• facebook
  • twitter
Thursday, 26 December, 2024

সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

ইতিহাস গড়লেন ভারতের গৌরব গুকেশ

ফাইল চিত্র

ভারতের দাবার ইতিহাসে এক নতুন দিগন্তের নাম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ডি গুকেশ। সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করলেন তিনি। শেষ গেমে চিনের ডিং লিরেনকে হারিয়ে খেতাব জিতে নিলেন ১৮ বছর বয়সী গুকেশ। অসাধারণ জয় গুকেশকে নতুন পরিচয় করিয়ে দিল সারা বিশ্বের দাবার আসরে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত ৭.৫-৬.৫ ফলে হারিয়ে দিলেন চিনের প্রতিপক্ষকে। একটা সময় একের বিরুদ্ধে অন্যজন যেভাবে দাবার চালে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন এবং কোনও সময় জয়ের পথে ম্যাচ থমকে গিয়েছে। সেই অবস্থায় অনেকেই ভেবেছিলেন হয়তো টাইব্রেকারে খেলার ফয়সালা হবে। কিন্তু গুকেশের কৌশলী চালে চিনের ডিং লিরেন পয়েন্ট হারাতেই জায়েন্ট স্ক্রিনে ভেসে ওঠে— বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারতের ডি গুকেশ!

বৃহস্পতিবার ছিল ১৪তম ম্যাচ। ১৩তম ম্যাচের শেষে সমান পয়েন্ট ছিল তাঁদের। নিয়ম অনুযায়ী, যে আগে ৭.৫ পয়েন্টে পৌঁছবে, সে জিতবে। এদিন গুকেশ জিতে এক পয়েন্ট পেতেই পৌঁছে যান ৭.৫ পয়েন্টে। ফলে আর টাইব্রেকার খেলার প্রয়োজন হল না। সবচেয়ে কম বয়সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি গুকেশ। দাবাড় চেয়ার থেকে উঠে দঁড়াতেই আনন্দে গুকেশকে কাঁদতে দেখা যায় ।

ভারতের প্রথম গ্র্যান্ড মাস্টার তথা প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন বিশ্বনাথন আনন্দের শহর চেন্নাইয়ে জন্ম গুকেশের। বাবা চিকিৎসক। মা মাইক্রোবায়োলজিস্ট। সাত বছর বয়সে দাবা খেলা শুরু গুকেশের। এক বছর পরেই অনূর্ধ্ব-৯ এশিয়ান স্কুল দাবা প্রতিযোগিতা জেতেন তিনি। অনূর্ধ্ব-১২ স্তরে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাঁচটি সোনা জেতেন গুকেশ। মাত্র ১২ বছর ৭ মাস ১৭ দিন বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টারের যোগ্যতা অর্জন করেন তিনি। ভারতের কনিষ্ঠতম ও বিশ্বের দ্বিতীয় কনিষ্ঠতম (১২ বছর ৭ মাস বয়সে গ্র্যান্ড মাস্টার হয়েছিলেন রাশিয়ার সের্গে কারজ়াকিন) হন গুকেশ। ভারতীয় দাবায় তাঁর উল্কার গতিতে উত্থান সবার নজর কেড়েছিল। ২৬ বছর পরে আনন্দকে টপকে ভারতের এক নম্বর দাবাড়ু হন গুকেশ।

১১ বছর বয়সে গুকেশ বলেছিলেন, তিনি সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হতে চান। তখনও গ্র্যান্ড মাস্টার হননি ভারতের তরুণ দাবাড়ু। কিন্তু ১১ বছর বয়সে বলা কথা সত্যি করলেন গুকেশ। ১৮ বছর বয়সে বিশ্বের কনিষ্ঠতম হিসাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেন। এই স্বপ্ন জয়ে আপ্লুত নিজে এবং পরিবারের সবাই। আনন্দের পরে দ্বিতীয় ভারতীয় হিসাবে ক্যান্ডিডেটস দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন গুকেশ। আনন্দের অ্যাকাডেমিরই ছাত্র তিনি। আর সেই কারণেই হয়তো ক্যান্ডিডেটসে গুকেশের সুযোগ পাওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল। গত বছর ভারতীয় দাবার প্রাথমিক ক্যালেন্ডারে ছিল না চেন্নাই গ্র্যান্ড মাস্টার্স। শেষ মুহূর্তে সেই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছিল। তার পরেই বিতর্ক শুরু হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছিল, দক্ষিণের দুই গ্র্যান্ড মাস্টার গুকেশ ও অর্জুন এরিগাইসি যাতে ক্যান্ডিডেটসের যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন তার জন্যই কি এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে?

সেই সময় গুকেশের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বিশ্ব দাবা সংস্থা ফিডে-র সহকারী সভাপতি বিশ্বনাথন আনন্দ। ভারতের প্রথম গ্র্যান্ডমাস্টার বলেছিলেন, ‘‘যদি কোনও প্রতিযোগী দেখে যে প্রতিযোগিতায় পঞ্চম হলে সে সুযোগ পাবে আর সে জেতার বদলে পঞ্চম হওয়ার দিকেই নজর দেয়, তা হলে কি সে নিয়ম ভেঙেছে? আমার মতে, প্রত্যেকের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্যই খেলা উচিত। কিন্তু কোনও প্রতিযোগী যদি পঞ্চম হওয়ার জন্য খেলে তা হলে তো সে কোনও অন্যায় করছে না। নিয়ম ভাঙছে না। এই প্রতিযোগিতা আয়োজন করে কোনও নিয়ম ভাঙা হয়নি। এতে কোনও সমস্যা নেই।’’

আনন্দ যে ভুল ছিলেন না তা প্রমাণিত। গুকেশ ২০২২ সালে অলিম্পিয়াডে একক বিভাগে সোনা জিতেছিলেন। ২০২৩ সালে সবচেয়ে কম বয়সে ২৭৫০ রেটিং পয়েন্টে পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। সেই বছর সেপ্টেম্বরে আনন্দকে টপকে ভারতীয়দের মধ্যে ক্রমতালিকায় শীর্ষে উঠে এসেছিলেন গুকেশ। এ বার সর্বকনিষ্ঠ হিসাবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলেন।

কিংবদন্তী দাবাড়ু বিশ্বনাথন আনন্দের পরে দ্বিতীয় বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কৃতিত্ব দেখালেন চেন্নাইয়ের ডি গুকেশ।