অস্ট্রেলিয়ার দাপটে ভারতীয় শিবির একেবারে ছত্রাখান। প্যাট কামিন্সদের কাছে দাঁড়াতেই পারল না রোহিত ব্রিগেড।বর্ডার গাভাসকার ট্রফিতে দ্বিতীয় টেস্টে ভারতের করুন অবস্থা দেখতে হল। অস্ট্রেলিয়া ১০ উইকেটে ভারতকে হারিয়ে দিয়ে ক্ষমতা প্রকাশ করল ঘরের মাঠে। রবিবার দিন রাতের গোলাপী বলে অস্ট্রেলিয়া একছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারে তা আবার প্রমাণ করে দিল। ভারতীয় দল এইভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে তা কেউই বিশ্বাস করতে পারেনি। প্রথম টেস্টে ভারতীয় দল যেভাবে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নিয়ে ছিল তা অভাবনীয়। কিন্তু দ্বিতীয় টেস্টে সেই আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরে গেল। এই হারের ফলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়ন শিপে খেলবার পথ বেশ কঠিন হয়ে গেল ভারতের।
রোহিত শর্মার নেতৃত্বে ভারতীয় দলের এই লজ্জা হারের পিছনে তারকা ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা প্রকট ভাবে দেখা দিয়েছে। টেস্ট এখন তিন দিনের খেলা হয়েছে। পাঁচ দিন দূরাস্ত। আড়াই দিনে টেস্টের পাততাড়ি গুটিয়ে যাচ্ছে। সেই অর্থে টেস্টের গরিমা থাকছে না। অনেকটা একদিনের খেলায় পরিনত হয়েছে। সই টেস্টের মাধুর্য্যতা হারিয়ে গেছে। এই টেস্টে ভারতীয় দলের প্রথম ইনিংসে ১৮০ রানে স্কোর বোর্ড দাঁড়িয়ে যায়। তার জবাবে অস্ট্রেলিয়া ৩৩৭ রান তুলে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। সবাই ভেবেছিলেন ১৫৭ রানে পিছিয়ে থাকলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়ে পাল্টা জবাব দেবে। এই ভাবনা ভাবনাই থেকে গেল। দ্বিতীয় ইনিংসে ১৭৫ রানে ভারতকে থমকে যেতে হল। ভারতকে বেশ অসহায় অবস্থায় দেখা গেল। এক কথায় বলা যায় অস্ট্রেলিয়ার দুরন্ত বোলার ট্রাভিস হেড শুধু শাসন করলেন না বোলারদের সাঁড়াশি আক্রমণে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের নাকানিচোবানি করে একের পর এক উইকেট তুলে নিয়েছেন। বিরাট কোহলি, রোহিত শর্মা, যশস্বী জয়সওয়াল লোকেশ রাহুল, ঋষভ পন্থ ও শুভমান গিলরা মাথা নিচু করে প্যাভেলিয়নে ফেরত গেলেন। ভারতীয় শিবিরে অসহায়তার ছবি স্পষ্ট হল। তাইতো দ্বিতীয় দিনের শেষে ভারতীয় দলের রান সংখ্যা ছিল ৫ উইকেটে ১২৮ রান। ক্রিজে ছিলেন ঋষভ পন্থ ২৮ রানে আর নীতিশ রেড্ডি ১৫ রানে। এই অবস্থায় তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করে ভারতীয় দল ১৭০ রানে ইনিংস শেষ করে। ঋষভের ব্যাট থেকে রান আসার আগে আউট হয়ে যান।
ঋষভ মিচেল স্টাকের বলে স্টিভ স্মিথের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ২৮ রানেই প্যাভেলিয়নের পথে পা বাড়ান। নীতিশ কিছুটা ধরে খেলবার চেষ্টা করে অর্ধশতরানের দোর গোড়ায় গোড়ায় পৌঁছে আউট হয়ে যান। নীতিশ ৪২ রানে প্যাটকামিন্সের বলে নাথানের হাতে ক্যাচ দেন। তারপরে ভারতীয় শিবিরে ধস নেমে আসে। সেইভাবে কেউই রান উপহার দিতে পারেননি। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, হর্ষিত রানা ও মহম্মদ সিরাজের ব্যাটে সেই অর্থে রান আসেনি। ভারত মাত্র ১৮ রানে এগিয়ে থাকে।
অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের জন্যে প্রয়োজন ছিল মাত্র ১৯ রানে। এই ১৯ রান তুলতে অস্ট্রেলিয়ার কোনও বেগ পেতে হয়নি। দুই ওপেনার নাথান ও উসমান সেই কাজটা সেরে ফেলেন। নাথান করেন ১০ রান। আর উসমানের ব্যাট থেকে আসে ৯ রান। অর্থাৎ অস্ট্রেলিয়া অনেকটা ছেলে খেলা করে ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়ে নজির গড়ে ফেললো।
ভারতের এই হারে লজ্জাজনক নজির স্পর্শ করলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। রোহিতের নেতৃত্বে টানা চারটে ম্যাচে হর স্বীকার করলেন রোহিত। এর আগে টানা চারটে ম্যচে হারের তালিকায় ছিলেন বিরাট কোহলি, মহেন্দ্রসিং ধোনি, শচীন তেন্ডুলকর, দত্ত গাইকোয়াড এবং মনসুর আলি খান পতৌদি। রোহিত দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের তিনটি ম্যাচ হেরেছিলেন। আর এদিন অ্যাডিলেডের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারলেন। তবে প্রথম টেস্টে যশপ্রীত বুমরার নেতৃত্বে ভারতীয় দল জয় পেয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষ। ভারতীয় দল ১৯৫ রানে জয় পেয়েছিল। পরের ম্যাচে ব্রিসবেনে শুরু হওয়ার আগে ভারতীয় দল বেশ চাপে পড়ে গেল তা নতুন করে বলার কিছু নেই।