টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে রোহিতের উপরই ভরসা রাখলেন নির্বাচকরা

রিঙ্কু ও শুভমন বাদ, অনেকেই অবাক

পূর্ণেন্দু চক্রবর্তী

আইপিএল ক্রিকেট চলাকালীন আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেওয়ার জন্য ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের নাম ঘোষণা করা হল৷ বিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে ২ মে’র মধ্যেই অংশগ্রহণকারী দলগুলির খেলোয়াড়দের নাম জানিয়ে দিতে হবে আয়োজক দেশের কাছে৷ অনেকে ভেবেছিলেন, হয়তো বুধবার ভারতীয় দলের খেলোয়াড়দের নাম ঘোষণা করা হবে৷ তাই মঙ্গলবার নির্বাচকদের সঙ্গে আলোচনার পরে বিসিসিআইয়ের কর্মকর্তারা সাংবাদিক বৈঠকে ক্রিকেটারদের নাম ঘোষণা করবেন৷ কিন্ত্ত তার আগেই অর্থাৎ মঙ্গলবার ক্রিকেটারদের বাছাই করে ভারতীয় দল ঘোষণা করা হল৷ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দেবেন মুম্বইয়ের তারকা ক্রিকেটার রোহিত শর্মা৷ রোহিত গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ভারতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন৷ অবশ্য ফাইনালে ভারতীয় দলকে হারতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার কাছে৷ সেই সময় অনেকেই আশা করেছিলেন, ভারতের মাটিতে যখন খেলা হচ্ছে, তখন রোহিত শর্মার ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন হবে৷ এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০১১ সালে দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ধোনির নেতৃত্বে ভারতীয় দল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল৷ সেই রেকর্ড ভাঙতে পারেননি রোহিত ব্রিগেড৷


টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলের অধিনায়কের পছন্দের তালিকায় প্রথম থেকেই রোহিত শর্মার নামটা বার বার উঠে এসেছে৷ তার ব্যতিক্রম হল না৷ অনেকেই ভেবেছিলেন, যদি রোহিত শর্মা অধিনায়ক হন, সেক্ষেত্রে সহ-অধিনায়ক হিসেবে সূর্যকুমার যাদবকে দেখতে পাওয়া যাবে৷ কিন্ত্ত নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য্যরা সহ অধিনায়ক হিসেবে হার্দিক পাণ্ডিয়ার উপরেই আস্থা রাখলেন৷ আবার অনেকেই ভেবেছিলেন, এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিরাট কোহলি কি খেলবেন? বিরাট কোহলি নিজেই সেই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দিয়েছেন আইপিএল ক্রিকেটে৷ তাঁর ব্যাট থেকে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি রান এসেছে৷ হয়তো সেই কারণেই বিরাট ছাড়া অন্য কারওর উপরে ভরসা রাখা সম্ভব হয়নি নির্বাচকদের৷ বিরাট কোহলি ওপেন না করলেও তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলি মাঠে নামবেন, এতে কোনও ব্যতিক্রম হবে না৷ যশস্বী জয়সওয়াল ও রোহিত শর্মাই ওপেন করবেন, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ সূর্যকুমার যাদব এবং ঋষভ পন্থের মধ্যে অবশ্যই একটা ব্যতিক্রমী সিদ্ধান্ত আসতে পারে৷ প্রথম উইকেট পড়ে গেলে সেখানে সূর্যকুমার যাদবকেই ব্যাট হাতে দেখতে পাওয়া যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি৷ তারপরেই বিরাট কোহলি তাঁর নিজের জায়গা ছাড়বেন না, এটা নতুন করে বলার কোনও জায়গা নেই৷ উইকেট রক্ষক হিসেবে আস্থা রাখা হল ঋষভ পন্থের উপরেই৷ ঋষভ পন্থ দীর্ঘদিন চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন৷ তিনি আবার আইপিএল ক্রিকেটে ফিরে আসার পরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন৷ তাঁর ব্যাট থেকে ভালোই রান আসছে, তা নতুন করে বলার প্রয়োজন হয় না৷ তবে দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে সঞ্জু স্যামসনকে নিয়ে আসা হয়েছে দলে৷ অবশ্য সঞ্জু আইপিএল ক্রিকেটে খুব একটা খারাপ খেলছেন না৷ তরুণ প্রতিভা যশস্বী জয়সওয়ালের উপরে অবশ্যই অনেক কিছু নির্ভর করবে৷ যশস্বীর ব্যাট থেকে প্রচুর রান এসেছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের মাটিতে খেলার সময়৷ তরুণ প্রতিভাদের মধ্যে জায়গা পেয়েছেন শিবম দুবে, আরশদীপ সিং ও অক্ষর প্যাটেল৷ অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সঙ্গে তরুণ প্রতিভাদের সংযোজন করে নির্বাচকরা চমক দেওয়ার চেষ্টা করেছেন৷
বোলার হিসেবে রবীন্দ্র জাদেজাকে প্রথম পছন্দের তালিকায় রাখা হয়েছে৷ রবীন্দ্র জাদেজা শুধু বোলার নয়, অলরাউন্ডার হিসেবেও অনেক খেলার চরিত্র বদলে দিয়েছেন৷ পাশাপাশি, কুলদীপ যাদব যখন-তখন ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে জানেন৷ এঁদের পাশে যশপ্রীত বুমরা ও যুজবেন্দ্র চাহালকে অবশ্যই অন্যভাবে দেখতে হবে৷ অনেক খেলাতেই বুমরার হাতের ভেলকিতে জয়ের হাসি হেসেছে দল৷ দ্রুতগামী বোলার হিসেবে মহম্মদ সিরাজ ভারতীয় দলের একজন নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়৷

