নিজস্ব প্রতিনিধি— নিজের ক্রিকেট কেরিয়রে দাপিয়ে আইপিএল খেলেছেন৷ কখনও মুম্বই ইন্ডিয়ান্স, কখনও চেন্নাই সুপার কিংসের জার্সি গায়ে দাপট দেখিয়েছেন৷ এবং খেলেছেন বলে জানেন টুর্নামেন্ট চলার সময় কোন শিবিরের মেজাজ কেমন থাকে৷ নিজের সেই অভিজ্ঞতা থেকে এবারের আইপিএল নিয়ে কথা বলতে গিয়ে প্রাক্তন ক্রিকেটার হরভজন সিং মনে করছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচে এগিয়ে শুরু করবে ধোনির দল চেন্নাই সুপার কিংস৷
কেন! কি কারনে তিনি বিরাট কোহলিদের বিরুদ্ধে ধোনিদের এগিয়ে রাখছেন! তিনি যে কারনগুলি দেখিয়েছেন, সেটা হরভজনের মুখ থেকে শুনে নেওয়া যাক৷
আমার মনে হয় না আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের ( সিএসকে) মতো মেজাজ অন্য কোনও দলের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়৷ আইপিএল ক্রিকেট বিশ্বের অন্য টি২০ ক্রিকেটের থেকে অনেক এগিয়ে৷ একে সেরা ক্রিকেট লিগ বলা হয়ে থাকে৷ সেই কারনে একটা বাড়তি চাপ দলের মধ্যে থাকে৷ জিততে হবে৷ চ্যাম্পিয়ন হতে হবে৷ ক্রিকেটারদের মধ্যে এটা ঢুকে পড়তে চাপ বেডে় যায়৷ দলের মধ্যে থাকে৷ বাইরেও থাকে৷ যেমন ভারতীয় দলের জার্সি গায়ে খেলতে গেলে চাপটা আমরা অনুভব করি৷ ২০১১ বিশ্বকাপের কথাই ধরুন৷ ঘরের মাঠে খেলা বলে বাড়তি চাপ একটা ছিলই৷ আমরা যেখানে খেলতে গিয়েছি, সব জায়গায় একটাই কথা-কাপ জিততে হবে৷ আইপিএল খেলতে নেমে প্রায় ততটাই কথা চারিদিকে শোনা যেত৷ কিন্ত্ত শিবিরের ভিতরে তেমন কিছু ছিল না৷ কেমন ঠান্ডা একটা ব্যাপার দলের মধ্যে ছিল৷ টিম মিটিংয়ে সেভাবে আলোচনা হত না৷ ধোনি নিজের কথা বলে দিত৷ ব্যস তারপর কিছু নেই৷ বেশি সময় লাগত না মিটিং শেষ করতে৷ আসলে ব্যাপারটা এমন ছিল যে নিজেদের আনন্দে ক্রিকেট খেল৷ তোমার সেরাটা দিতে চেষ্টা কর৷ আর দিতে পারলে তোমার পাশাপাশি দলও সাফল্য পাবে৷ এই ছিল দলের নীতি৷ আর তাতেই সিএসকে পাঁচবার আইপিএল জিতল৷ ম্যাচ হার বা জেত, কোনও কিছুতে ফারাক নজরে পড়ত না৷ মাঠেই সব কিছু শেষ করে দেওয়া হত৷ বাইরে এসে কাউকে নিয়ে কোনও কথা উঠত না৷ এটা একদিকে ভাল৷ এই লেভেলের ক্রিকেটে যারা খেলে তারা জানে তাকে কি করতে হবে৷ খারাপ হলে সে নিজের ভিতর জ্বলে শেষ হয়ে যায়৷ সেখানে তাকে আবার খুঁচিয়ে দিলে লাভের থেকে ক্ষতি বেশি হয়৷ হলুদ জার্সি গায়ে খেলতে নেমে আমার মোটামুটি এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ তার উপর চেন্নাইয়ের মাঠে ধোনিদের হারানো অনেক কঠিন কাজ৷ মাঠ ও মাঠের বাইরের লড়াই প্রতিপক্ষ শেষ হয়ে যায়৷
