• facebook
  • twitter
Friday, 20 September, 2024

বাংলাদেশকে ফলোঅন না করিয়ে চমক দিল রোহিত-ব্রিগেড

ভারতীয় শিবিরে এখন জয়ের গন্ধ

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের পরে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেবে ভারতের বিরুদ্ধে, এমন হুঙ্কার শোনা গিয়েছে। কিন্তু আদপে সেই জায়গাতে পৌঁছতে পারেননি নাজমুল হোসেন শান্তরা। প্রথম ইনিংসে প্রথম দিনে ঘুরে দাঁড়িয়ে, শুক্রবার দ্বিতীয় দিনে ভারতের রান সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৭৬। বাংলাদেশ এই রানকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ব্যাট করতে নেমে ব্যর্থতাই প্রকাশ পেল। এমনকি, তাদের ইনিংস শেষ হয়ে গেল মাত্র ১৪৯ রানে। ভারতীয় দলের অধিনায়ক রোহিত শর্মা ইচ্ছে করলেই বাংলাদেশকে ফলোঅন করাতে পারতেন। কিন্তু সেই পথে না গিয়ে ভারতীয় দল দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে শুরু করে। প্রথম ইনিংসে ভারতীয় দল ২২৭ রানে এগিয়েছিল। তারপরে দিনের শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে করে ৩ উইকেট হারিয়ে ৮১ রান। ভারত এই মুহূর্তে ৩০৮ রানে এগিয়ে আছে। হাতে রয়েছে সাতটি উইকেট। দ্বিতীয় দিনের শেষে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, ভারত প্রথম টেস্টে জিততে চলেছে। অর্থাৎ জয়ের গন্ধ ইতিমধ্যেই ভারতীয় শিবিরে।

ম্যাচের দ্বিতীয় দিন সকালে ভারতের প্রথম ইনিংস শেষ হয় ৩৭৬ রানে। প্রথম দিনের শেষে শতরানের মুখে দাঁড়িয়ে থাকা রবীন্দ্র জাদেজা এদিন ঠিকমতো ধাতস্থ হওয়ার আগেই আউট হয়ে যান ৮৬ রানেই। ১৪ রানের জন্য শতরান থেকে বঞ্চিত হলেন রবীন্দ্র জাদেজা। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ইনিংস থামল ১১৩ রানে। ব্যাট হাতে সাধ্য মতো লড়াই করলেন আকাশ দীপও। ১৭ রান করলেন বাংলার অলরাউন্ডার। যশপ্রীত বুমরার ব্যাট থেকে এল ৭ রান। প্রথম দিন ৪ উইকেট নেওয়া হাসান মাহমুদ ৫ উইকেট পূর্ণ করলেন বুমরাকে আউট করে। ৮৩ রানে ৫ উইকেট তাঁর। ৫৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট তাসকিন আহমেদের।
ভারত প্রথম ইনিংসে যেভাবে প্রথম সারির তিন ব্যাটসম্যানকে খুব তাড়াতাড়ি প্যাভিলিয়নে ফেরত যেতে হয়েছিল, ঠিক সেইভাবেই দ্বিতীয় ইনিংসে একই ছবি দেখতে পাওয়া গেল।

ভারতের প্রথম ইনিংসের প্রথম ২৬ ওভার যে ছবি দেখা গিয়েছিল, সেই ছবি আবার ফিরল চিপকে। বাংলাদেশের গোটা ইনিংস জুড়েই ব্যাটসম্যাদের অস্বস্তি চোখে পড়ল। শাকিব হাসান, লিটন দাস এবং মেহদি হাসান মিরাজ ছাড়া বাংলাদেশের কারও মধ্যে উইকেট আঁকড়ে থেকে লড়াই করার চেষ্টা দেখা গেল না। পাকিস্তানের মাটিকে শান মাসুদদের ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ়ে হারিয়ে আসা শান্তদের ভারতের মাটিতে ততটা আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে না। হতে পারে চেন্নাইয়ের অপরিচিত ২২ গজ তাঁদের চাপে রেখেছে। ব্যাটিং অর্ডারের শুরুর দিকের ব্যাটারদের ব্যর্থতা সেই চাপ আরও বৃদ্ধি করে।