বিশ্বকাপ ক্রিকেটে ১৫ জনের বাইরে চারজন খেলোয়াড়কে রিজার্ভ হিসেবে রাখা হয়েছে৷ এঁদের মধ্যে রয়েছেন রিঙ্কু সিং, শুভমন গিল, খলিল আহমেদ ও আবেশ খান৷ রিঙ্কু সিং দলে জায়গা পাননি, এই দেখে অনেকেই হতাশ হয়েছেন৷ আইপিএল ক্রিকেটে কেকেআর দলের হয়ে রিঙ্কু এখন খেলছেন৷ যখন রিঙ্কুকে তৃতীয় বা চতুর্থ স্থানে নামানো হচ্ছিল না, হয়তো তখনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল রিঙ্কু হয়তো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দলে জায়গা পাবেন না৷ সেই ভাবনাই সত্যি হল৷ তারপরে কলকাতা ও দিল্লির ম্যাচে ইডেন উদ্যানে তৃতীয় উইকেটে যখন মাঠে নামলেন, তখন রিঙ্কুর ব্যাট থেকে কোনও বড় রানের অঙ্ক আসেনি৷ এমনকি পাঞ্জাবের ম্যাচেও শেষের দিকে নেমে তাঁর ব্যাট থেকে মাত্র ৬ রান এসেছিল৷ সব মিলিয়ে বলতে পারা যায়, হয়তো এইসব ঘটনাই রিঙ্কুকে পিছিয়ে পড়তে হল৷ আবার গুজরাতের শুভমন গিলেরও জায়গা হল না৷ দিল্লির খলিল আহমেদ ও রাজস্থানের আবেশ খান মূল দলে নেই৷ রিজার্ভ বেঞ্চে থাকার অর্থ কোনও খেলোয়াড়ের চোট বা অন্য কোনও কারণে খেলতে না পারেন, তখন তার পরিবর্ত হিসেবে ডাকা হতে মূল দলে৷ তাই এই মুহূর্তে তাঁরা ব্রাত্যই থেকে গেলেন৷ ভারতীয় দল গঠনে আইপিএল ক্রিকেটকে প্রাধান্য দেওয়া হয় বলে যতই চিৎকার করা হোক না কেন আসলে সেইভাবে কাউকেই বিচার করা হয়নি৷ আইপিএলের দশটি দলের মধ্যে চারটি দলের কোনও ক্রিকেটার ভারতীয় দলে জায়গা পাননি৷ তার মধ্যে রয়েছে কলকাতা নাইটরাইডার্স৷ মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের চারজন খেলোয়াড় বিশ্বকাপে জায়গা পেয়েছেন৷ তার মধ্যে অধিনায়ক ও সহঅধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন মুম্বই দল থেকে৷ এবাদেও রয়েছেন সূর্যকুমার যাদব ও যশপ্রীত বুমরা৷ দিল্লি ক্যাপিটালসের হয়ে তিনজন ক্রিকেটার ভারতীয় দলে এসেছেন৷ তাঁরা হলেন ঋষভ পন্থ, কুলদীপ যাদব ও অক্ষর প্যাটেল৷ রাজস্থান রয়্যালসেরও তিনজন ক্রিকেটার ভারতীয় মূল দলে জায়গা করে নিয়েছেন৷ এঁরা হলেন যশস্বী জয়সওয়াল, সঞ্জু স্যামসন ও যুজবেন্দ্র চাহাল৷ চেন্নাই সুপার কিংসের রবীন্দ্র জাদেজা, শিবম দুবে যেমন জায়গা পেয়েছেন, তেমনই রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে ভারতীয় দলে এসেছেন বিরাট কোহলি ও মহম্মদ সিরাজ৷ পাঞ্জাব কিংসের আরশদীপ সিং টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে আমেরিকায় উড়ে যাবেন৷ কেকেআর ছাড়া গুজরাট টাইটানস, লখনউ সুপার জায়ান্টস ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদ দলের কোনও খেলোয়াড় এবারে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে জায়গা পেলেন না৷