ডার্বি ম্যাচের উন্মাদনা একেবারে অন্যরকম। খেলার চেহারায় দেখতে পাওয়া যায় চড়া মেজাজ। উত্তেজনার পারদ টগবগ করে ফুটছে শুক্রবার সকাল থেকেই। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তাঁবুতে গিয়ে দেখা গেল, টিকিট সংগ্রহের জন্য বড় লাইন। আবার মোহনবাগান তাঁবুতে উৎসাহের অভাব নেই। সব মিলিয়ে বলা যায়, আইএসএল ফুটবলে প্রথম ডার্বি ম্যাচে শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে জনগর্জন দেখা যাবে। এই গর্জন শুধু ফুটবলের জন্য। তবে শোনা যাচ্ছে, নীরব প্রতিবাদও থাকবে আরজি করের ঘটনা নিয়ে।
সব মিলিয়ে বলতে পারা যায়, দুই দলের সমর্থকরা তাঁদের দলকে শুধু প্রেরণা দেবেন তাই নয়, ভালো খেলার জন্য সমর্থনের কোনও অভাব থাকবে না। এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল তার প্রতিপক্ষ মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসের থেকে পিছিয়ে রয়েছে। তবুও ইস্টবেঙ্গল বলতেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। আহত বাঘ যেমন গর্জে ওঠে তেমনই বড় ম্যাচে লাল-হলুদ ব্রিগেডে আস্ফালন কখনওই থমকে থাকে না। তাই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই থেকে কোনও দলই পিছিয়ে থাকবে না, তা বলাই বাহুল্য। ইস্টবেঙ্গল এখনও পর্যন্ত কোনও ম্যাচেই জয়ের হাসি দেখতে পায়নি। তবুও, এই মহারণে তাঁদের পাখির চোখ জয়ের দিকে। কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ম্যাচটা জিততে চাইছে লাল-হলুদ শিবিরের ফুটবলাররা। তবে, মোহনবাগান এখন যেভাবে লড়াইয়ের সামনে রয়েছে, তাতে বলতেই পারা যায়, ইস্টবেঙ্গলকে প্রথম থেকেই চাপের মধ্যে রাখবে। তাই চ্যালেঞ্জটা এমন জায়গায় পৌঁছতে পারে, তার আগাম ফলাফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। ফুটবল যুদ্ধে সবসময় একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার জন্য দুই দলই তৈরি থাকে।
এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কাছে সুখের বার্তা তাদের নতুন কোচ অস্কার ব্রুজো শনিবার সকালেই কলকাতায় চলে আসছেন। কিন্তু খেলোয়াড়দের সঙ্গে সেইভাবে পরিচিতি না হতে পারলেও সন্ধের সময় অবশ্যই মাঠে উপস্থিত থেকে ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করবেন। বর্তমান কোচ বিনো জর্জ অনুশীলনের মধ্যে দিয়ে খেলোয়াড়দের বলতে চেষ্টা করেছেন, লক্ষ্য একটাই ৩ পয়েন্ট। বিনো জর্জের সঙ্গে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছেন সাউল ক্রেসপো। ক্রেসপো হাসতে হাসতে বলেছেন, অপেক্ষায় রয়েছি জয়ের হাসি হাসতে। তবে, এই মুহূর্তে রক্ষণভাগে আনোয়ার আলিকে নিয়ে কিছু বলতে চাননি। কোচ বলেন, রক্ষণ ভাগের খেলোয়াড়দের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। আমরা ভালো করেই জানি, প্রতিপক্ষ দলের অ্যাটাকিং লাইনআপটা কিরকম রয়ে থাকে। স্কোয়াডে যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে আগেও লাল-হলুদ ব্রিগেডের ফুটবলাররা খেলেছেন। তাই চিন্তার কোনও কারণ দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। চোট-আঘাত সবসময় একটার চিন্তার বিষয় হয়। তাই মনে রাখতে হবে, কেউ কিন্তু ফুটবল মহাযুদ্ধে ফেভারিট নয়। মনে রাখতে হবে, শুভ বিজয়ার পরে ডার্বি ম্যাচের কার্নিভালে সবাই হাজির থাকবেন। তাই এই ম্যাচের গুরুত্ব একেবারে অন্যরকম।
