আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে পাকাপাকিভাবে অবসর নিলেন ‘এল পিস্তলেরো’ লুই সুয়ারেজ। উরুগুয়ে জাতীয় দল এবং মার্কিন ক্লাব ইন্টার মিয়ামির এই তারকা স্ট্রাইকার সোমবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর অবসরগ্রহণের এই সিদ্ধান্ত জানান।
নিজের অবসরগ্রহণের সিদ্ধান্ত জানাতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন সুয়ারেজ। তিনি জানান,আগামী শুক্রবারই শেষবারের মতো গায়ে আকাশি জার্সি চড়াবেন তিনি। সেদিন মন্তেভিডিওতে প্যারাগুয়ের বিরুদ্ধে আগামী ফুটবল বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার ম্যাচ রয়েছে উরুগুয়ের, যা হতে চলেছে সুয়ারেজের অন্তিম ম্যাচ।
আয়াক্স, লিভারপুল ও বার্সেলোনার এই প্রাক্তন স্ট্রাইকারের ঝুলিতে রয়েছে ৩৮৭টি ক্লাবস্তরের গোল। দেশের জার্সি গায়ে তিনি করেছেন ৭৪টি গোল। উরুগুয়ের হয়ে তিনি প্রথম খেলেন ২০০৭ সালে।
সাংবাদিক সম্মেলনে নিজের অবসর ঘোষণার সময়ে তিনি জানান, “এই সিদ্ধান্তটা খুব সহজে নিতে পারিনি। কিন্তু, কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ পর্যন্ত আমার সেরাটা দেব, এটা ভেবে অন্তত মানসিক শান্তি পাচ্ছি।”
তিনি আরও জানান, উরুগুয়ের হয়ে কোপা আমেরিকা জেতা তাঁর কেরিয়ায়ের শ্রেষ্ঠতম মুহূর্ত ছিল।
“কোনোকিছুর বিনিময়েই আমি কোপা আমেরিকার খেতাব ছাড়ব না। ওটা আমার কেরিয়ারের সবথেকে ভালো মুহূর্ত ছিল।” প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে উরুগুয়ে কোপা আমেরিকার ট্রোফি জেতে, যা দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘কনমেবল’ পরিচালনা করে। সেই কোপাবিজয়ী দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন সুয়ারেজ এবং ওই প্রতিযোগিতায় ৪টি গোল করে অন্যতম সেরা গোলদাতাও হয়ে ওঠেন।
তবে, সুয়ারেজের কেরিয়ারের অধিকাংশটাই জুড়ে ছিল বিতর্ক। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা থেকে তাঁকে বাতিল করা হয়। ইতালির ডিফেন্ডার জর্জিও চিয়েল্লিনিকে কামড়ে দেওয়ার কারণে চার মাসের জন্য তাঁকে ব্যান করা হয়। ২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ঘানার বিরুদ্ধে গোললাইনে দাঁড়িয়ে এক বিতর্কিত হ্যান্ডবল করেন সুয়ারেজ, যার ফলে ঘানার এক সুনিশ্চিত গোলের সুযোগ নষ্ট হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ সুয়ারেজকে বসিয়ে দেওয়া হয়, ঘানাকে পেনাল্টিও দেওয়া হয়। তবে, ঘানা পেনাল্টিতে গোল দিতে না পারায় উরুগুয়ে সেমিফাইনালে উঠে যায়। এই পুরো ঘটনাটি সুয়ারেজকে ফুটবল সমর্থকদের চোখে খলনায়ক বানিয়ে দিয়েছিল।
২০১১ সালে ব্রিটিশ ফুটবলের প্রথম ডিভিশন, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব লিভারপুলে খেলাকালীন অপর এক শ্রেষ্ঠ ও বিখ্যাত প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের ফরাসি লেফটব্যাক প্যাট্রিস এভ্রার বিরুদ্ধে বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের জন্য আটটি ম্যাচের জন্য ব্যান খান তিনি।
এসব কিছুর পরেও, সুয়ারেজের মতো সুদক্ষ, সুযোগসন্ধানী, সদা তৎপর এবং গোলের জন্য ক্ষুধার্ত স্ট্রাইকারের অবসর – যাঁকে ভালোবেসে ভক্তরা ‘এল পিস্তলেরো’ বা ‘বন্দুকবাজ’ আখ্যা দিয়েছে পরের পর গোল করার জন্য – ফুটবলের পক্ষে বেদনাদায়ক।