টরেন্টো, টরেন্টো কালী বাড়ি ও সি.এন.টাওয়ার   

অজিতকৃষ্ণ দে
প্রায় ১৪৭ ফুট উচ্চতায় উঠলে এক নিমেষে ওপরে পৌঁছে যাওয়া যায়৷ সিএন টাওয়ারে অন্টারিও প্রদেশের টরেন্টোয়৷ এককালে টরেন্টো কানাডার রাজধানী ছিল৷ সিএন টাওয়ার শুধু টরেন্টোর এক অভিনব আশ্চর্য নয়, গোটা পৃথিবীর এক আশ্চর্যজনক নির্মাণ এটি৷ এটির উচ্চতা ৫৫৩.৩৩ মি (১,৮১৫.৪) ফুট৷ ছাদ পর্যন্ত-৪৫৭ মি (১৫০০.০০ মি)৷ শীর্ষতলা পর্যন্ত-৪৪৬.৫ মি (১,৪৬৪ ফুট), ১৪৭ তলা, ৯টি এলিভেটর৷ সিএন টাওয়ার কাজের শুরু হয়-১৯৭৩ সালে৷ সমাপ্ত হয় ১৯৭৬ সালে৷ দর্শণের জন্য চালু হয়-২৬ জুন, ১৯৭৬৷ নির্মাণকার্যের জন্য ব্যায় হয়- ৬৩,০০০.০০০ ডলার৷ এটির স্বত্তাধিকারী- কানাডা ল্যান্ডস কোম্পানী৷ কানাডায় সিএন টাওয়ার যেখানে অবস্থিত সেই টরেন্টো শহর সম্বন্ধে কিছু কথা এই প্রসঙ্গে আলোচনা করা যেত পারে৷
টরেন্টো শহর যে এলাকাটিতে অবস্থিত, সেটি ইংরেজরা স্থানীয় আমেরিকান আদিবাসী গোত্র মিসিসাগার কাছ থেকে কিনে নেয় এবং ১৭৯৩ সালে ইয়র্ক নামক একটি শহর প্রতিষ্ঠা করে৷ ১৮৩৪ সালে এর নাম বদলে টরেন্টো রাখা হয়৷ ১৮৬৭ সালে কানাডা ফেডারেশন বা যুক্তরাষ্ট্র গঠনের সময় টরেন্টোকে অন্টারিও প্রদেশের রাজধানীর মর্যাদা দেওয়া হয়৷ টরেন্টোর জলবায়ুতে ঋতুগুলো পরিস্কারভাবে আলাদ৷ তবে হ্রদের উপস্থিতির কারণে জলবায়ুর চরমভাগ খানিকটা প্রশমিত হয়৷ গ্রীষ্মকালগুলি উষ্ণ ও আদ্র৷ কিন্ত্ত শীতকালে তাপমাত্রা প্রায়ই শূন্যের দিকে নেমে যায়৷ জুলাইমাসের গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রী এবং জানুয়ারি মাসে গড় তাপমাত্রা সর্বনিম্ন-১ডিগ্রী সেলসিয়াসের কাছে যায়৷ টরেন্টোর শেয়ার বাজার কানাডার সর্ববৃহৎ এবং বিশ্বের ৭ম বৃহত্তর শেয়ার বাজার৷ টরেন্টো সবদিক দিয়ে খুবই উচ্চমানের শহর৷ এখানে ভিন্নবাসীর লোক প্রচুর বসবাস করে৷ যাদের সিংহভাগ ভাষা ইংরেজি ভাষায় কথা বলে৷ আবার মনট্রিল শহরে বেশির ভাগ বসবাস কারি ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলে৷ টরেন্টো কানাডার সাংস্কৃতিক ও অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র৷ বহু গুরুত্বপূর্ণ কর্পোরেশনর প্রধান কার্যালয় টরেন্টো৷ এই টরেন্টোর বুকে সিএন টাওয়ার ১৪৭ তলা লম্বা হয়ে সগর্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে৷
বলে রাখি সিএন টাওয়ারের একটা ঘূর্ণায়মান ৩৬০ রেস্টুরেন্ট বা রেস্তোঁরা আছে৷ বোঝাই যায় না এই রেস্টুরেন্ট ঘুরছে৷ এটা সিএন টাওয়ারের অত্যন্ত আশ্চর্যজনক রেস্তোঁরা৷ অন্যান্য রেস্টুরেন্ট থেকে এটা একেবারে আলাদা বা স্বতন্ত৷ এই ৩৬০ রেস্টুরেন্টে ডিনার বা লাঞ্চ এবং কোন ঘরোয়া party’র আয়োজন করলে অন লাইনে টেবল বুকিং করতে হয়৷ বর্তমানে ৭৫ ডলার লাগে মাথাপিছু এক একজনের৷ এখানে জানলার ধারে বসে ডিনার বা লাঞ্চ করলে দেখা যাবে বাইরের সমস্ত দৃশ্য, যা চোখের সামনে ঘুরে ঘুরে আসবে৷ ব্যাপারটা ঠিক সূয;-পৃথিবীর মতো৷ যেমন মনে হয়- সূর্য স্থির আর তার চারপাশ পৃথিবী প্রদক্ষিণ করছে৷
এটা কতগুলো বিয়ারিং এবং ইঞ্জিনিয়ারিং প্রযুক্তির উচ্চতম নিদর্শন৷ যা একটা ম্যাজিকের মতন আমাদের চারপাশকে দেখিয়ে চলেছে৷ আমাদের প্রলোভিত করছে৷ আমরাও এই ম্যাজিকের অংশীদার হয়ে অবাকদৃষ্টিতে এই কারসাজি ৩৬০ রেস্টুরেন্টের উপভোগ করছি৷ এই রেস্টুরেন্টে যেহেতু অগ্রিম বুকিং পদ্বতি, তাই প্রতিটা কাস্টমারকে নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে এসে রিসিপশান কাউন্টারে টিকিট দেখিয়ে কাস্টমারকে নির্দ্দিষ্ট আসন সংগ্রহ করতে হবে৷ একসঙ্গে প্রতিদিন কতলোকের যে সমাগম হয় তা বলা শক্ত৷ তবুও হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয় প্রতিদিন৷ কয়েক লক্ষ ডলারের ব্যাবসা এই ৩৬০ রেস্টুরেন্টে৷ এখানে জানলার ধারে বসলে টরেন্টো শহরটা খুবই ভালভাবে পরিলক্ষিত করা যায়৷
এই ৩৬০ রেস্টুরেন্ট পরোপুরি ঘুরতে ৭২ মিনিট লাগে৷ অর্থাৎ ৩৬০ রেস্টুরেন্টে ঢোকা থেকে কাস্টমাররা  ৭২ মিনিট সময় এখানে ব্যায় করতে পারবেন অতি আনন্দের সাথে৷ এখানে একটা মজা আপনি বসে বসে দেখবেন বাইরের দৃশ্য শুধু পরির্তিত হচ্ছে৷ আপনি স্থির৷ এটাই সিএন টাওয়ারের ৩৬০ রেস্টুরেন্টের বৈশিষ্ট৷ এখানে টয়লেট, কিচেন সব কিছুই আপনার চোখের সামনে৷ প্রত্যেকটা খাবার খুবই সুস্বাদু তার সঙ্গে অভ্যর্থনা৷ এটা ইলেকট্রিক মোটরের সাহায্য ঘুরতে থাকে যা আমাদের চোখের অগোচরে  ঘটে চলেছে প্রতি নিয়ত৷

টরেন্টো কালী বাড়ি
টরেন্টো কালী বাড়ি হিন্দুদের একটি পবিত্র স্থান৷ এখানে নিয়ম মেনেই পুজো হয়৷ হিন্দুদের সব পুজোই এখানে অনুষ্ঠিত হয়৷ কাললী পূজা৷ দূর্গা পূজা বুদ্ধ পূর্ণিমা, গুরু পূর্ণিমা, কোজাগরী লক্ষ্নী পূজা প্রতিটি আমাবস্যা, বিপদত্তারিনী পূজা, কালীবাড়ির প্রতিষ্ঠা দিবস সব কিছুই নিষ্ঠার সঙ্গে হিন্দু তে পূজা হয়৷ কালীবাড়িটি মিসিসাগার একপ্রান্তে অনেকটা জায়গা নিয়ে প্রতিষ্ঠিত৷ সামনে প্রচুর জায়গা আছে গাড়ী পার্কিংএর জন্য৷ মন্দিরের ভেতর কালী মায়ের মূর্তি৷ পাশে মানে দুইপাশে ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদের ও শ্রী শ্রী সারদা মা৷ এছাড়া বেদীর নীচে একপাশে শিবলিঙ্গ প্রতিতিষ্ঠা করা হয়েছে৷ এটি একটি ট্রাস্টি দ্বারা পরিচালিত৷ মন্দির ৩৫ বছরের পুরোনো৷