প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনা মঙ্গলবার সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ভারতীয় ক্রিকেটের শীর্ষপদে একজন বাঙালি। আমি গর্ব অনুভব করি। সেই সৌরভ গাঙ্গুলি আমাকে কলকাতায় বাংলাদেশ-ভারত ক্রিকেট টেস্ট দেখতে দাওয়াত দিয়েছে। আমি অবশ্যই যাব। এটি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দাওয়াত নয়, বাঙালি ছেলে সৌরভের দাওয়াত। সৌরভের দাওয়াত বলেই আমি সেখানে যাব। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকব। বিকেলে চলে আসব।
আজারবাইজানে জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনে যােগ দিয়ে দেশে ফিরে সে সম্মেলন সম্পর্কে মঙ্গলবার বিকেলে গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বক্তব্য রাখছিলেন। এক সাংবাদিক প্রশ্নোত্তর পর্বে জানতে চান, প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে যাবেন কিনা এবং সেখানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তিস্তার জল নিয়ে কোনও আলােচনা হবে কিনা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ক্রিকেটের সঙ্গে তিস্তার জল মেশানাে ঠিক নয়। আমি সৌরভের আমন্ত্রণে যাচ্ছি। সৌরভ আমাকে টেলিফোন করেছিল, আমি বলে দিয়েছি অবশ্যই যাব। এখানে তিস্তাকে টেনে আনা ঠিক নয়।
বিসিসিআইয়ের প্রধান হওয়ার পর সৌরভের ফোন পান প্রধানমন্ত্রী। এটি মঙ্গলবার শেখ হাসিনা নিজেই জানিয়েছেন, সৌরভ বাঙালি ছেলে। সে ক্রিকেটে খুব নাম করেছে। এই প্রথম একজন বাঙালি হিসেবে বিসিসিআইয়ের প্রধান হল। এরপর সে আমাকে ফোন করেছিল। আমাকে দাওয়াত দিল। বলল, আমি যেন ওখানে যাই এবং খেলার শুরুতে অন্তত থাকি। আমি রাজি হয়ে গেলাম।
বাংলাদেশ ক্রিকেট প্রসঙ্গও সাংবাদিক সম্মেলনে আসে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের অস্থিরতা কমছে না বরং নতুন ইস্যুতে আরও টালমাটাল দেশের ক্রিকেট। নতুন ধাক্কা হয়ে এসেছে সাকিবের ম্যাচ পাতানাের প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টি আইসিসি কিংবা বিসিবিতে না জানানাের খবরে। এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, সাকিব ভুল করলেও তিনি পাশে থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রশ্ন ছিল, দেশের ক্রিকেটের বর্তমান দৃশ্যপট নিয়ে। যেখানে সাকিবের ম্যাচ পাতানাের প্রস্তাব পাওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। সাকিব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিসিবি সাকিবের পাশে আছে এবং সব রকমের সহযােগিতা দেবে। এই ধরনের ক্রিকেটারদের সঙ্গে জুয়াড়িরা যােগাযােগ করে। ওর (সাকিবের) যেটা উচিত ছিল, যখনই ওর সঙ্গে যােগাযােগ করেছে, ও খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। ফলে সে আইসিসিকে বিষয়টি জানায়নি। নিয়মটা হচ্ছে, ওর সঙ্গে সঙ্গে জানানাে উচিত ছিল।
সাকিব এই জায়গায় ভুল করেছে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে সে একটা ভুল করেছে। এক্ষেত্রে আপনারা জানেন, আইসিসি যদি কোনও ব্যবস্থা নেয়, এখানে আমাদের খুব বেশি কিছু করার সুযােগ থাকে না। তবু আমরা বলব, বিশ্ব ক্রিকেটে তাঁর একটা অবস্থান আছে। একটা ভুল সে করেছে এবং সেটা সে বুঝতে পেরেছে। এখানে খুব বেশি কিছু করার নেই আমাদের।
সম্প্রতি ক্রিকেটে খেলােয়াড়দের ধর্মঘট প্রসঙ্গ আরেক প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলােয়াড়রা হঠাৎ ধর্মঘট ডাকল। তাঁরা তাঁদের দাবি বিসিবিকে জানাতে পারত। সেটা তাঁরা করেনি। যাই হােক, পরবর্তীতে বাের্ডের সঙ্গে আলােচনা হয়েছে। সেটা এখন মিটমাট হয়ে গেছে। আমরা যেভাবে খেলােয়াড়দের সমর্থন দিই, অনেক দেশ তা করে না।
জুয়াড়িদের কাছ থেকে আসা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সাকিব আল হাসান, কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি) কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট বাের্ডকে (বিসিবি) বিষয়টি না জানানােয় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযােগ ওঠার কথা শােনা যাচ্ছে, অভিযােগ সত্য হলে বড় শাস্তির মুখে পড়তে হবে এই অলরাউন্ডারকে। আইসিসি’র দুর্নীতিবিরােধী ধারা অনুযায়ী, কোনও জুয়াড়ির কাছ থেকে অনৈতিক কোনও প্রস্তাব পেলে যত দ্রুত সম্ভব আইসিসি বা সংশ্লিষ্ট বাের্ডকে জানাতে হয়। এ ব্যাপারে প্রতিটি সিরিজ ও টুর্নামেন্টের আগে ক্রিকেটারদের ক্লাস নেওয়া হয়। এরপরও কেউ জুয়াড়িদের প্রস্তাবের কথা না জানালে গুরুতর অপরাধ হিসেবে সেটা গণ্য হবে, শাস্তিও তাই গুরুতর। আইসিসি’র এই ধারা ভঙ্গের শাস্তি হতে পারে ৬ মাস থেকে ৫ বছরের নিষেধাজ্ঞা।