আর একদিন বাদেই বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচ শুরু হতে চলেছে। দুই দল ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে অত্যন্ত মর্যাদার লড়াই। দুই দলই চাইবে একে অপরের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ম্যাচের রাশটা নিজেদের আয়ত্বের মধ্যে রাখতে। সেই কারণেই ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা এবং অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সের বুদ্ধির লড়াই দেখতে পাওয়া যাবে মাঠে। ইতিমধ্যেই চতুর্থ টেস্ট ম্যাচে সমস্ত টিকিট নিঃশেষিত। বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি কেন্দ্রে বড়দিনের জন্য যখন সবাই মেতে থাকেন, তখন ঠিক পরের দিনই এই টেস্ট ম্যাচের রং একেবারে বদলে যায়। হয়তো সেই কারণেই ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার কাছে এই টেস্ট ম্যাচের ব্যাখ্যা দেওয়া কোনওভাবেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। তবে, বক্সিং-ডে টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে থাকলেও ভারত কোনওভাবেই তাদের স্পর্ধাকে ছেড়ে কথা বলবে না। ভারতের রণকৌশল অবশ্যই গোপনীয় থাকবে। পাল্টা অস্ট্রেলিয়ার ছক কী হবে, সেদিকেও নজর থাকবে।
ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া দলের কাছে সবচেয়ে বেশি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভারতের দুরন্ত বোলার যশপ্রীত বুমরা। যশপ্রীত প্রথম টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কের ব্যাটনটা নিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সবার নজর কেড়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যেই তিনটি টেস্ট ম্যাচে তাঁর দখলে এসেছে ২১টি উইকেট। তাই যশপ্রীত বুমরার বল কীভাবে মোকাবিলা করবেন, অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা, সে বিষয়ে অধিনায়ক প্যাট কামিন্স বেশ চিন্তিত। তবে, অস্ট্রেলিয়া দলে কমপক্ষে দু’জন পরিবর্তন হচ্ছে। তার মধ্যে একজন রয়েছেন বোলার। দলের ওপেনার নাথানকে বাদ দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার এই তরুণ প্রতিভাবান বোলারকে দলে নিয়েছে। তাঁরাও চেষ্টা করবেন ভারতের পয়লা সারির ব্যাটসম্যানদের কীভাবে আটকিয়ে দেওয়া যায়। এমনও অঙ্ক থাকতে পরে, তড়িঘড়ি করে সেইসব ব্যাটসম্যানকে আউট করে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া। দ্বিতীয় টেস্টে অ্যাডিলেডে অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা দক্ষতা দেখিয়ে ভারতের ব্যাটসম্যানদের কবজায় নিয়ে এসেছিলেন। যার ফলে ওই টেস্ট ম্যাচটি হারতে হয়েছিল ভারতকে জঘন্যভাবে। ভারত হেরেছিল ১০ উইকেটে। সেই হারের লজ্জা থেকে বাঁচার জন্য তৃতীয় টেস্ট ব্রিসবেনে ভারত শপথ নিয়ে নেমেছিল ম্যাচটা জেতার জন্য। সেখানেও কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার দাপট দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। আবার এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, যেখানে ভারতের জয় আসাটাও অস্বাভাবিক ছিল না। খেলার প্রথম দিনে বৃষ্টি যেমন অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছিল, তেমনই খেলার শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়া দল বৃষ্টি প্রার্থনা করেছিল। না হলে অস্ট্রেলিয়া হেরে গেলে অবাক হওয়ার কারণ ছিল না। তাই বক্সিং-ডে টেস্ট ম্যাচ মেলবোর্নের মাঠে প্রথম থেকেই অন্য চিন্তাধারা নিয়ে দুই দলের ক্রিকেটাররা একে অপরের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে লড়াই করবেন।
ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা গত রবিবার অনুশীলনের সময় চোট পেয়েছেন। কিন্তু সেই চোট খুব একটা গুরুতর নয়। সোমবার নিজে অনুভব করেছেন ভারতীয় দলকে জেতাতে গেলে সংঘবদ্ধ প্রয়াস বড় হাতিয়ার হবে। সেই কারণেই অনুশীলনে এমনই হাওয়া তৈরি হয়। একে অপরের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা হয়েছে একেবারে মুক্ত মনে। সবারই লক্ষ্য, ম্যাচটা জিততেই হবে। তাই ম্যচ জিততে না পারলে ভারতীয় দলের সামনে সমস্যা তৈরি হবে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার জন্য। তাই কঠিন লড়াইয়ে দুই পক্ষই মুখোমুখি হবে তা বলাই বাহুল্য। ভারতীয় দল আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে মাঠে নামবে, তা নতুন করে বলার কোনও প্রয়োজন হয় না। শোনা যাচ্ছে, মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়া দলে তরুণ ব্যাটসম্যান স্যাম কনস্টাসের অভিষেক হতে পারে। তবে, বুমরার মতো বোলারদের বিরুদ্ধে খুব সহজে তাঁরা ব্যাট করতে পারবেন না। এমনও হতে পারে, মিচেল মার্শের জায়গায় বিও ওয়েবস্টারকে দলে রাখা হতে পারে।
ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন খেলোয়াড় ও সমর্থকরা ভারতীয় দলকে কটাক্ষ করে নানারকম উক্তি করতে ছাড়ছেন না। ভারতীয় দলের মনোসংযোগকে নষ্ট করার জন্য এই পথ তাঁরা বেছে নেন। হঠাৎই তাঁদের মুখে শোনা গেছে, ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা একেবারেই আনফিট। একজন মোটা ক্রিকেটার কখনওই ভালো খেলতে পারেন না। এমনকি দলে জায়গা কেন দেওয়া হয়েছে, তা আমাদের জানা নেই। প্রাক্তন ক্রিকেটার হার্সেল গিবসের এই উক্তি ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা বিরক্তি প্রকাশ করে বলেছেন, একজন ক্রিকেটার কখনওই অন্য ক্রিকেটারকে এইভাবে অভব্য ব্যবহার করতে পারেন না। কেউ যদি আনফিট হন, বা অতিরিক্ত মোটা হন, তা তো দুনিয়া দেখতে পাচ্ছে। রোহিত তো বল করেন না। ব্যাটের প্রতি তাঁর আন্তরিকতার কথা সবাই জানেন। তাই বুঝতে হবে, একজন ক্রিকেটার দলের স্বার্থে কী করতে পারেন।
আবার এদিকে বক্সিং-ডে টেস্ট ক্রিকেটে পিচ নিয়ে কথা উঠেছে। যেহেতু গত দু’টি সিরিজে অস্ট্রেলিয়া জিতেছে, তাই তারা চেষ্টা করছে ভারতীয় শিবিরকে বিভ্রান্তকে দলের একতাকে নষ্ট করতে। তারা হ্যাটট্রিকের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে চায়। যেহেতু সিরিজ এখন সমতায় দাঁড়িয়ে আছে, তাই ছলেবলে অস্ট্রেলিয়া দল ভারতকে চাপের মধ্যে রাখতে চাইছে। ভারতীয় দলকে যে প্র্যাকটিস পিচ দেওয়া হয়েছে অনুশীলনের জন্য সেই অর্থে পেসারদের জন্য নয়। কিন্তু নিজেরা উন্নতমানের পিচে অনুশীলন করে চলেছেন। এই পরিস্থিতিতে এমন পিচে খেলতে গিয়ে লোকেশ রাহুল ও রোহিত শর্মারা চোট পেয়েছেন। ভারতের প্রতি অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিকরাও নানাভাবে সমালোচনা করে চলেছেন। এটাও কখনওই উচিত নয়। যেমন গত রবিবার আকাশদীপ পিচ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, সাদা বলের ক্ষেত্রে এই ধরনের উইকেট কখনওই কাজে আসে না। এখানে বাউন্স কমে যায় এবং ব্যাটসম্যানদের পক্ষে খেলা ঠিকমতো সম্ভব হয় না। তবে জানা গেছে, সোমবার অনুশীলনের জন্য নতুন পিচ দেওয়া হয়েছে ভারতীয় দলকে। ধীর গতিতে পিচে প্র্যাকটিস করার জন্য বাধ্য করা হচ্ছে দলকে। সাধারণত তিনদিন আগে ম্যাচকেন্দ্রিক উইকেট দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু তা করা হয়নি। তাই প্রশ্ন উঠছে, এই ধরনের ব্যবহার অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে পাওয়া ভাবা যায়নি। এদিকে এই টেস্টকে ঘিরে উত্তাপ যেমন বাড়ছে, তেমনই বিতর্কও উঠছে নানা বিষয়ে।
অন্যদিকে মেলবোর্ন বক্সিং-ডে টেস্ট ম্যাচে ভারতের ওপেনার লোকেশ রাহুলের সামনে রেকর্ড গড়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি যদি এই টেস্টে শতরান করতে পারেন, তাহলে শচীন তেণ্ডুলকর ও বিরাট কোহলিকে ছুঁয়ে ফেলবেন। রোহিত শর্মার অনুপস্থিতিতে প্রথম টেস্টে ওপেনার হিসেবে রাহুল প্রথম থেকেই ধারাবাহিকভাবে ভালো রান পাচ্ছেন। এই সিরিজে বড় রান করার ক্ষেত্রে তিনি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তালিকায় রাহুলের উপরে রয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড। তাই ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা রাহুলের কাছ থেকে শতরান চাইছেন। বিরাট কোহলিও আশা করছেন, এই ম্যাচে বড় রান করতে পারবেন। দ্বিতীয় টেস্ট ম্যাচে তিনি যেমন শতরান করেছিলেন, তেমনই বক্সিং-ডে টেস্ট ম্যাচে শতরানের লক্ষ্যে বড় হাতে ব্যাট ধরবেন। যশস্বী জয়সওয়াল, শুভমন গিল, রোহিত শর্মা, ঋষভ পন্থ যেমন বড় রান করতে চাইবেন, তেমনই বোলার যশপ্রীত বুমরা, মহম্মদ সিরাজ ও আকাশদীপরা অঘটন ঘটিয়ে ভারতের জয়কে নিশ্চিত করতে সেরা বল উপহার দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে।