জয়পুর— চার ম্যাচে তিনটি হার৷ এমন ট্র্যাক রেকর্ড নিয়ে শনিবার জয়পুরে আবার খেলতে নামছে বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু (আরসিবি)৷ অন্যদিকে রাজস্থান রয়্যালস তিন ম্যাচের তিনটি জিতে লিগ টেবিলে কেকেআরের থেকে রান রেটে পিছিয়ে পডে় দুনম্বরে আছে৷ তা হলে এটা কি অসম লড়াই হবে! এবার কি রাজস্থান চারে চার করে প্লে অফে যাওয়ার রাস্তা সহজ করে নেবে!
এমন অনেক প্রশ্ন উঠে আসছে৷ আসাটাই স্বাভাবিক৷ আরসিবি এভাবে খেলতে থাকলে হয়তো তাদের ফ্যানরা খেলা বয়কট করতে পারেন৷ মেয়েরা প্রিমিয়ার লিগ জেতার পর অনেকে বলেছিলেন এবার নতুন ইতিহাস লিখবে আরসিবি৷ মেয়েদের পর ছেলেরা আইপিএল জিতবে৷ কিন্ত্ত কোথায় কি! এত হোঁচট খেলে কোনও দল সামনের দিকে তাকিয়ে চলতে পারে৷ এক পা ফেললে তারা দুই পা পিছন ফিরে তাকায়৷ কোথায় ভুল হচ্ছে, এসব দেখতে দেখতে সব গোলমাল হয়ে যাচ্ছে৷ তারকা ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার কারনে আরসিবি চারটির মধ্যে তিনটিতে হেরে বসেছে৷
এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার উপায় কি! দলের অধিনায়ক ফাফ ডুপ্লেসি বলছেন, দলের দুজনকে বড় রান করতে হবে৷ একটা বড় পার্টনারশিপ দরকার৷ তা হলে দল আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারবে৷ ফাফ বলছেন বটে, কিন্ত্ত তিনি নিজেই তো রান করতে পারছেন না৷ গত আইপিএলে দারুন পারফর্ম করেছিলেন তিনি৷ তার সঙ্গে বিরাটের যোগসঙ্গীতে আরসিবি ভাল জায়গায় ছিল৷ কিন্ত্ত এবার শুরু থেকে শুধু ফাফ নন, ম্যাক্সওয়েল, গ্রিন, পাতিদাররা রান করতে পারছেন না৷ বিরাট চার ম্যাচ খেলে ২০৩ রান করেছেন৷ ব্যাটিং গড় ৬৭৷ তারপর রয়েছেন দীনেশ কার্তিক৷ তবে তিনি করেছেন ৯০ রান৷ ফারাকটা এর থেকে পরিস্কার৷ এই জায়গা থেকে আরসিবিকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে৷ না হলে ভাল কিছু আশা করা অন্যায় হবে৷
দলের এই হালের মাঝে দাঁডি়য়ে বিরাটকে আরও চাপ ফেলে দিয়েছে নির্বাচকদের আগাম ভাবনা৷ তিনি নাকি স্ট্রাইক রেট ঠিক রেখে খেলেন না৷ ১৩০-১৪০ স্ট্রাইক রেট নিয়ে খেললে দলের রান এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না৷ আজকের জুনিয়ররা ২০০-র উপর স্ট্রাইক রেট করে খেলছেন৷ সেখানে বিরাট যদি এভাবে ব্যাট করে, তা হলে দলের রান আসবে কোথা থেকে! এই প্রশ্ন আজকের নির্বাচকরা তুলছেন বলে বিরাট চাপে পডে় যাচ্ছেন৷ শুধু রান করলেই হবে না, তাঁকে এই দিকটায় নজর রাখতে হবে৷ গত বছরের শেষ দিকে ভারতের দক্ষিন আফ্রিকা সফরে নির্বাচকরা এ নিয়ে বিরাটের সঙ্গে এক প্রস্থ কথাও বলেছেন৷ তাই কি ঘরের মাঠে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে স্ট্রাইক রেট দেখে খেলতে গিয়ে বড় রান আসেনি বিরাটের ব্যাট থেকে৷ সেই সিরিজের পর ভারত তো টি২০ খেলল কোথায়! তাই আইপিএলে এই ঘটনাগুলিও চাপে ফেলেছে বিরাটকে৷
তাঁর কাছের মানুষরা বলছেন এই সব স্ট্রাইক রেট দেখে খেলার দরকার নেই৷ উইকেটে থেকে রান কর৷ তা হলে এক সঙ্গে দুটি কাজ হবে৷ তুমি বড় রান পাবে, সঙ্গে আরসিবি ভাল জায়গায় থাকবে৷ এটাই এখন দরকার৷ বিরাট যদি শুরুতে এসে কুডি় ওভারের ব্যাট করতে পারেন, তা হলে বলা যায় না তিনি সেঞ্চুরিও পেয়ে যেতে পারেন৷ এমন কথাই শোনাচ্ছেন বন্ধু ডিভিলিয়ার্স৷ জয়পুরে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নামলে ১৮০ করতে পারলে হয়ে যাবে৷ ১৬০ বা ১৭০ হলে চাপ হয়ে যাবে৷ কিন্ত্ত ১৮০ রানের উপর করতে পারলে জয় নিয়ে বেশি ভাবনার কিছু নেই৷ এই রান নিয়ে বোলাররা প্রতিপক্ষকে থামাতে না পারলে খেলার কি দরকার আছে৷
রাজস্থান রয়্যালসের এখন নায়ক রিয়ান পরাগ৷ তিনি বলতে গেলে একার হাতে দলকে টানছেন৷ প্রথম ম্যাচে স্যামসন রান পেয়েছিলেন৷ কিন্ত্ত তারপর শেষ দুটি ম্যাচে রিয়ান একা লডে় গেলেন৷ তাঁর ব্যাটের উপর ভর করে রাজস্থান ম্যাচ জিতেছে৷ তাদের সমস্যা ওপেনিংয়ে রান নেই৷ রান পাচ্ছেন না যশ্বসী জয়সওয়াল৷ তিন ম্যাচে করেছেন ৩৯৷ রান নেই তাঁর সঙ্গী বাটলারেরও৷ তিনি শেষ ছটি আইপিএলে সব থেকে বেশি রান করেছেন ১৩৷ এর পাশাপাশি মিডল অর্ডারে ব্যাটসম্যানরা চাপে পডে় আটকে যাচ্ছেন৷
এমন দলের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে বেশি ভাবনার দরকার নেই৷ ফাফ, বিরাট, ম্যাক্স, গ্রিন, পাতিদারদের মধ্যে তিন জন রান করে দিতে পারলে রাজস্থান সহজে যুদ্ধ জয় করতে পারবে না৷
আরসিবি-র আরও একটা সমস্যা ব্যাটিংয়ের পাশে বোলিংও ক্লিক করছে না৷ যা রাজস্থানকে ভরসা দিচ্ছে৷ বোল্ট শুরুটা ভাল করে দিচ্ছেন৷ স্পিনে অশ্বিনের থেকে বেশি সাফল্য পাচ্ছেন চাহাল৷ তাই ব্যাটিংয়ে কিছু ঘাটতি হলেও বোলাররা তা পুযিয়ে দিচ্ছেন৷ আরসিবি তো এই জায়গায় মার খাচ্ছে৷ তাই ব্যাটে বড় রান করে ম্যাচ জয়ের দিকে তাকাতে হবে আরসিবিকে৷