সীতারাম মুখোপাধ্যায়, আসানসোল: কুলটির শাকতরিয়ার বাসিন্দা একসঙ্গেই পৃথিবীর আলো দেখা তিন কন্যা সর্বভারতীয় ন্যাশনাল ওপেন তাইকোয়ান্ডো প্রতিযোগিতায় দশটি পদক জিতে সমগ্র জেলা তথা রাজ্যকে গৌরবান্বিত করল। গত ১২ জুন থেকে ১৪ই জুন মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়নিতে তাইকোয়ান্ডো ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া অনুমোদিত ১৫ তম ওপেন ন্যাশনাল তাইকুন্ড চ্যাম্পিয়নশিপ অনুষ্ঠিত হয়।
এই প্রতিযোগিতায় ডিশেরগড় গার্লস হাই স্কুলের সপ্তম শ্রেণীর তিনবোন সুপ্রিতা, সুচেতা এবং রঞ্জিতা মোট ১০ টি মেডেল পায় ছটি বিভাগের প্রতিযোগিতায়। এরমধ্যে সাতটি সোনার মেডেল দুটি রূপো এবং একটি ব্রোঞ্জ মেডেল ওরা তিনজন পায় বলে জানান তার বাবা বামাপ্রসাদ চ্যাটার্জী। তিনি বলেন রঞ্জিতা চারটি স্বর্ণ পদক পেয়ে সমগ্র টুর্নামেন্টের ম্যান অফ দ্যা টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হয়েছে। বামাপ্রসাদ বাবু জানান এর আগে তার কন্যারা দেরাদুনে জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়ে রূপোর পদক পায়।তার আগে জাতীয় সাব জুনিয়ার প্রতিযোগিতায় ওরা ব্রোঞ্জ পদক পেয়েছিল।
ঐ তিন কন্যার এবার আশা আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে সেখান থেকেও স্বর্ণপদক নিয়ে আসা। তার জন্য তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওরা জানান ওদের প্রাকটিসের জন্য বাড়ির এলাকায় বাবা সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। ওদের নিয়মিত কোচিং দেন সেখানেই শুভ গাঙ্গুলী নামে স্থানীয় এক কোচ। মেয়েদেরই কৃতিত্বের সঙ্গে সঙ্গে শুভ গাঙ্গুলীরও প্রশংসাও করেছেন তাদের বাবা ।
একসঙ্গে পৃথিবীর আলো দেখা এই তিন কন্যা জন্মের সময় ওজন ছিল তিন জনের মিলিত মাত্র তিন কেজি। ফলে তাদের বেশ কিছুদিন ইনকিউবেটরে রাখা হয়েছিল ।আর এক সঙ্গে তিন কন্যা হওয়ায় যথেষ্ট কটাক্ষ শুনতে হয়েছিল পরিবারের অভিভাবকদের বিশেষ করে মাকে। সেই তিন কন্যাই আজ শুধু শিল্পাঞ্চল নয়, জেলা এবং রাজ্য স্তরের গর্ব ।
ওদের খুশিতে আজ গর্বিত আসানসোল ।ওদের এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে বহু প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে তিন বোনের লড়াইয়ের গল্প। তিন কন্যার বাবা বামাপ্রসাদ ও মা সুনেত্রার লড়াইও যথেষ্ট বলা যায়। কোন কোন প্রতিবেশী বা অন্যরা একসঙ্গে তিন কন্যা হওয়ায় যেসব টিপ্পনী করত তা উড়িয়ে দিয়েই পেশায় গৃহ শিক্ষক বামাপ্রসাদ ওদের মানুষের মতো মানুষ করতে চেয়েছিলেন তার স্ত্রী সাহায্য নিয়ে। শুধু তাইকুন্ডই নয় ,নাচ এবং গানের ক্ষেত্রেও তারা পারদর্শী। বামপ্রসাদ বাবু বলেন আমাদের স্বপ্ন ওরা আন্তর্জাতিক স্তরে তাইকুন্ড প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে এমন সব মেডেল নিয়ে আসুক দেশের জন্য। মেয়েদের এই সাফল্যে গর্বিত তার মা সুনেত্রাদেবী বলেন ওরা তিনজন আমাদের নয়নের মনি হয়ে উঠেছে । সমস্ত অপমানের যোগ্য জবাব দিয়ে একের পর এক ওরা সোনার পদক গলায় নিয়ে বাড়ি ফিরেছে। একসময় ওর বাবা ওই তিন সদ্যোজাত কন্যার স্বার্থে ভালো চাকরি ছেড়ে এখন স্কুল, কলেজের ছেলে মেয়েদের বাড়িতে বসেই কোচিং ক্লাসে পড়ান। তিন কন্যাই চায় এবার তারা দেশের জন্য সত্যি কারের লড়াইয়ে নেমে স্বর্ণপদক নিয়ে আসতে।