• facebook
  • twitter
Thursday, 19 September, 2024

রাজ্যে রেমাল আতঙ্কের মধ্যে প্রস্তুত প্রশাসন, বিপর্যয় মোকাবিলায় চালু একাধিক হেল্পলাইন নম্বর

কলকাতা, ২৬ মে:  আজ মাঝরাতের আগেই আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। আমফানের প্রায় সাড়ে চার বছর পর ফের ভয়াবহ কোনও ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হতে চলেছে দুই বাংলার মানুষ। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে প্রায় ১৩৫ কিমি বেগে এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে। পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের বরিশাল ডিভিশনের খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে

কলকাতা, ২৬ মে:  আজ মাঝরাতের আগেই আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। আমফানের প্রায় সাড়ে চার বছর পর ফের ভয়াবহ কোনও ঘূর্ণিঝড়ের সম্মুখীন হতে চলেছে দুই বাংলার মানুষ। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আজ রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে প্রায় ১৩৫ কিমি বেগে এই ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে। পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের বরিশাল ডিভিশনের খেপুপাড়ার মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়তে চলেছে রেমাল।

রাজ্যের সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় যার প্রভাব পড়েছে। উত্তাল হয়ে উঠেছে সমুদ্র ও নদীগুলি। দীঘা উপকূলে ইতিমধ্যে প্রবল জলোচ্ছাস দেখা দিয়েছে। উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়ছে সমুদ্রতটে। কুলতলীতে দমকা হাওয়ার দাপটে নদীর জলের ঢেউ দুকূলে আছড়ে পড়ছে। রাজ্যজুড়ে ভোর থেকে শুরু হয়েছে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়াও দেখা গেছে। হাসনাবাদ নদী বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে। রেমাল আছড়ে পড়ার আগে বড় কোনও বিপর্যয় আটকাতে গ্রামের মানুষ সেই বাঁধ মেরামতির কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। উপকূলবর্তী এলাকাগুলির মানুষকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত মোট ১ লক্ষ ৮ হাজার ৪২১ জনকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। যাঁদের মধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৮৪ হাজার ৪৫০ জন, উত্তর ২৪ পরগনায় ১৬ হাজার ৪৪৪ জন, পূর্ব মেদিনীপুরে ৬ হাজার ৫৬৪জন এবং হাওড়ায় ৯৬৩ জন। এই কাজ এখনও অব্যাহত রয়েছে। প্রায় ২৫০টি পরিবারকে নিরাপদে সরাল উলুবেড়িয়া জেলা প্রশাসন।

ইতিমধ্যে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জায়গায় জায়গায় মাইকিং করে বাসিন্দাদের সতর্ক করছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা টিম। এই রেমালকে কেন্দ্র করে আগামী ২৯ মে অবধি বিশেষ কন্ট্রোল রুম খুলেছে কৃষি দফতর। এই কন্ট্রোল রুম রাজ্যের কৃষিকার্যের ওপর রেমালের প্রভাব খতিয়ে দেখবে। সেজন্য সর্বক্ষণ নজরদারি চালাবে এই কন্ট্রোল রুম। জেলার কৃষি আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে নিয়মিত রিপোর্ট পাঠাবে। কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, রাজ্যের কৃষকদের কথা মাথায় রেখে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নিয়ে একটি টিম গঠন করা হয়েছে। এই কন্ট্রোল রুমে কোন অফিসার কখন ডিউটিতে থাকবেন এবং কোন মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে তারও একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

আজ সকাল থেকেই দীঘায় শুরু হয়েছে ব্যাপক বৃষ্টি। সমুদ্রে যেতে জারি হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। সেজন্য দীঘা সহ অন্যান্য সী বীচ খালি করে দেওয়া হচ্ছে। সেখানে কোনও পর্যটকদের যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি সমূদ্র উপকূলে কোনও দোকান বসতে দেওয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তার কারণে হুইসেল বাজিয়ে ঘনঘন টহল দিচ্ছে পুলিশের গাড়ি। রাস্তার ওপর বন দপ্তরের কর্মীরাও প্রস্তুত রয়েছেন। যাতে ঝড়ে গাছ উপড়ে পড়লে দ্রুত তা সরিয়ে ফেলা যায়। এদিকে, আগামী দুই দিন হোটেল বুকিংয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দীঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। যেসব পর্যটকরা সেখানে রয়েছেন, প্রশাসনের তরফে তাঁদেরকেও বাড়ি ফিরে যেতে অনুরোধ করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্য সরকার উপযুক্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলায় চালু করা হয়েছে বেশ কয়েকটি হেল্পলাইন নম্বর। সর্বক্ষণের কড়া নজরদারির জন্য খোলা হয়েছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। পুলিস, দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তর, পুরসভা, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ-এর সঙ্গে যোগাযোগ রেখে এই কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে কাজ করবে। কোস্ট গার্ড ও সিভিল ডিফেন্সের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখবে এই কন্ট্রোল রুম। সেইসঙ্গে বেশ কিছু হেল্পলাইন নম্বরও চালু রাখা হয়েছে।

এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের হেল্পলাইন নম্বর: ১০৭০ বা ০৩৩ ২২১৪৩৫২৬- ১০৭০ – ০৩৩ ২২১৪৩৫২৬, ডব্লু বিএসইডিসিএল-এর হেল্পলাইন নম্বর: ৮৯০০৭৯৩৫০৩-০৪, কলকাতা পুলিসের নম্বর: ৯৪৩২৬১০৪২৮ কলকাতা পুরসভার নম্বর: ২২৮৬-১২১২, ২২৮৬-১৩১৩, ২২৮৬-১৪১৪ ।

প্রসঙ্গত গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রেমালের অবস্থান ছিল সাগর থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্বে ৩৫০ কিলোমিটার দূরে ও ক্যানিং থেকে ৩৯০ কিলোমিটার দূরে। তখন ঘন্টায় ১২ কিমি বেগে এগোচ্ছিল এই ঝড়। রবিবার সকালে সেটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। মাঝরাতে ল্যান্ডফলের সময় তার গতিবেগ দাঁড়াবে ১২০ থেকে ১৩৫ কিলোমিটারের আশেপাশে। যদিও শহর কলকাতায় সেই গতিবেগ ৯০ কিলোমিটারে সীমাবদ্ধ থাকবে বলে আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে। অন্যদিকে রেমালের জেরে উপকূল এলাকার নদী ও সমুদ্রে জলস্তর ১ মিটার বৃদ্ধি পাবে। সেজন্য উপকূলবর্তী জেলাগুলির অধিকাংশ নিচু এলাকা জলমগ্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।