এটা মনে রাখতে হবে, বড় ম্যাচে সবসময় কিন্তু রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হয়। বিশেষ করে, সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারদের দায়িত্ব অনেক বেশি থাকে। সেটা যদি আলগা হয়ে যায়, তাহলে বিপদ ঘনীভূত হয়। সেক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গল থেকে মোহনবাগান বেশ কিছুটা এগিয়ে রয়েছে। তাদের রক্ষণভাগকে টপকানো বেশ কঠিন।
মোহনবাগান সুপারজায়ান্টসের কোচ হোসে মোলিনাকে বেশ খোশ মেজাজে দেখা গেল। তিনি প্রথমে সাংবাদিকদের ডেকে বললেন, শুভ বিজয়া। সামনেই কালীপুজো। সবাই ভালো থাকবেন। তারপরেই তিনি স্পষ্ট করে দিলেন, আর কয়েক ঘণ্টা বাদেই শুরু হবে বাংলার সবচেয়ে বড় ফুটবল উৎসব। সেই উৎসবকে আলিঙ্গন করবেন কয়েক হাজার দর্শক। এই দিনটার জন্য আমরা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে থাকি। তাই সবুজ-মেরুন শিবিরের জার্সি গায়ে প্রথম একাদশে কারা খেলবেন, তা কিন্তু সেইভাবে স্পষ্ট করলেন না কোচ। বললেন, আলবার্তো রড্রিগেজ পুরোপুরি ফিট। সবাই প্রস্তুত রয়েছেন সেরা খেলা উপহার দেওয়ার জন্য। এখন সবচেয়ে বড় চিন্তা, রিজার্ভ বেঞ্চে কাকে রাখা হবে। সেরা একাদশ মাঠে নামবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিশেষ করে মহমেডান স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে তিন পয়েন্ট পাওয়ার পরেই ফুটবলাররা আত্মবিশ্বাসে ভরপুর। প্রতিপক্ষ দলকে সবসময় সমীহ করে খেলতে হয়। এই মুহূর্তে তারা খারাপ অবস্থায় থাকলেও কোনওভাবেই আমরা হালকাভাবে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করব না। সাহালও ফিট। মাঠে নামার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। অতীতে অনেক সময় দেখা গিয়েছে অপরাজিত দল সমস্যায় পড়ে যায় কোনও কোনও ম্যাচে। তাই নিজেদের মানসিকভাবে এগিয়ে রেখে ফুটবলাররা সংগ্রামী ভূমিকা নেবেন, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন হয় না। ডার্বি ম্যাচ বলতেই দুই প্রধানের জবরদস্ত লড়াই। তাই যুদ্ধক্ষেত্রে কোনও দলই হারতে চায় না। কৌশলে ও বুদ্ধিতে প্রতিপক্ষকে হারানোটাই হল অঙ্গীকার। ইস্টবেঙ্গল দলের কোচের কথা উঠতেই মোহনবাগানের কোচ বলেন, আমি ওকে চিনি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত কোনও কথা হয়নি। কোচ মোলিনার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দলের অধিনায়ক শুভাশিস বসু। তাঁর মতে, ডার্বিতে কে এগিয়ে থাকবে, তা নিয়ে কোনও বিতর্ক তৈরি হয় না। মাঠেই তার পরিচয় হয়। গোলরক্ষক থেকে আক্রমণভাগের প্রত্যেক খেলোয়াড়ের একটাই শপথ জয়ের হাসি হাসতে হবে। আবার এটাও মনে রাখতে হবে, ফুটবল খেলার একটাই লক্ষ্য গোল। সুযোগ পেলে গোল করতে হবে এবং দলকে জেতাতে হবে। এর বাইরে অন্য কোনও ভাবনা হতে পারে না। এবারে কথা প্রসঙ্গে কোচ মোলিনা জানিয়ে রাখলেন, অনেকে হয়তো মনে করেন, মোহনবাগান এগিয়ে আছে। সেটা আমি কখনওই বলব না। বেশি আত্মবিশ্বাসী হওয়া ঠিক নয়। দলে ম্যাকলারেন এসেছেন। সুযোগ পেয়ে গোল করার জন্য তাঁকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত ম্যাচে ম্যাকলারেন ও গ্রেগ গোল করেছেন। আবার রক্ষণভাগ থেকে ফুটবলাররা আক্রমণে উঠে এসে গোল করার জন্য প্রস্তুত থাকবেন। ফুটবল বলতে অলআউট খেলা। তাই শনিবারের ডার্বি ম্যাচ নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে অন্য উন্মাদনার ছবি দেখতে পাওয়া যাবে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে।