• facebook
  • twitter
Sunday, 24 November, 2024

আগ্রাসী কোহলিকে নতুন করে পাওয়ার কাহিনি পার্থে

কখনও স্ট্রেট ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, পুল, হুক আর স্টেপ আউটে কোহলির বাহাদুরি স্পষ্ট হয়েচ উঠল। বিরাটের শতরান হতেই অধিনায়রক যশপ্রীত বুমরা দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে।

ফাইল চিত্র

পার্থের মাঠে একশো রান করার পরেই হেলমেটটা খুলে বালক সুলভ হাসিতে বিরাট কোহলিকে নতুন করে পাওয়ার ছবিটা ভেসে উঠল সবার মনে। দীর্ঘ ষোলোটা মাস অব্যক্ত একটা যন্ত্রণা বিরাটকে বারবার পিছিয়ে দিচ্ছিল। নিজেকে ফিরে পাওয়ার চেষ্টায় হারিয়ে যাচ্ছিলেন। সমালোচনার সামনে বারবার মুখোমুখি হতে হয়েছিল বিরাট কোহলিকে। বিদ্রুপের তিরে বিদ্ধ হতে হয়েছে। তবুও লড়াই থেকে সরে দাঁড়াননি। লড়াই করে ফিরে আসার তাগিদে আরও জেদ কথা বলেছে। ক্রিকেট যুদ্ধে কখনই হার মানতে রাজি নন বিরাট কোহলি। আহত বাঘের গর্জন যেমন সবাইকে ভয় পাইয়ে দেয়, ঠিক তেমনই অস্ট্রেলিয়া সফরে পার্থের মাঠে বিরাট কোহিলির ব্যাট ঝলসে উঠল আগুনের মতো। এতোদিন হয়তো গুমরে গুমরে চোখের জল ফেলেছিলেন বিরাট কোহলি। সেই কোহলি রবিবার ভারতের স্কোর বোর্ডে যখন একশো রান যোগ করলেন-তখন মধুর হাসিতে উচ্ছ্বাসে দু’হাত ছুঁড়ে দিয়েছিলেন আকাশে। আর হাসিতে ফুঁটে উঠেছিল বিরাট স্বস্তি। সমালোচনার জবাব দিতে বিরাট কোহলির সাহসী মেজাজটা প্রত্যক্ষ করা গেল। একটা বাউন্ডারি মেরে একশো রান স্পর্শ করার পরেই বিরাট কোহলি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে কিছু একটা বলতে চেষ্টা করেছিলেন। নতুন কাহিনির নায়ক হলেন দুরন্ত ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি।

দীর্ঘদিন ধরে বিরাটের চওড়া ব্যাটে সেই অর্থে রান ছিল উধাও। মানসিকভাবে নিজেকে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। সবার প্রত্যাশাকে সার্থক রূপ দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তবুও মাঠ থেকে সরে দাঁড়াননি। কোথায় যেন ভরসার কথা শুনিয়েছেন। জেদি বিরাট কোহলি সহজে হার মানতে রাজি হন না কোনওদিন। এমনকী যাঁরা বড় গলায় বলতে শুরু করেছিলেন, এবারে কোহলিকে অবসর নেওয়ার কথা ভাবতে হবে। সেই ভাবনাকে সপাটে মাঠের বাইরে উড়িয়ে দিয়ে হয়তো বললেন, আমি সেই ক্রিকেট সৈনিক লড়াই করে জিততে জানে। তাই বিরাট নিজের পরিচয়ে নতুন কাহিনির নায়ক হয়ে উঠতে জানেন। যে বিরাট ২০১৮ সালে অস্টেলিয়া সফর শুরু করেছিলেন পার্থে। সেই সময়ে বিরাট কোহলির নামের পাশে ১২৩ রানের ইনিংস ছিল আর ৬ বছর বাদে সেই পার্থের মাঠে কিং কোহলির ব্যাটে লেখা হল একশো রান। এ এক অসাধারণ কাহিনি বিন্যাস।

যে বিরাট কোহলি, ২০২৩ সালে পোর্ট অফ স্পেনে এসেছিল শেষ শতরান। সেই ১২৩ রানের পরে তিনি হারিয়ে গিয়েছিলেন। শতরানে দিশা কিছুতেই কোহলির ব্যাট খুঁজে পাচ্ছিল না। তবুও নিজেকে ধরে রেখে আলোর সন্ধানে ছুটে বেড়িয়েছেন। সেই ইচ্ছাপূরণ হল বিরাটের পার্থের মাঠে। ডন ব্র্যাডম্যানের দেশে ভারতীয় হিসেবে সবচেয়ে বেশি শতরান করার মালিক ছিলেন শচীন তেন্ডুলকর। শচীনের হাফ ডজন শতরানকে টপকে অস্ট্রেলিয়ায় নতুন মালিক হলেন বিরাট কোহলি। কোহলির ব্যাট থেকে এলো সাতটি শতরান। আর নতুন করে পার্থের মাঠে ৩৭ বছরের তরুণ ক্রিকেটার বিরাট কোহলির ঝলক দেখে সবাই অবাক হয়ে গেলেন। কখনও স্ট্রেট ড্রাইভ, স্কোয়ার কাট, পুল, হুক আর স্টেপ আউটে কোহলির বাহাদুরি স্পষ্ট হয়েচ উঠল। বিরাটের শতরান হতেই অধিনায়রক যশপ্রীত বুমরা দ্বিতীয় ইনিংস ডিক্লেয়ার করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সকে।

আসলে বিরাট কোহলি সব সময় দলের জন্যে খেলে থাকেন। দলের সাফল্যের বড় ভূমিকা নিতে বিরাটের চরিত্র সব সময় কথা বলে থাকে। বিরাট যেভাবে অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের শাসন করেছেন তা দেখার মতন। সব ফর্ম্যাট মিলে ৮১তম শতরান করে সর্বকালীন ইতিহাস গড়লেন বিরাট কোহলি। তাই আগ্রাসী কোহলি নতুন বাহিনির নায়ক হয়ে উঠলেন। সাবাস-সাবাস বিরাট কোহলি।