চলে গেলেন ফুটবলের রাজপুত্র দিয়েগাে আর্মান্দো মারাদোনা। কয়েকদিন আগেও হাসপাতালে ছিলেন তিনি। চিকিৎসকরা তাকে রেখেছিলেন পর্যবেক্ষণে। কিন্তু কেউ ভাবতে পারেননি আচমকাই চলে যাবেন তিনি। আসলে মারদোনা মনে হয় এমনই এক চরিত্র।
তিনি কখন কি করবেন, বােঝা খুব মুশকিল। মৃত্যুর শেষদিন পর্যন্তই তিনি গােটা পৃথিবীর কাছে একরকম অজানা-অচেনাই থেকে গেলেন। ৬০ বছর বয়সে প্রয়াত হলেন ফুটবলের ঈশ্বর। হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তার।
যতদূর জানা গিয়েছে, ফুটবলের রাজপুত্রের মস্তিষ্কে হয়েছিল অস্ত্রোপচার। তা সফলও হয়েছিল। ফিরে গিয়েছিলেন নিজের বাড়িতে। কিন্তু বাড়ি ফেরার পর আচমকাই তিনি চলে গেলেন চির ঘুমের দেশে।
মারাদোনা নেই, এটা কেউ ভাবতেই পারছেন না। গােটা বিশ্বকে যিনি ফুটবলের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন তার ৬০ বছর বয়সে চলে যাওয়াটা মানতে পারছেন না কেউ। মারাদোনা যে সত্যি নেই, এই খবর লিখতে গিয়ে রীতিমত হাত কাপছে যারা দিনের পর দিন ফুটবল নিয়ে ম্যাচ কভার করেছেন।
বুধবার রাতে তার মৃত্যুর খবর সংবাদমাধ্যমের সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে এই দুঃসংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে গােটা বিশ্বজুড়ে। তিনি ছিলেন ফুটবলের ঈশ্বর। তার পায়ের জাদুতে মুগ্ধ হয়েছে গােটা বিশ্ব। শুধু ফুটবলার নয়, তিনি কোচ হিসেবে নিজেকে উজাড় করে দিয়েছিলেন।
এই কিংবদন্তী ফুটবলার গত কয়েকমাস ধরে অসুস্থ ছিলেন। নিজের ৬০ তম জন্মদিন পালন করার কয়েকদিন পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তড়িঘড়ি তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রথমে জানা গিয়েছিল, মারাদোনা হৃদরােগে আক্রান্ত হয়েছেন।
করােনার প্রভাবও তার শরীরে। কিন্তু পরে জানা যায়, এসব গুজব। তার চিকিৎসক লিপপালদো লুকি জানিয়েছিলেন, এই ফুটবলারের শরীরে করােনার কোনও লক্ষণ নেই। হৃদরােগে আক্রান্তও হননি। অসুস্থতাও ততটা গুরুতর নয়। কিন্তু মানসিক সমস্যায় তিনি ভুগছিলেন, সেই সঙ্গে গ্রাস করেছিল অবসাদ। যার প্রভাব পড়েছিল দেহ ও মনে। এরপর মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। সে কারণে হয় অস্ত্রোপচার। তার স্বাস্থ্য নিয়ে গােটা বিশ্বের ফুটবল মহল উদ্বেগে ছিল।
লা-প্লাতার হাসপাতালের বাইরে রােজ তার অনুগামীরা জড়াে হতে মারাদোনার মঙ্গল কামনায়। নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে হাসপাতাল থেকে রিহ্যাব সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। অতিরিক্ত মদ্যপানের জন্যই তাকে রিহাব সেন্টারে রাখা হয়েছিল। রিহাব থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন বলে জানা যাচ্ছে।
কিন্তু এরই মধ্যে এলাে দুঃসংবাদ। বিশ্বফুটবলে ঘটল নক্ষত্রপতন। ১৯৮২ ও ১৯৮৬ বিশ্বকাপজয়ী এই বর্ণময় চরিত্রের ফুটবলার আর নেই। তার মৃত্যুর পরও এখবর বিশ্বাস করতে পারছেন না কেউই। বিশ্ব ফুটবলকে শূন্য করে তিনি পাড়ি দিলেন দূর দেশে। একের পর এক পালক যােগ হয়েছে মারাদোনার মুকুটে।
যদিও ১৯৯১ সালে কোকেন নেওয়ার অপরাধে তিনি ১৫ মাসের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৪ সালে ড্রাগ টেস্টে ফেল করে বিশ্বকাপ থেকেও তাকে বিদায় নিতে হয়। ১৯৯৭ সালে তিনি অবসর ঘােষণা করেন। ১৯৯৯ এবং ২০০০ সালে হৃদরােগ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল তাকে। এর আগে ২০০৪ সালে মারাত্মক অসুস্থ হয়েছিলেন তিনি।