একদিকে চ্যালেঞ্জ আর অন্যদিকে হুঙ্কার। ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান শিবির যেন আগুনের মতো ঝলসে উঠেছে। কেউ কাউকে একফালি জমি দিতে রাজি নয়। লাল-হলুদ শিবিরের খেলোয়াড়দের মধ্যে একটা জেদ খেলা করছে। আইএসএল ফুটবলে এখনও পর্যন্ত একটা পয়েন্টও ঘরে আসেনি। ছ’টা ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে। তাই শনিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গণে সমর্থকদের অনুপ্রেরণায় দুরন্ত ফুটবল খেলে প্রতিপক্ষ মহমেডানকে হারিয়ে প্রথম জয়ের হাসি দেখতে চাইছেন ফুটবলাররা। আবার মহমেডান শিবিরে হুঙ্কার শোনা গেল, এখন শুধু অপেক্ষা দল কীভাবে জিতবে? তার জন্য সমস্ত রকম অঙ্ক সাজানো হয়ে গিয়েছে। এটা ঠিক গত তিনটি ম্যাচে মহমেডান হারলেও প্রতিপক্ষ ইস্টবেঙ্গলকে চ্যালেঞ্জ জানাতে ফুটবলাররা কোনও সময়ের জন্যই পিছিয়ে নেই। এখন অপেক্ষা ফুটবল রণক্ষেত্রে কীভাবে বাজিমাত করা যাবে, তা দেখা।
অবশ্য এই মুহূর্তে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে আত্মবিশ্বাসের হাওয়া বইছে। দলের স্প্যানিশ কোচ অস্কার ব্রুজো খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করছেন। পাশাপাশি, এএফসি চ্যালেঞ্জ লিগে গ্রুপ পর্যায়ের খেলায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে খোলা হাওয়া বইতে শুরু করেছে। সমর্থকরাও অনুপ্রাণিত ইস্টবেঙ্গলের জয়ে ছবি দেখতে পাওয়ায়। তাই মহমেডান স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে সুনামির ঝড় তুলে প্রথম জয়ের আনন্দের জোয়ারে ভাসতে চাইছেন সবাই।দুই দলের কোচ গোপন অঙ্ক কষে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করার ছক তৈরি করছেন।
ইস্টবেঙ্গলের অনুশীলনে দেখা গেল, রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের নাম বেশ কিছুটা সময় অতিবাহিত করলেন অস্থির। হয়তো দল গঠনে বেশ কিছু রদবদল হতে পারে। আনোয়ার আলিকে রেখেই রক্ষণভাগকে সাজাবেন। বিশষ করে নির্ভর করতে হবে প্রভাত লাকড়া, মার্ক জোথাংপুইয়া, সন্দীপ চক্রবর্তী ও মাধি তালারের উপরে। হয়তো সেই কারণেই দেখা গেল গোলকিপারকে সতর্ক করে কোচ তাঁদের শট মারতে বললেন। হেক্টর ইউসতের চোট। তাই তিনি খেলতে পাবেন না। সেই জায়গায় নির্ভর করতে হবে বাকিদের উপর। মাঝমাঠ থেকে কীভাবে আক্রমণ গড়ে তোলা যায়, সেদিকে নজর রাখার জন্য হয়তো নন্দকুমারকে বেশি দায়িত্ব নিতে হবে। আবার নিশু শু কুমার ভারতীয় দলে জায়গা না পাওয়ায় তিনি দেখিয়ে দিতে চাইছেন, এখনও তাঁর খেলার মধ্যে আলাদা একটা জেদ খেলা করে।
এদিকে হিজাজির পারফরম্যান্সে সেইভাবে খুশি হতে পারলেন না ব্রুজো। গোলরক্ষক দেবজিৎ মজুমদারকে খেলানো হবে কিনা, তা নিয়ে একটা ভাবনা ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রভসুখন গিলের উপরেই ভরসা রাখলেন। আসলে কোচ ঝুঁকি নিতে চাইছেন না প্রতিপক্ষ দল মহমেডান স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে।
আক্রমণভাগে সবচেয়ে ভরসার নাম দিমিত্রিয়াস দিয়ামানতাকোস। তিনি যেমন গোল করতে পারেন, আবার গোল করাতেও জানেন। এমন হতে পারে দিয়ামানতাকোসের সঙ্গে শুরুতেই মাঠে নামবেন ক্লেটন সিলভা ও পি ভি বিষ্ণু। অবশ্যই মহমেডানের বিরুদ্ধে সমীহ করে খেলতে হবে লাল-হলুদের গ্রিক গডকে। খেলার প্রথম থেকেই ইস্টবেঙ্গল চাপ সৃষ্টি করে প্রতিপক্ষ দলের রক্ষণভাগে তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।
আবার মহমেডান স্পোর্টিংয়ের রাশিয়ান কোচ আন্দ্রে চের্নিশভ হুঙ্কার দিয়ে বলেছেন, খেলাটা সহজ নয়। তাই মাঠেই পরিচয় হবে। প্রতিপক্ষ দলকে কোণঠাসা করে দেওয়ার জন্য আমাদের কৌশল পাকা হয়ে রয়েছে। ফুটবলাররাও ফুঁসছেন প্রতিপক্ষ দলকে কীভাবে ঘায়েল করা যাবে। শুধু সময় কথা বলবে। কার্লোস ফ্রাঙ্কা ও সিজার মানজোকি অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারেন। পাশাপাশি তুরুপের তাস হতে পারেন বিকাশ সিং। আবার প্রতিপক্ষ দলের সেরা ফুটবলার দিমিত্রিয়াস দিয়ামানতাকোসকে বোতলবন্দি করে রাখার জন্য জোসেফ আদজেইকে ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই কারণেই ইস্টবেঙ্গল যতই এগিয়ে থাকুক না কেন, চাপের মধ্যে থাকতেই হবে মহমেডান স্পোর্টিংয়ের প্রতিরোধ ও আক্রমণের ঝাপটায়।
এদিকে মহমেডান শিবিরে হঠাৎই নতুন বিতর্ক দেখা দিল। খেলার শেষে আইসবাথ নেওয়ার জন্য খেলোয়াড়রা যখন ছোটাছুটি করছেন, জানা গেল, বরফ সরবরাহকারী সংস্থা প্রচুর অর্থ পায় ক্লাবের কাছে। তাই তাদের পক্ষে আর বরফ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কোচ এই ব্যাপারটি অবশ্য ভালোভাবে নেননি। ডার্বি ম্যাচের আগেই এই সমস্যা তৈরি হওয়াতে মানসিকভাবে কোচ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন। আবার কোচের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ নিজের চাকরি বাঁচানো। তাই ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে যদি ম্যাচ জিততে পারে, তাহলে রাশিয়ান কোচের চাকরি থেকে যাবে।