আসিয়ান কাপ জয়ের পর ইস্টবেঙ্গল এফসি ভাঙতে শুরু করে।আজও ইস্টবেঙ্গল টিম সেই ভাঙ্গন রোধ করতে পারছেনা। ফলে সাফল্যও আসছে না। জাতীয় লিগ, আইলিগ কিংবা এখনকার আইএসএল লিগ ধরলে,সবই দীর্ঘমেয়াদি লিগে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘসময়ের লিগে সাফল্য পেতে গেলে রিজার্ভ বেঞ্চকে শক্তিশালী হতেই হবে। দীর্ঘসময়ের লিগে কার্ড সমস্যা থেকে চোট পাওয়া, সবধরনের প্রতিকূলতা থাকবে।কিন্তু ইস্টবেঙ্গল এফসিকে দলগঠনের সময় ভাবা উচিত যে, মেহেতাব হোসেনের বিকল্প হিসেবে রিজার্ভ বেঞ্চে কে থাকবে। বর্তমান টিমের সৌভিক চক্রবর্তী ও জিকসন সিং এর বিকল্প ফুটবলার কে হবে,তা ইস্টবেঙ্গল এফসিকে আগেভাগে ভাবতে হবে। ইস্টবেঙ্গল এফসি যখন কলকাতা লিগে তাদের রিজার্ভ টিমকে খেলাচ্ছে, সেই টিমের কোন প্লেয়ারটা সৌভিক ও জিকসনদের বিকল্প হবে,তা ঠিক করে নিতে হবে। রিজার্ভ টিমই সিনিয়র টিমের সাপ্লাইলাইন, সেই রিজার্ভ টিম যখন সিএফএল খেলছে, তার প্রতিটি পজিশনের ফুটবলারদের পারফরমেন্সের উপর নজর রাখতে হবে। ইস্টবেঙ্গল এফসির সিনিয়র টিমের কোচকে মাঝেমধ্যেই গ্যালারিতে বসে রিজার্ভ টিমের প্র্যাকটিস দেখে প্লেয়ারদের নোট করে নেওয়া দরকার। প্র্যাকটিস ও প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ মিলিয়ে নিয়ে সঠিকভাবে রিজার্ভ বেঞ্চ তৈরি করতে পারলে সাফল্য আসবে। এসব অনেক ক্যালকুলেশনের বিষয় আছে। একটা উদাহরণ দেওয়া যায়। কলকাতার লিগ থেকে পিভি বিষ্ণুকে পাওয়া গেল।পিভি ইস্টবেঙ্গল সিনিয়র টিমের নাওরেম মহেশের বিকল্প হতে পারে। কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল টিমের অন্য পজিশনের নির্দিষ্ট ফুটবলারের অভাবে নাওরেম মহেশকে সেই জায়গায় ব্যবহার করতে হচ্ছে। ফলে নাওরেম মহেশ ও পিভি বিষ্ণুকে নিয়ে কোচের নির্দিষ্ট প্ল্যান খাটছেনা।
দ্বিতীয়তঃ ইস্ট বেঙ্গল টিমের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে যেকোন প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া। টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে রিজার্ভ টিমের পাশাপাশি ড্রেসিংরুমের আবহাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ড্রেসিংরুমের টেবিলে সবাই মিলে টিমের বর্তমান পরিস্থিতি এবং তাতে প্লেয়ারদের কাকে কি ভূমিকা নিতে হবে,তা নিয়ে আলোচনা দরকার হয়। সমর্থক বেষ্টিত ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের চাহিদা কি,তা লোকাল প্লেয়াররা ভালো বুঝতে পারে। ইস্টবেঙ্গল দলের নেতৃত্ব দেওয়ার মতো লোকাল ফুটবলারের অভাব হয়ে গেছে। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের মতো ঐতিহ্যের টিমে খেলতে গেলে, আসলাম ও খেললাম এবং ম্যাচ শেষে বাড়ি চলে গেলাম— এই মনোভাব নিয়ে চললে হবেনা। ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ড্রেসিংরুমে কোচ, কোচিং স্টাফ, কর্মকর্তা ও ফুটবলারদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ কম্বিনেশনের প্রয়োজন হয়। নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে বলতে পারি,সুভাষ ভৌমিক কোচ থাকাকালীন আমি ৮মাস দলের প্রথম একাদশে ছিলামনা। কিন্তু মাঠের বাইরে বসে টিমের খেলার দোষত্রুটি কি দেখছি, তা কিন্তু কোচ সুভাষ ভৌমিক আমার কাছ থেকে জানতে চাইতেন। বলতে দ্বিধা নেই, এখনকার প্লেয়াররা নিজেদের খুব পেশাদার ফুটবলার হিসেবে মনে করেন। কিন্তু ক্লাবের প্রতি ফিলিংস কম আছে। ইস্টবেঙ্গলের মতন ক্লাবে খেলে সাফল্য আনতে গেলে, আলাদা ফিলিংসের দরকার হয়।ক্লাবের বাইরে সমর্থকদের অনুভূতিটা সবসময় মাথায় রাখতে হবে।
তৃতীয়তঃ চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে দলগঠনে বিদেশি ফুটবলার ও ভারতীয় ফুটবলারদের কম্বিনেশন ভালো হওয়া উচিত। প্রতিভাবান জুনিয়র ফুটবলারদের টিমে নিতে হবে। বিদেশি ফুটবলার চয়েসের ক্ষেত্রে আগের মরশুমে সে কটা গোল করেছে ও কত ভালো খেলেছে তা দেখার পাশাপাশি, বর্তমান সময় সেই ফুটবলার কতটা ফিট আছে অর্থাৎ চোটআঘাত কোন জায়গায়— তা দেখে নিয়ে টিমে সই করাতে হবে। ভারতের আবহাওয়াতে আফ্রিকার যুব ফুটবলারদের বেছে নেওয়া টিমের ভালো হতে পারে। মরশুম চলাকালীন পরের মরশুমে নিজেদের ঘাটতি পূরণে কোন কোন ফুটবলারদের টার্গেট করা উচিত,তা টিমের মধ্যে ভিডিও এনালিটিক্সের কাছ থেকে লিস্ট নিয়ে টিমগঠধ করা দরকার।
চ্যাম্পিয়ন হতে গেলে ভাগ্যের সহায়তা খুব দরকার। কিন্তু টিম পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিটা মুহূর্ত নিজেদেরকে সতর্কতার মধ্যে রাখতে হবে। কেবল ভাগ্যের উপর নির্ভর করলে চলবেনা। এখন লিগে একাধিক শক্তিশালী ক্লাব উঠে এসেছে। প্রত্যেকেই আধুনিক ফুটবলের ধ্যানধারণা টিমে প্রয়োগ করে চলেছে। টিমের সাফল্য পেতে তাই স্পন্সর ও ক্লাব ম্যানেজমেন্টের সাথে সুসম্পর্ক থাকা দরকার। প্রতিনিয়ত নানা বিষয়ের আলোচনার প্রয়োজন হয়। একাধিক প্রাক্তন ফুটবলারদের ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত করে তাদের পরামর্শ নেওয়াও দরকার। বর্তমান কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে ক্লাবের সাথে যুক্ত আছেন। স্বাভাবিকভাবে ক্লাব কর্তাদের সাথে প্রাক্তন ফুটবলারদের সম্পর্ক যথেষ্ট ভালো। দলের স্বার্থে এই সম্পর্কটাকে ব্যবহার করতে হবে। কারুর দোষ ধরা নয়,টিমের গলদ কোথায় ও ভুল কোথায় হচ্ছে, তা খুঁজে বের করে সংশোধন করলেই টিমের সাফল্য আসবে।