ভারতীয় ফুটবলের গভীর সংকটেও ফেডারেশন উদাসীন

রণজিৎ দাস: ২০২৩/২৪ ফুটবল মরশুম শেষের হওয়ার পথে৷ জুনিয়র লিগ ও মেয়েদের সিনিয়র দলের সর্বভারতীয় টুর্নামেন্টের কয়েকটা ম্যাচ কেবল বাকী আছে৷ ইতিমধ্যে সামনের মরশুমে আইএসএলে বাংলার তিনপ্রধানের খেলা নিশ্চিত হয়ে গেছে৷ আইএসএলে এবার নামা নেই৷ ফলে সামনের মরশুমে আইএসএলে ১৩টা দল খেলবে৷ আইলিগ থেকে মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রমোশন পেয়েছে৷ আইলিগে প্রমোশন পেয়েছে স্পোর্টিং ক্লাব ব্যাঙ্গালরু৷ আইলিগ ও আইলিগ-টুতে থেকে যাদের নামার কথা, তারা নেমেছে৷ আইলিগ থেকে মনিপুরের দুটো টিম নেরোকা ও ট্রাউ এফসি এবং আইলিগ-টু থেকে মহারাষ্ট্রের দুটো দল কেঁকড়ে এফসি ও মহারাষ্ট্র ওরেঞ্জ এফসি নেমে গেছে৷ এআইএফএফ থেকে মনিপুরের বর্তমান পরিস্হিতি সাপেক্ষে কি ধরনের পদক্ষেপ নেবে, তা এখনই বলা যাচ্ছেনা৷

ভারতীয় ফুটবল খুব গভীর সংকটে পড়েছে৷ আইএসএলের বেশকিছু টিম অবনমনে পড়লে নিশ্চিত ঝাঁপ বন্ধ করে দেবে৷ আইলিগের কিছু টিম প্রমোশন নিয়ে আইএসএলে উঠতে চাইছেনা৷ এমনকি আইলিগ-টুয়ের কিছু টিমও আইলিগে প্রমোশন পেয়ে উঠতে চাইছেনা৷ কিন্ত্ত ভারতীয় ফুটবলের আঙ্গিনায় তারা সবাই থাকতে চাইছে৷ সর্বভারতীয় স্তরের যুব লিগ থেকে সিনিয়র লিগ পর্যন্ত অজস্র ক্লাব অংশগ্রহণ করতে চাইছে৷ দেশজুড়ে হাজারো নামে এ্যকাডেমির উদ্বোধন হচ্ছে৷ এক একটা এ্যকাডেমির আবার একাধিক শাখা৷ অথচ টাকার অভাবে নাকি ক্লাবগুলো চালানো দায়৷ দেশজুড়ে বাইচুং ভুটিয়ার কতো এ্যকাডেমি ছড়িয়ে আছে৷ হাজারো হাজারো শিক্ষার্থী এইসব এ্যকাডেমির সাথে যুক্ত৷ ভাবতে অবাক লাগে, যেখানে টাটা ফুটবল এ্যকাডেমি তার নিজের জৌলুস হারিয়ে ফেলতে বসেছে–সেখানে একজন ব্যক্তি কিসের প্রেরণায় একাধিক ফুটবল এ্যকাডেমি খুলে চলেছেন?ফিফা র্যাঙ্কিংয়ের ১০০র ধারে কাছে কষ্টকরে টিকে থাকা একটা দেশের ফুটবলের প্রতি এমন আগ্রহ উৎসাহব্যঞ্জক বটে৷

কিন্ত্ত এর পাশাপাশি একটু ভেবে দেখুন–দিল্লি ফুটবলের তৃতীয় ডিভিশনে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠেছে৷
কি অদ্ভুত ঘটনা!!
দেশের রাজ্য ভিত্তিক ফুটবলের মানের নিরিখে দিল্লির অবস্থান কেমন?


বাংলার একজন প্রখ্যাত প্রাক্তন ফুটবলার বর্তমানে মেঘালয় লিগে কোচিং করাচ্ছেন৷ ওনার কাছেই জানা গেল মেঘালয়ের ফুটবল স্টাইল ও খেলার মান দিল্লির চাইতে ভালো৷ তাহলে তো অনায়াসেই বলা যায় রাজ্যভিত্তিক লিগের মান অনুয়ায়ী দিল্লির ফুটবল মান দেশের মধ্যে ৬/৭ নম্বরের আগে কখনোই আসবেনা৷ তবে, দেশের ৬/৭ নম্বরের র্যাজ্যলিগের তৃতীয় ডিভিশনের প্রতি ম্যাচ ফিক্সিংয়ে যাদের আগ্রহ জন্মায়, তাদের দেশের ১/২নম্বরের রাজ্যলিগের প্রতি কতটা তীক্ষ্ণ নজর থাকে?আলোচনার দরকার হয়না৷ বাংলার ক্ষেত্রেই তো দুটো দলের নাম উঠে এসেছে৷ যদিওবা কেবলমাত্র ঐ দুটো দলের প্রতি নজর থেমে আছে?আরও দল যে জড়িয়ে নেই, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?টাকা ও কর্মকর্তাদের অভাবেই ক্লাবগুলো নাকি নিজেদের অজান্তেই এভাবে জড়িয়ে যাচ্ছে৷ এতো স্বাভাবিক ঘটনা৷ একজন এজেন্ট তাই নিজেই একটা টিম করছে৷ আবার কোনও ক্যাম্প নিজেরাই একটা দল চালাতে চাইছে৷ কে কাকে নজরদারির মধ্যে রাখবে?পরিস্তিতির স্বীকার হয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়৷