দুই ওপেনার শাদমান ইসলাম (২) এবং জ়াকির হাসান (৩) শুরুতেই ফিরে যান। অধিনায়ক শান্ত (২০) কিছুটা চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হলেন মোমিনুল হক (শূন্য), মুশফিকুর রহিমও (৮)। ৪০ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতীয় বোলাররা বাংলাদেশকে কোণঠাসা করে ফেলেন। শাদমানকে আউট করে বাংলাদেশ শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন বুমরা। নবম ওভারে পর পর জ়াকির এবং মোমিনুলকে আউট করে প্রতিপক্ষ দলের চাপ বাড়িয়ে দেন আকাশ। শান্তকে আউট করেন সিরাজ। মুশফিকুরকে সাজঘরে ফেরান বুমরা। বাংলাদেশের প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের চার জন দাঁড়াতেই পারলেন না। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির আগেই ৫ উইকেট হারাতে হয় বাংলাদেশকে।

মধ্যাহ্নভোজের পর কিছুটা লড়াইয়ের চেষ্টা করেন শাকিব ও লিটন দাস। তাঁদের ষষ্ঠ উইকেটে জুটিতে আসে ৫১ রান। ২২ রান করে লিটন আউট হলেন জাদেজার বলে। কয়েক বলের ব্যবধানে আউট শাকিবও (৩২)। তিনিও জাদেজার শিকার। ২২ গজে জমে যাওয়া জুটির দু’জনকেই আউট করে বাংলাদেশকে আবার চাপে ফেলে দেন জাদেজা। টেল এন্ডারদের নিয়ে বাকি লড়াইটা করলেন মেহদি। ২৭ রানের অপরাজিত ইনিংসে জুটি হিসাবে পেলেন হাসান মাহমুদ (৯), তাসকিন আহমেদ (১১) এবং নাহিদ রানাকে (১১)। বুমরা ৫০ রানে ৪ উইকেট নিলেন। ১৯ রানে ২ উইকেট আকাশের। জাদেজাও ২ উইকেট নিলেন ১৯ রান খরচ করে। সিরাজের ২ উইকেট ৩০ রানে। ভাল বল করেও উইকেট পেলেন না অশ্বিন। ভারতীয় বোলারদের দাপটে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস ৪৭.১ ওভারে শেষ হয়ে যায়।

দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সতর্ক হয়ে খেলছেন ভারতের রোহিত শর্মা ও যশস্বী জয়সওয়ালরা। যদিও তাসকিনের হঠাৎ উঠে আসা বলে আউট হয়ে শুরুতেই আউট রোহিত (৫)। অন্য ওপেনার যশস্বী জয়সওয়ালও (১০) তাড়াতাড়ি আউট হয়ে যান। ২৮ রানে ২ উইকেট হারানোর পর ভারতের দ্বিতীয় ইনিংসের হাল ধরেন শুভমন গিল। পিচের এক প্রান্ত আগলে রাখার চেষ্টা করলেন তিনি। সাবধানে খেলার চেষ্টা করেও লাভ হল না কোহলির। ১৭ রান করে মেহদির বলে ফিরলেন প্যাভিলিয়নে। তাঁর আউট ঘিরে অবশ্য হতাশা থাকল ভারতীয় শিবিরে। মেহদির বল কোহলির ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লাগে। বাংলাদেশের আউটের আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার রিচার্ড কেটলবোরো। কিন্তু কোহলি বুঝতেই পারেননি বল তাঁর ব্যাটে সামান্য লেগেছে। তিনি শুভমনের সঙ্গে আলোচনা করলেও রিভিউ নেননি। পরে রিপ্লেতে বোঝা যায়, কোহলি আউট ছিলেন না। তা দেখার পর দৃশ্যতই হতাশ দেখিয়েছে রোহিতদের শিবিরে। দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ হওয়ার সময় অপরাজিত থাকেন শুভমন (৩৩) এবং ঋষভ পন্থ (১২)। বাংলাদেশের রানা ১২ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন। ১৬ রানে ১ উইকেট মেহদির। ১৭ রানে ১ উইকেট তাসকিনের।
ভারতীয় দলের হাতে এখনও ৭ উইকেট আছে। শনিবার রোহিতেরা আরও অন্তত ১৫০ রান যোগ করতে পারলে চাপে পড়ে যেতে পারে বাংলাদেশ। চেন্নাইয়ের পিচে চতুর্থ ইনিংসে ৪৫০ রানের বেশি তাড়া করা বেশ কঠিন হবে সন্দেহ নেই।