ভারত আত্মসমর্পণ করল চতুর্থ টেস্ট ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ভাবতেও অবাক লাগে, এইভাবে প্যাট কামিন্সদের কাছে হার স্বীকার করে নিতে হবে রোহিত ব্রিগেডকে। তাহলে কি ভারতীয় দলের কয়েকজন ক্রিকেটার ছাড়া নিজেদের হারিয়ে ফেলেছেন? তা না হলে, একদিনে ভারতের ১০টি উইকেট হারাতে হবে! অবশ্য প্রথম টেস্ট ম্যাচেও প্রথম দিনে ভারতের এই দুর্দশার কাহিনি সবারই জানা আছে। তবে ওই ম্যাচে যশপ্রীত বুমরা অধিনায়কের জাদু ব্যাটন নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় তুলে নিয়েছিল। এদিন কিন্তু ক্রিকেট দুনিয়ার সবাই বাহবা বাহবা দিয়েছিল। আর তারপরের টেস্ট ম্যাচগুলিতে ভারতকে শুধুই কাঁদতে হয়েছে হারের লজ্জায়। এমনকি তৃতীয় টেস্ট ম্যাচে যদি বৃষ্টি না হত, তাহলে কী দুর্দশার মধ্যেই পড়তে হত রোহিত শর্মাদের। কারা যেন দূর থেকে চিৎকার করে বলেছিলেন, বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে ভারত দুরন্ত পারফরম্যান্স করবে। কিন্তু ভারতীয় শিবিরে এই আওয়াজ হয়তো পৌঁছয়নি। তাঁরা তখন হারের ঘুমে ডুবে ছিলেন। মেলবোর্নের মাঠে সেইভাবে কোনওদিনই ভারতীয় দল মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। সেই কারণেই পরিসংখ্যানে ভারত পিছিয়ে পড়েছিল। সেই পিছিয়ে পড়া তালিকায় আবারও নাম লেখালো ভারতীয় ক্রিকেট দল। সোমবার অস্ট্রেলিয়ার কাছে ১৮৪ রানে হারের লজ্জায় মুখ লুকিয়ে নিল ভারত। বছরের শেষে ভারতীয় ক্রিকেটের মানচিত্রে কালো রঙের লেখা থাকবে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যাওয়ার কথা।
এই মরশুমে ভারতের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের কাছে হোয়াইট ওয়াশ হতে হয়েছে রোহিতদের। তারপরেও কোনও শিক্ষা হয়নি প্রতিপক্ষ দলকে কীভাবে হারিয়ে আবার স্বমহিমায় ফিরে আসা যায়। ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা পার্থে প্রথম টেস্ট ম্যাচে অধিনায়কের ভূমিকায় ছিলেন না। সেই ব্যাটনটা হাতে তুলে নিয়েছিলেন যশপ্রীত বুমরা। বুমরার নেতৃত্বে প্রথম টেস্ট জেতার পরে উৎসাহিত হয়েছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। কিন্তু তারপরে সবই হরের লজ্জা। ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়া দল পাঁচ টেস্ট ম্যাচ খেলায় সিরিজ নিজেদের প্রায় দখলে নিয়ে ফেলেছে। তবে, শেষ টেস্ট ম্যাচে সিডনির মাঠে কোনও মিরাকল ঘটিয়ে ভারতীয় দল জিততে পারলে সিরিজে সমতা ফিরে আসবে। কিন্তু সেখানেও বেশকিছু প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে। আসলে ভারতীয় শিবিরের মনোবল ভেঙে পড়েছে। জয়ের মুখ দেখাটা তাঁদের কাছে এখন হাতের মুঠোয় চাঁদ পাওয়ার মতো। তবুও আশায় বুক বাঁধবে ভারতীয় ক্রিকেট দলের সমর্থকরা। বর্ডার-গাভাসকার টেস্ট