অস্বাভাবিক ঘটনা বলে যা রাজ্যলিগের ক্ষেত্রে বলা যায়, তার ছায়া কি সর্বভারতীয় স্তরের লিগেও পড়ছেনা?
এবছর আইলিগের আরও প্রসার ঘটেছে৷ আইলিগের তৃতীয় বিভাগের খেলা হয়েছে৷ দেশের ২৫টা ক্লাব এই লিগে অংশগ্রহণ করেছে৷ আইলিগের তৃতীয় বিভাগে চ্যাম্পিয়ান হয়ে স্পোর্টিং ক্লাব ব্যাঙ্গালরু আইলিগের দ্ধিতীয় বিভাগে উঠেছিল৷ আইলিগের দ্ধিতীয় বিভাগ খেলে তারা আইলিগে প্রমোশন পেল৷

এই স্পোটিং ক্লাব ব্যাঙ্গালরু আইলিগের প্রাথমিক পর্বে বাংলার ডায়মন্ড হারবার দলের সাথে একই গ্রুপে ছিল৷ পয়েন্ট সমান হলেও গোল পার্থ্যকে ডায়মন্ড হারবার ছিটকে যায়৷ ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও ডায়মন্ড হারবার ম্যাচটা জিতে পারেনি৷ শুরুর ৫মিনিটের মধ্যে ডিফেন্স লাইন আপের চেঞ্জ আনতে হয়৷ যে লাইন আপ আর শক্তিশালী হয়ে উঠেনি৷ প্লেয়াররা নাকি চোট লুকিয়ে খেলেছিল৷ এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে এমন গাফিলতি?অথচ টিমে বিদেশি কোচ ছিলেন৷

আইলিগ-টুতে এফসি ব্যাঙ্গালরু ইউনাইটেড টিমের দিকে তাকিয়ে দেখুন৷ ৮ ম্যাচে ১৯ পয়েন্ট পেয়ে তারা একসময় লিগ টেবিলের শীর্ষে ছিল৷ অর্থাৎ শেষ ৬ ম্যাচে তারা ৭/৮পয়েন্ট পেলেই আইলিগে প্রমোশন পেয়ে যেতো৷ কিন্ত্ত শেষ ৫ম্যাচের মধ্যে তারা ৪টে ম্যাচ হেরেছে এবং ১টা ম্যাচ ড্র করেছে৷ অর্থাৎ ৫ ম্যাচে তারা মাত্র ১ পয়েন্ট সংগ্রহ করে৷ শুধু তাই নয় ইউনাইটেড স্পোর্টসের বিরুদ্ধে ৫গোল খেয়েছে৷ একটা ১৪ম্যাচের লিগের ৮ম্যাচে লিগ টেবিলের শীর্ষে থাকা টিমের এমন পারফরম্যান্সকে আপনি কিভাবে ব্যাখা করবেন?একটা ম্যাচে দুটো সাইবব্যাক চেঞ্জ হচ্ছে৷ স্টপার রেড কার্ড দেখেছে, আর উইংয়ের প্লেয়ার চেঞ্জিংয়ে নামচ্ছে৷ অনেককিছুর ব্যাখা পাবেননা৷ জিজ্ঞেস করলে বলছে–ব্যাড লাক৷ টিমে বিদেশি কোচ৷ ভারতের মাটিতে তিনি বেশ কয়েকবছর আছেন৷ অতএব, অনেকপ্রশ্নের জবাব না পেলেও চলবে৷ ফেডারেশন খেলার ফলাফলে এমন ওঠানামা নিয়ে কেন পর্যালোচনা করবেনা?সাধারণ দৃষ্টিতে যা অস্বাভাবিক মনেহয়–তা নিয়ে ফেডারেশন কেন যথাসময়ে হস্তক্ষেপ করছেনা?অবিলম্বে ফেডারেশন আইলিগ-টুয়ের দ্ধিতীয় পর্যায়ের খেলাগুলোর গতিপ্রকৃতি নিয়ে আলোচনায় বসুক৷

গভীর, গভীর সংকটের মুখে ভারতীয় ফুটবল৷ বেটিং কিংবা ম্যাচ ফিক্সিং–সব তালগোল হয়ে যাচ্ছে৷