এবার দলটির দিকে তাকানো যাক৷ বড় নাম আপনি দেখতে পাবেন না৷ সেখানে ধোনি প্রথম ও শেষ কথা৷ শুক্রবার যে দলটি সম্ভবত খেলতে নামবে, সেখানে নাম হিসেবে চমক খুব একটা আছে কি! ঋতুরাজ, কনওয়ে, রাহানে, মঈন, শিভম, জাদেজা এবং ধোনি নিজে৷ এর সঙ্গে থাকবে শার্দুল, মুস্তাফিজুর, স্যান্টনার৷ শ্রীলঙ্কার পেসার পাতিরানা চোটের কারনে বেশ কিছুদিন মাঠের বাইরে৷ ফিট হতে পারলে মাঠে নামবে৷ না হলে মোটামুটি এমন দল নিয়ে মাঠে খেলতে নামবে সিএসকে৷ আর হ্যাঁ আর একজনের কথা বলা হল না৷ নিউজিল্যান্ডের রিচন রবীন্দ্রা৷ এবারের বিশ্বকাপে দারুন পারফর্ম করেছে৷ ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি স্পিনটাও ভাল করতে পারে৷ আর চেন্নাইয়ের মাঠে ওকে দিয়ে ধোনি তো পুরো চার ওভার করিয়ে নেবে৷ দলের দিকে তাকালে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করা যাবে, অনেক অলরাউন্ডার ওদের হাতে আছে৷ এরা কেউ কিন্ত্ত এক বা দুওভার বল করে সরে যাবে না৷ ধোনি দারুনভাবে এদের ব্যবহার করে৷ তাই এরা একবার ম্যাচ ধরে নিতে পারলে নায়ক হয়ে যায়৷ রাহানেকে এই ফরম্যাটে কেউ ভাবত না৷ কিন্ত্ত গতবার ধোনি ওকে দারুনভাবে ব্যবহার করল৷ রাহানে সফলও হল৷ এটাই হল সিএসকে দলের করিশ্মা৷
এবার আরসিবি-র দিকে চোখ রাখা যাক৷ ওদের ব্যাটিং কিন্ত্ত বেশ ভাল৷ ওপেনে বিরাটের সঙ্গে থাকবে ফাফ৷ ওরা দুজন গত আইপিএলে অনেক রান করেছে৷ একবার ভাল শুরু করে দিতে পারলে মিডলঅর্ডার নিশ্চিন্তে থাকতে পারে৷ তবু ম্যাক্সওয়েলে উপস্থিতি বাড়তি পাওয়া হিসেবে ধরে নেওয়া হয়৷ পাতিধার আছে৷ ব্যাটিংয়ের থেকে বোলিংয়ে সেই ভারটা দেখতে পাওয়া যায় না৷ ওদের একটাই নীতি বোর্ডে বড় রান তুলে দাও৷ বাকিটা বোলাররা করে দেবে৷ কিন্ত্ত এত কিছুর পরও ওরা একবারও ট্রফি জিততে পারেনি৷ এবা কি পারবে! দেখা যাক৷ প্রথম ম্যাচ অনেক কিছুর উত্তর কিন্ত্ত দিয়ে যাবে৷ একবার গাডি় চলতে শুরু করলে তাকে আটকানো কঠিন হয়ে পডে়৷ তবে লিগ বলে বাড়তি সুবিধা৷ একটা বা দুটো ধাক্কা খেলেও টুর্নামেন্টে টিঁকে থাকা যায়৷ কিন্ত্ত সেরার লড়াইয়ে সেটা আর কে ভাবে! ঘরের মাঠে সিএসকে ম্যাচ জিতবে না, এটা তো হতে পারে না৷ ওদের ট্র্যাক রেকর্ড এমন কথাই যে বলছে৷