ম্যাচের যে ঐতিহ্য, সেই ঐতিহ্যসে ধরে রাখতে পারলেন না রোহিত-কোহলি ও লোকেশ রাহুলরা। কোথায় যেন তাঁরা নির্ভরতা হারিয়ে ফেলেছেন। তা না হলে মাঠে নামার আগেই দল কেন হেরে থাকে ড্রেসিং রুমেই, তার উত্তর খোঁজা যাবে না। যে দলের ছন্দ বলতে যা ব্যাখ্যা দেওয়া হয়, সেখানে ভারতীয় দলের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। তাই হতাশা আর বেদনা নিয়ে থাকতে হবে বছরের শেষ দিন পর্যন্ত।
অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংসে একটা বড় রানের স্কোরবোর্ড উপহার দিয়েছে মেলবোর্নের মাঠে। অস্ট্রেলিয়া করেছে ৪৭৪ রান। অভিষেক ম্যাচেই স্যাম কনস্টাস সবার নজর কেড়ে নিয়েছিলেন। এমনকি স্টিভ স্মিথ ১৪০ রান করে দর্শকদের কাছে অভিনন্দন কুড়িয়ে নিয়েছিলেন। আর লাবুসেন ৭২ রান করে নিজেকে আবার ফিরিয়ে এনেছিলেন উইকেটে। আর অধিনায়ক প্যাট কামিন্স ১ রানের জন্য অর্ধ শতরান থেকে বঞ্চিত হন। তাই অস্ট্রেলিয়া বড় রানের অঙ্ককে জবাব দিতে ভারতীয় দল সেইভাবে প্রথম দিকে নজরে না আসলেও, তরুণ দুই ক্রিকেটার যশস্বী জয়সওয়াল ও নীতিশ রেড্ডি স্কোরবোর্ডকে উজ্জ্বল করেন।
এমনকি শেষের দিকে মাঠে নেমে ওয়াশিংটন সুন্দর ৫০ রান করেন। নীতিশের ব্যাট থেকে এসেছিল ১১৪ রান। নীতিশ অষ্টম উইকেটে খেলতে নেমে ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন। যশস্বী জয়সওয়াল ৮২ রান করে ভারতীয় দলকে একটা সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ১০৫ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে খুব একটা ভালো জায়গায় পৌঁছতে পারেনি। তাঁদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ২৩৪ রানে। ভারতের দুরন্ত বোলার যশপ্রীত বুমরা ৫টি উইকেট নিয়ে জয়ের আশা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু ভারতীয় দল পঞ্চম দিনে খেলতে নেমে মাত্র ১৫৫ রানে সবাই আউট হয়ে যান। ভারতের ব্যাটসম্যানরা অনেকটা একদিনের ম্যাচের মতো খেলে প্যাভিলিয়নের পথে যেন মিছিল তৈরি করলেন।
একমাত্র যশস্বী জয়সওয়াল (৮৪ রান) ছাড়া কারও ব্যাট কথাই বলতে পারল না। এটা অনেকটা নাটকের শেষ দৃশ্যের মতো। কোনও একজন অভিনেতা আসছেন, তিনি চলে যাচ্ছেন। আবার অন্য একজন অভিনেতা আসছেন, তিনিও চলে যাচ্ছেন। তৃতীয় অভিনেতা আসার সঙ্গে সঙ্গে যেন সময়ের শেষের ঘণ্টা বাজতে মঞ্চে পর্দা নেমে এল। এমনই দৃশ্য তৈরি করলেন মেলবোর্নের মাঠে ভারতের তারকা ক্রিকেটাররা। তাঁদের ব্যাটে রান কোথায়? খুঁজতে গেলে অনেকটাই আতশ কাঁচ দিয়ে দেখতে হবে। ভারতের এই হারের কোনও ব্যাখ্যা হবে না। যশস্বীর আউট নিতে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে সমীক্ষা হতে পারে। তার আগে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রত্যয় কোথায় হারিয়ে গেছে, তার সন্ধান করতে হবে।