মেডিটারিয়ান ডায়েটের রহস্য জানতে ব্লু জোনে

এই বিশ্বের এই ৫ জায়গার মানুষ শতায়ু
বর্তমান বিশ্বে এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না যে কোন না কোনও অসুখে ভুগছে না৷ সে সামান্য রক্তচাপ থেকে শুরু করে সুগার, থাইরয়েড৷ আবার রয়েছে ক্যানসারের মতো নানান জটিল অসুখও৷ এখন প্রশ্ন করতেই পারেন৷ এ আর নতুন কথা কি? বিশ্বের যেকোন কোণে চলে যান অসুখ পিছু ছাড়বে না আপনার৷ কিন্তু যদি বলি এই বিশ্বেই এমন কিছু জায়গাও আছে যেখানে এই রোগ-ব্যাধি থেকে দূরে মানুষ শুধু সুস্থ-স্বাভাবিক ভাবে বাঁচেই না আযুও হয় অনেক বেশি৷
বিশ্বে যেসব এলাকায় অধিকসংখ্যক দীর্ঘায়ু মানুষের বাস, সেসব এলাকা চিহ্নিত করতে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করেছেন মার্কিন লেখক ড্যান বুয়েটনার৷ পাশাপাশি জানার চেষ্টা করেছেন কীভাবে এসব এলাকার অধিবাসীরা শারীরিক জটিলতা (যেমন হূদরোগ, স্থূলতা, ক্যানসার কিংবা ডায়াবেটিস) ছাড়াই দীর্ঘ জীবন পেলেন৷ এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক সোসাইটি৷ ‘ব্লু জোন’ বলে পরিচিত এমন পাঁচ এলাকার কথাই আজ আপনাদের জানাই চলুন-

ইকারিয়া:
গ্রিসগ্রিসের একটি ছোট দ্বীপ ইকারিয়া৷ ২৫৪ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুডে় বিস্তৃত দ্বীপটি তুরস্ক উপকূল থেকে আট মাইল দূরে আজিয়ান সাগরে অবস্থিত৷ বিস্ময়ে ভরা এই দ্বীপের মানুষের গড় আয়ু ১০০ বছর৷ এখানে মধ্যবয়সী মানুষের (৪৫-৬৪ বছর) মৃতু্যহার বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে কম৷ বয়স বাড়লে মানুষকে যে ভুলে যাওয়ার সমস্যায় (ডিমেনশিয়া) ভুগতে দেখা যায়, সেটাও এই দ্বীপবাসীর বয়স্কদের মধ্যে নেই বললেই চলে৷ ইকারিয়াবাসীদের দীর্ঘ জীবনের মূলমন্ত্র তাদের ঐতিহ্যবাহী মেডিটারিয়ান ডায়েট৷ এই বিশেষ ধরনের ডায়েট মেনে চললে টাইপ-২ ডায়াবেটিস, হূদরোগ, স্ট্রোক ও স্থূলতার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে৷ এতে শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম, মটরশুঁটি, মাছ ও অলিভ অয়েলের মতো অসম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ বেশি৷ সেই সঙ্গে পরিমিত মাংস এবং দুগ্ধজাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শও থাকে এই ডায়েটে৷

ওকিনাওয়া:
জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিমের দ্বীপাঞ্চচলটির নাম ওকিনাওয়া৷ ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই এলাকায় বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘজীবী নারীদের বাস৷ তবে পুরুষদের গড় আয়ুও কম নয়৷ ওকিনাওয়া দ্বীপের বাসিন্দাদের দীর্ঘ জীবনের রহস্য জানতে গবেষকেরা কয়েক দশক ধরেই অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এই অনুসন্ধান চলছে তাঁদের জিনের গঠন এবং দৈনন্দিন জীবনযাপনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে৷ ওকিনাওয়ার অধিবাসীরা নিজেদের উৎপাদিত মিষ্টি আলু, সয়া বীজ, মুগওয়ার্ট, হলুদ এবং গয়া (করলা) নিয়মিত খাবারের তালিকায় রাখেন৷


অলিয়াস্ত্রা :
অলিয়াস্ত্রা অঞ্চল, সার্দিনিয়া, ইতালিইতালির সার্দিনিয়া দ্বীপের পার্বত্য অঞ্চলটির নাম অলিয়াস্ত্রা৷ এখানে প্রচুর শতায়ু পুরুষের বাস৷ এ অঞ্চলের লোকেরা সচরাচর কম আমিষযুক্ত খাবার খেতে অভ্যস্ত৷ খাদ্যাভ্যাসের কারণে তাঁদের ডায়াবেটিস ও ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে৷ যার কারণে ৬৫ বছরের কম বয়সীদের মৃতু্যহার নিম্নমুখী৷

লোমা লিন্ডা:
লোমা লিন্ডা শহরের মানুষেরা দেশটির অন্য এলাকার মানুষের চেয়ে গড়ে ১০ বছর বেশি বাঁচেন৷ তাঁদের সুস্বাস্থ্যের রহস্যের অন্যতম হলো স্বাস্থ্যকর খাবার, ব্যায়াম আর ধর্মবিশ্বাস৷ লোমা লিন্ডা শহরে ‘সেভেনথ ডে অ্যাডভেন্টিস্টদের’ (প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টানদের বিশেষ সম্প্রদায়) সর্বোচ্চ সংখ্যায় পাওয়া যায়৷ তাঁরা বিভিন্ন শস্য, ফল, বাদাম ও শাকসবজি বেশি খেয়ে থাকেন৷

নিকোয়া :
নিকোয়া উপদ্বীপ, কোস্টারিকাএই অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যবয়সে মৃতু্যহার বিশ্বে সর্বনিম্ন৷ আর পুরুষ শতবর্ষীদের ঘনত্বের দিক দিয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়৷
গবেষকেরা বলছেন, নিকোয়া উপদ্বীপের মানুষেরা নিজেদের ফসল নিজেরা ফলান, সেখানকার জল উচ্চ ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ, নিজেদের মধ্যকার গভীর সামাজিক বন্ধন এবং প্রাত্যহিক লো ইনটেনসিটির ব্যায়াম (সাঁতার, হাঁটা, সাইক্লিং, যোগব্যায়াম ইত্যাদি) তাঁদের অন্যদের চেয়ে আলাদা করে৷