• facebook
  • twitter
Wednesday, 26 March, 2025

আইনজীবী যখন ফুটবল কোচ দীপাঁকুর শর্মা

ভারতীয় ফুটবল কাঠামোর সর্বোচ্চ লিগে আগামী কয়েক বছর কাজের মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা আপাতত বাড়িয়ে নিতে চাইছেন।

ফাইল চিত্র

পুনের সিম্বিওসিস ল স্কুল থেকে আইন পাস করে তিনি এখন দিল্লি কোর্টে এক ল ফার্মের সাথে যুক্ত আছেন। আবার, এএফসি এ-লাইসেন্স পাস করেই তিনি এখন মিজোরামের চামারি এফসি দলের হেড কোচ হয়ে আইলিগের দ্বিতীয় বিভাগের কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে চলছেন। ড: এসবি মজুমদারের প্রতিষ্ঠিত সিম্বিওসিস সোসাইটির আইন কলেজের প্রাক্তন ছাত্র দীপাঁকুর শর্মা তার কলেজের নামের যথার্থতা প্রমাণ করছেন। হেনরিক অ্যান্টন ডি বারি, সিম্বিওসিসকে ‘অসদৃশ জীবের একসাথে বসবাস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। দেশের ১০টা অন্যতম নামী আইন কলেজের মধ্যে সিম্বিওসিস আইন কলেজ ৫ম স্থানে আছে। এমন নামী কলেজের প্রাক্তন ছাত্র মাঠের বাইরের ও ভিতরের দুই গুরুত্বপূর্ণ অংশকে দারুন ভারসাম্যে একসাথে এগিয়ে নিয়ে চলছেন।

এবছরের জানুয়ারি মাসে মিজোরামের চানমারি এফসির দায়িত্ব নিয়েছেন। ১১ ম্যাচে ২৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করে,তার চানমারি এফসি আইলিগের দ্বিতীয় বিভাগের লিগ টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে আছে। ১০ ম্যাচে ২৪ পয়েন্ট নিয়ে কলকাতার ডায়মন্ড হারবার এফসি লিগ টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করে আছে। ১১ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট সংগ্রহ করে,গোয়ার স্পোর্টিং ক্লুব দ্য গোয়া লিগ টেবিলে তৃতীয় স্থানে আছে। আইলিগ দ্বিতীয় বিভাগ থেকে মূলপর্বের আইলিগে প্রমোশন পাওয়াকে কোচ দীপাঁকুর শর্মা তার কোচিংয়ের প্রথম লক্ষ্য হিসেবে ধরেছেন। এর ফাঁকে, আইলিগের দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হতে পারলে, সেই সাফল্য তার কোচিং জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন। আইলিগে প্রমোশন পাওয়া কিংবা দ্বিতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে,তার দুই প্রধান প্রতিপক্ষ বিদেশি কোচ কিবু ভিকুনার ডায়মন্ড হারবার এফসি এবং সদ্য দোনাচার্য পুরস্কারপ্রাপ্ত দেশীয় কোচ আর্মান্দো কোলাসোর স্পোর্টিং ক্লুব দ্যা গোয়া। প্রতিপক্ষ দুই দলের অভিজ্ঞ কোচের সাথে মাত্র ৩৩ বছরের দীপাঁকুর শর্মার কঠিন চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়েছে। অবশিষ্ট পাঁচটি ম্যাচই তার সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

দীপাঁকুর শর্মা জানালেন, ‘দলের যুব ফুটবলারদের ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করা এবং তার দলকে আক্রমাত্মক ফুটবল খেলানোই তার কোচিংয়ের প্রধান লক্ষ্য।’ নয় দলের আই লিগের দ্বিতীয় বিভাগে চানমারি এফসি ১১ ম্যাচে সর্বোচ্চ ২৪টা গোল করেছে। চানমারি এফসির মাইকেল জুয়েল, লালরুথাসাঙ্গা কেসি মালসামাইয়াদের মত যুব ফুটবলারা লিগে দারুন নজর কাড়ছে।

দীপাঁকুর শর্মা দেশে ও বিদেশে যুব ফুটবলারদের নিয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। দেশে বাইচুং ভুটিয়া স্কুল ও রিলায়েন্স ইয়ং চ্যাম্পের অনূর্ধ্ব ১৬ দলের কোচিং করিয়েছেন‌। বেঙ্গালুরু সুপার ডিভিশনে কোডাগু এফসি এবং মাদ্রাজের করর্বাট এফসির সিনিয়র টিমের সাথেও যুক্ত ছিলেন। মেক্সিকোর ফুট একাডেমি ও বার্সেলোনার ফুটবল গাভা দলের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। স্পেনে থাকাকালীন ফুটবলের উপরে বিভিন্ন মাষ্টার্স কোর্স করে নিয়েছেন।

৪-৩-৩ ফর্মেশনে দলকে ফুটবল খেলাতে পছন্দ করলেও, বিভিন্ন ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বিভিন্ন ফর্মেশনে খেলানোর জন্য তিনি দলকে তৈরি রাখেন। দর্শকরা যাতে তার দলের ফুটবল খেলাকে উপভোগ করতে পারেন, তার জন্য সর্বদা আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে তিনি ভালোবাসেন। ভবিষ্যতে তিনি ভারতীয় ফুটবল দলের সাথে যুক্ত থাকতে চান।

ভারতীয় ফুটবল কাঠামোর সর্বোচ্চ লিগে আগামী কয়েক বছর কাজের মাধ্যমে নিজের অভিজ্ঞতা আপাতত বাড়িয়ে নিতে চাইছেন। হরিয়ানার গুরুগ্রামের দীপাঁকুর স্কুল ও কলেজ পড়ার সময় ফুটবল খেলতেন। ফুটবলের প্রতিই তার একমাত্র আসক্তি আছে। সময় পেলে কোর্টে আইনজীবীর ভূমিকা পালন করেন বটে। তবে, অবসর সময়ে ফুটবল নিয়েই চর্চায় ব্যস্ত থাকেন। তার বাবা নেভিতে কাজ করতেন। ফলে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে তাকে বসবাস করতে হয়েছে। ফলে পড়াশুনা ঠিকমতো চালিয়ে গেলেও ফুটবল খেলায় নিয়মিত হতে পারেননি। নিজের অপূর্ণ ইচ্ছা কোচিংয়ের মাধ্যমে পূরণের সুযোগ এসেছে। নিজের হাতে বেশকিছু ভালো ফুটবলার তৈরি করে ভারতীয় দলকে উপহার দিতে চান। আগামী কয়েকটা দিন চানমারি এফসির কঠিন ম্যাচগুলো ছাড়া অবশ্য কোনো ভাবনাকেই তিনি গুরুত্ব দিতে চাননা। এত ভালো শুরু করে দলকে প্রমোশন পাইয়ে আইলিগে তুলতে না পারলে তা নিজের ব্যর্থতা হিসেবেই ধরবেন।