড়াচাড়া করুন। পেয়াজে বাদামি রং ধরলেই টম্যাটো পেস্ট দিয়ে আরও দু’মিনিট সঁতে করুন। হলুদগুঁড়ো লংকাগুঁড়ো দিন, নুন মিষ্টি দিন স্বাদমতো, তারপর কষতে থাকুন। এবার কাজুবাটা দিয়ে ভালোভাবে মেশাতে থাকুন যাতে গ্রেভিটা ঘন হয়।
তেল ছেড়ে এলে পুর ভরা পটলগুলো এই গ্রেভিতে দিয়ে দিন এবং জল ঢেলে দিন। পাঁচ মিনিট ফুটতে দিন যাতে পটলের সঙ্গে ঝোল ভালোভাবে মিশে যায়। ঘি আর গরমমশলাগুঁড়ো ছড়িয়ে দিন। কাজু-কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন।
তোপসে ভাজা
উপকরণ: তোপসেমাছ ১৫০ গ্রাম, হলুদগুঁড়ো ১ চা চামচ, বেসন ১৫০ গ্রাম, নুন স্বাদমতো, ছোট পেঁয়াজ ১টা কুচি করা, লংকাগুঁড়ো ১ চা চামচ, আদা-রসুনবাটা ১৫ গ্রাম, লেবুর রস ১০ গ্রাম, চালের গুঁড়ো ৫০ গ্রাম।
প্রণালী
লেবুর রস, আদা-রসুনবাটা, হলুদগুঁড়ো ও নুন মাখিয়ে মাছের টুকরোগুলো ম্যারিনেট করুন। বেসন, চালের গুঁড়ো ও সামান্য নুন দিয়ে জলে গুলে, ঘন ব্যাটার তৈরি করুন। পেঁয়াজকুচি ও লংকাগুঁড়ো দিয়ে দিন। এবার কড়াইতে তেল গরম করে, মাছগুলি এক এক করে ব্যাটারে ডুবিয়ে ভেজে নিন। মনে রাখবেন মিডিয়াম আঁচে ডিপ ফ্রাই করতে হবে। হালকা বাদামি রং ধরলে ও কুড়মুড়ে হয়েছে বুঝলে মাছগুলি তুলে নিন। শশা আর পেঁয়াজ গোল গোল করে কেটে এই মাছভাজার সঙ্গে পরিবেশন করুন।