বৃহস্পতিবার ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লেজেন্ড ব্রায়ান লারা পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, ‘বিরাট কোহলি হচ্ছেন রানমেশিন। বিরাটের সঙ্গে এখনকার বাকি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে’।
বিরাট কোহলির প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্যারিবিয়ান লেজেন্ড। ভারতীয় অধিনায়ক ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাটেই নিজের সেরা খেলাটা মেলে ধরে সকলের নজর কেড়েছেন। লারা মনে করেন, ‘বিরাটের দৌরাত্ম রয়েছে প্রচুর। আরাে অধিক রান করবে বিরাট। পাশাপাশি ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাটে খেলার যে ভঙ্গি রয়েছে বিরাটের তা আর বিশ্বের অন্য কোন ব্যাটসম্যানের মধ্যে আমার চোখে পড়ে না। তাই আমি আবারও বলছি বিরাটের সঙ্গে বাকি ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে’।
লারার চোখে তবে ভারতীয় ক্রিকেট ভগবান শচীন তেন্ডুলকরই সেরা। কিন্তু বর্তমানে ক্রিকেটের ভিত্তিতে কোহলি তাঁর মন জুড়ে রয়েছে। লারাকে প্রশ্ন করা হয় আচ্ছা আপনার চোখে কে সেরা ব্যাটসম্যান? উত্তরে তিনি বলেন, ‘বিরাট কোহলি এককথায় রানমেশিন। কিন্তু, ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এই কথাটা বলার জন্য, আমার চোখে শচীন সেরা ছিল আর থাকবে আর সেরা ব্যাটসম্যান হিসাবে সবসময় তিনি আমার পছন্দের তালিকায় প্রথমে থাকবেন।
বৃহস্পতিবার এখানকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট সম্মান গ্রহণের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রায়ান লারা। এরপর লারা বলেন, ‘দেখুন চলতি বিশ্বকাপের আসরে আমরা রােহিতের ব্যাট থেকে চারটি শতরান দেখতে পেরেছি, এছাড়া জনি বেয়ারস্ট্রোর ব্যাট থেকেও রােহিতের মতন পর পর দুটি শতরান এসেছে। কিন্তু দেখুন বিরাট কোহলিকে আমি সকলের থেকে আলাদা বলছি একটাই কারণে সেটা বিরাট এমন একজন ব্যাটসম্যান যিনি শুধু একদিনের ক্রিকেটের ফরম্যাটে নয়, টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফরম্যাটেও নিজের সেরা খেলাটা মেলে ধরেন। আর ক্রিকেট অনুরাগীরা প্রত্যেকে একটা ফরম্যাটে খেলা দেখে তাঁর প্রেমে পড়ে না। ক্রিকেটের তিনটি ফরম্যাটে সেই ক্রিকেটারটি কেমন পারফরমেন্স করে দেখাচ্ছে সেটা তারা দেখেন। আর আমরাও সেটার উপর ভর করেই মন্তব্য করি। আমি বিরাটের মধ্যে সেই খেলাটা দেখেছি আর ও প্রতিটা ফরম্যাটে রান করার জন্য ক্ষুধার্ত থাকে, এই রকম রানের ক্ষুধার্ত আমার চোখে এখনাে কোনও ব্যাটসম্যানের মধ্যে দেখতে পাইনি, তাই আমি বারবার বলছি বিরাটের সঙ্গে এখনকার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে’।
লারা আরাে বলেন, ‘আমার চোখে শচীন সবসময় সেরা ব্যাটসম্যান আছে আর থাকবে সেটা আমি বলছি একটাই কারণে একটা সময় কথার চল উঠেছিল ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা নাকি ঘরের মাঠে শুধু খেলতে পারে এছাড়া বিদেশের মাটিতে গিয়ে তাঁরা তাদের সেরা খেলাটা মেলে ধরতে পারে না। বারবারই তাঁরা ব্যর্থতার মুখে পড়ে। কিন্তু শচীন সেটা একা ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছিলেন তাঁরা যেকোনাে অবস্থায় যেকোনাে পরিস্থিতিতে নিজেদের সেরা খেলাটা মেলে ধরতে পারে। তাই শচীন আমার প্রিয় ছিলেন আর থাকবে। তবে হ্যা, শচীনের মধ্যে যেরকম উন্মাদনাটা দেখতাম যেকোনাে পিচে রান করার সেটা ঘরের মাঠ হােক বা বিদেশের মাঠ সেটা আমি বিরাটের মধ্যে দেখতে পাই’।
এদিকে নিজেদের দেশের বিশ্বকাপের আসর থেকে ছিটকে যাওয়ার ব্যাপারে বলতে গিয়ে লারা বলেন, ‘আমরা শুরুটা ভালাে করেছিলাম। কিন্তু শেষটা ঠিকভাবে করতে পারলাম না। একটা সময় আমাদের দলকে এবারে ডাকহর্স হিসাবে ধরা হয়েছিল। আমরা বাকি দলগুলাের উপর সেই চাপটা প্রথম থেকে ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু শেষ কয়েকটা ম্যাচে আমরা খুবই কোণঠাসা হয়ে হার স্বীকার করেছি আর কোণঠাসা হয়ে পড়ায় আমারা প্রতিযােগিতা থেকে ছিটকে গিয়েছে। তবে দলের ক্রিকেটাররা ভালাে পারফরমেন্স করে দেখিয়েছে সেটা আমি চোখ বন্ধ করে বলে দিতে পারি। তবে, হ্যাঁ প্রতিটা খেলায় ওঠা-পড়া লেগেই থাকে সেটা ভেবে লাভ নেই। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে, যেখানে যেখানে ভুলত্রুটি রয়েছে সেগুলাে পুরােপুরি শুধরে নিয়ে আগামিদিনে যাতে ভালাে করে নিজেদের মেলে ধরতে পারে এবং আমাদের দেশের ক্রিকেট গৌরবকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে বর্তমান ক্রিকেটাররা আমি সেটাই চাইব। আর আশা করছি দলে যেসব ক্রিকেটাররা উঠে এসেছে। ভবিষ্যতে তাঁরা উন্নতি করবে’।