১৯ বছর পর পার্থে বিজয় পতাকা ভারতের। ২৯৫ রানে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে জয়ের হাসি ফুটল বুমরাহ-কোহলিদের মুখে। এই জয়ের পর খেলা বিশেষজ্ঞরা যেমন অপ্রতিরোধ্য ভারতীয় দলের গুণগান গাইছেন ঠিক তেমন আবার টিম ইন্ডিয়ার ‘গুড লাকের’ থিওরিও খাড়া করছেন। কারণ পার্থ পিচ যেভাবে ভারতের সঙ্গ দিয়েছে তা অকল্পনীয়। এদিনের অসহ্য শুষ্ক গরমে পার্থে টেস্টের প্রথম দিন পিচে ঘাস ছিল। তাই সেদিন ভারত এবং অস্ট্রেলিয়া— দু’টো টিমই ব্যাট করতে নেমে বেসামাল হয়ে যায়। কিন্তু দ্বিতীয় দিন ভারত যখন দ্বিতীয়বার ব্যাট করতে নামে, তখন ব্যাট করা সহজ হয়ে গিয়েছিল। কারণ একটাই। অসহ্য শুষ্ক গরমে পার্থে পিচের ঘাস মরে গিয়েছিল। এরপর খেলা যত এগিয়েছে, পিচে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। লম্বালম্বি, আড়াআড়ি- নানাবিধ ফাটল। এবং সেই ফাটল ধরার কারণও একই। গরম। সেই ফাটলে বল পড়লে কখনও উঁচু-নিচু হবে। কখনও আবার বল ভিতর-বাইরে করবে।
অস্ট্রেলিয়ার কোচ অ্যান্ড্রু ম্যাকডোনাল্ড পর্যন্ত প্রেস কনফারেন্সে এসে বলে গিয়েছেন যে, পিচ যে এমন আচরণ করবে, ভাবতে পারেননি। কারণ, ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস চলার সময় অস্ট্রেলীয় বোলাররা প্রচুর চেষ্টা করা সত্ত্বেও পিচ থেকে ফায়দা তুলতে পারেননি। এক্ষেত্রে বুমরাহর টস জেতা বিশাল একটা ফ্যাক্টর হয়ে গিয়েছে। ভারত টস না জিতে প্রথমে বল করলে এ সমস্ত সুযোগ-সুবিধে অস্ট্রেলিয়া পেতে পারত। পার্থ টেস্টে অস্ট্রেলিয়াকে ২৯৫ হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল বুমরাহর টিম ইন্ডিয়া। সেই সঙ্গে ফিরে পেল হারানো সিংহাসন। ফের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষে পৌঁছে গেল ভারত। পরপর দুটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলেছে ভারত। একটা সময়ে তৃতীয়বার ফাইনাল খেলার দৌড়েও প্রবলভাবে এগিয়ে ছিল ভারতীয় দল। ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ জিতে ওয়ার্ল্ড টেস্ট ক্রিকেট ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে ফেলবে, এমনটাই অনুমান ছিল।
কিছুদিন আগেই ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে ০-৩ লজ্জার হার সহ্য করতে হয়েছে ভারতকে। তার মাঝে প্রথম টেস্টে খেলছেন না অধিনায়ক রোহিত শর্মা। চোটের জন্য বাদ পড়েছেন শুভমন গিল। সেই পরিস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এমন একটা মাঠে ভারতকে নামতে হচ্ছে, যেখানে অসিরা কোনও দিন হারেনি। পরিস্থিতির চাপে নাজেহাল গৌতম গম্ভীর, বিরাট কোহলিরা৷
চার দিন পর সেই লজ্জাকে গর্বে পরিণত করল ভারত। হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়লেন যশপ্রীত বুমরারা। অস্ট্রেলিয়ার ঘরের মাঠে তাদের ২৯৫ রানে হারিয়ে সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ সাজঘরে বসে উপভোগ করলেন প্রথম টেস্টের মাঝেই দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া রোহিতও। ১৯৭৭ সালে মেলবোর্নে ২২২ রানে জিতেছিল ভারত। অস্ট্রেলিয়ার মাঠে রানের নিরিখে এটিই ছিল ভারতের সবচেয়ে বড় জয়। এই ম্যাচে সেই রেকর্ড ভাঙল ভারত। দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া ভারত, বিধ্বস্ত ভারত যে খোঁচা খাওয়া বাঘের মতোই ভয়ঙ্কর তা আরও একবার দেখাল তারা।
কিন্তু যাবতীয় হিসাব উলটে যায় কিউয়িদের বিরুদ্ধে। ঘরের মাঠে ২৪ বছর পরে চুনকাম হয়েছিল ভারত। সেই সঙ্গে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট টেবিলেও দ্বিতীয় স্থানে নেমে যেতে হয়েছিল রোহিতদের। তারপর থেকে প্রশ্ন উঠছিল, আসন্ন বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে কি আদৌ খেলতে পারবে ভারত? কিন্তু যাবতীয় সংশয় উড়িয়ে দিল গম্ভীর ব্রিগেড। দ্বিতীয় ইনিংসে কোহলি-যশস্বীর সেঞ্চুরি আর বুমরাহর আগুনে বোলিংয়ে পাত্তাই পেল না অস্ট্রেলিয়া। এক ঢিলে দুই পাখি মারল ভারত। বর্ডার গাভাসকর ট্রফির প্রথম টেস্টে জয়ের সঙ্গে সঙ্গে অজিদের সরিয়ে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষে উঠে গেল টিম ইন্ডিয়া।