• facebook
  • twitter
Tuesday, 26 November, 2024

ক্রিকেটের অভিধানে নতুন ‘ব্যাটার’ শব্দটি কী না ব্যবহার করলেই নয়?

‘ব্যাটার' শব্দটি প্রবর্তনের এর কারণ হিসেবে এম সি সির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ইদানীং ক্রিকেট খেলাটিতে আর সম্পূর্ণ পুরুষদের একচেটিয়া অধিকার নেই।

রোহিত শর্মা (Photo: Paul ELLIS / AFP)

ক্রিকেটের ৪৭২ বছরের প্রাচীন ইতিহাসে এই জনপ্রিয় খেলাটির ফর্মাটে নানা রকম পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে ধ্রুপদী টেস্ট ক্রিকেট ছাড়াও পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেট এবং টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এই নতুন ফর্মাটের ক্রিকেটে নবতম সংযোজন হয়েছে।

জনপ্রিয় এই খেলাটির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় দক্ষিণ পূর্ব ইংল্যান্ডের কেন্ট, সাসেস্ক ও সারে কাউন্টিগুলিতে এই খেলা শুরু হয়েছিল ১৫৫০ খিষ্টাব্দে। অবসর বিনোদনের জন্য প্রথমদিকে ক্রিকেট খেলতেন এইসব শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকরা।

পরবর্তীতে সতেরশো শতকে প্রথম চার্লসের শাসনকালে ইংল্যান্ডের অভিজাত শ্রেণী এই খেলার প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়ে। এর অনেক পরে ১৮৭৭ খিষ্টাব্দে ক্রিকেট প্রতিযোগিতার অঙ্গ হিসেবে টেস্ট খেলার প্রবর্তন হয়। প্রথম টেস্ট খেলিয়ে দেশ হিসেবে ক্রিকেট ইতিহাসে খোদাই হয়ে রয়েছে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার নাম।

সাম্প্রতিক কালে ২৭ টি দেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলিয়ে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে আই সি সির তবে সমগ্র বিশ্বে ১০৫ টি দেশে কম বেশি ক্রিকেট খেলা সামগ্রিকভাবে নানান পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে ক্রিকেট।

ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আই সি সি অধুনা ক্রিকেট বিশ্বের বৃত্ত বা পরিধি থেকে বহু প্রাচীন প্রসিদ্ধ ‘ব্যাটসম্যান’ শব্দটি বিলুপ্ত করে দিয়েছে, মেনে নিতে পারেননি অধিকাংশ যা মোটেও ক্রিকেটপ্রেমী।

ক্রিকেটের ধাত্রীভূমিতে সমস্ত নীতি নির্ধারণের স্বীকৃত সংস্থা লন্ডনের এম সি সি ক্লাবের (মেরিলিবন ক্রিকেট ক্লাব) পক্ষ থেকে ‘ব্যাটসম্যান’ শব্দটি পাল্টে ‘ব্যাটার’ করা হয়েছে। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা আই সি সি ও (১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল) এব্যাপারে শিলমোহর দিয়েছে।

‘ব্যাটার’ শব্দটি প্রবর্তনের এর কারণ হিসেবে এম সি সির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে ইদানীং ক্রিকেট খেলাটিতে আর সম্পূর্ণ পুরুষদের একচেটিয়া অধিকার নেই। কেননা এখন মহিলারাও যথেষ্ট পরিমাণে ক্রিকেট করলেই নয়? খেলায় আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ক্রিকেট খেলিয়ে দেশগুলির মধ্যে শুরু হয়েছে মহিলা টেস্ট ক্রিকেট, সীমিত ওভারের ক্রিকেট, কুড়ি কুড়ি ক্রিকেট এবং সর্বোপরি রয়েছে ঘরোয়া ক্রিকেট প্রতিযোগিতা।

ভারতের মহিলা ক্রিকেটার ঝুলন গোস্বামী, মিতালি রাজ, স্মৃতি মান্ধানা প্রমুখদের নাম দেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষেরা প্রায় সবাই জানেন। তাই ‘ব্যাটসম্যান’ শব্দটির ভিতরে যেহেতু ‘ম্যান’ শব্দটি রয়েছে তাই এটিকে খুব সহজেই একধরনের পুরুষতন্ত্রের আধিপত্যবাদ বলে অভিহিত করা হতে পারে তাই নতুন ভাবে পুরুষ মহিলা উভয় ক্রিকেটারদেরই এখন থেকে ‘ব্যাটার’ বলা হবে।

তবে ‘ব্যাটার’ শব্দটি শুনতে কিন্তু খুব শ্রুতিমধুর আদৌ লাগছে না। যেমন অনান্য খেলায় অর্থাৎ ফুটবল, ভলিবল প্রভৃতিতে পুরুষ ও মহিলাদের আলাদাভাবে নামকরণে পৃথক করা হয়নি। ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ফিফা পুরুষ এবং মহিলা খেলোয়াড়দের আলাদাভাবে পৃথক করে দেখায়নি। সেখানে সবাইকেই ফুটবলার হিসেবে বলা হয়ে থাকে।

তেমনইভাবে এম সি সি যদি সবাইকে ‘ব্যাটার’ না বলে ক্রিকেটার হিসেবে নামকরণ করতেন কিংবা ‘ব্যাটসম্যান’ ও ‘ব্যাটসউইম্যান’ হিসেবে উল্লেখ করার কথা আভিধানিকভাবে স্বীকৃতি দিতেন তাহলে সেটা শুনতে যথেষ্ট শ্রুতিমধুর হত। বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা ফুটবলের ক্ষেত্রে কিন্তু এখনও সর্বোচ্চ নিয়ামক সংস্থা ফিফা এই নারী পুরুষ খেলোয়াড়ের কোনও বিভাজন এখনও করেনি।

হয়তো কোনও প্রয়োজনও পড়েনি কেননা গোলকিপার, মিডফিল্ডার, সেন্টার ফরোয়ার্ড প্রভৃতির ক্ষেত্রে কোনও বিভাজনের প্রয়োজন আদৌ পড়েনি। তাই ক্রিকেটের ক্ষেত্রেও এই পুরুষ নারীর কোনও বিভাজন না করে সবাইকেই ক্রিকেটার হিসেবে উল্লেখ করা হলে তা যথেষ্ট যুক্তিসংগত হত । যেমন ক্রিকেটার বিরাট কোহলি ব্যাট করতে নেমে প্রথম বলেই ছক্কা হাঁকালেন।

এর পাশাপাশি ক্রিকেটার মিতালি রাজ টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সবমিলিয়ে এম সি সি প্রদত্ত ‘ব্যাটার’ শব্দটি একদমই শ্রুতিমধুর এবং তাৎপর্যপূর্ণ হয়নি বলেই ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে করছেন।