• facebook
  • twitter
Monday, 28 April, 2025

আজ সম্মান রক্ষার ম্যাচে লাল হলুদ ও সাদা কালো ব্রিগেড

সমর্থকদের পাশে থাকার আহ্বান কোচ অস্কারের

ফাইল চিত্র

ইস্টবেঙ্গলের কাছে রবিবার যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে সম্মান রক্ষার ম্যাচ মহমেডান স্পোর্টিংয়ের বিরুদ্ধে। চলতি মরশুমে আইএসএল ফুটবলে লাল হলুদ ব্রিগেডে যে করুণ অবস্থা তার জন্য হতাশ সমর্থকরা। শুধু তাই নয় ইস্টবেঙ্গলের ব্যর্থতার জন্য সমর্থকদের বিক্ষোভ এমন জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিল তা সামাল দেওয়ার জন্য কর্মকর্তাদের ছুটে আসতে হয়েছিল। কোচ অস্কার ব্রুজো নিজেও বেশ ব্যথিত। তাই তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, সমলোচনা করুন কিন্তু এমন কোনও ঘটনা ঘটাবেন না যেখানে ফুটবলাররা তাঁদের আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন।

চলতি আইএসএলের প্রথম লেগের খেলায় সাদা কালো শিবিরের বিরুদ্ধে প্রথম পয়েন্ট পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। আধ ঘণ্টার মধ্যে দু’জন ফুটবলার লাল কার্ড দেখলেও বাকি ম্যাচে যে ভাবে ন’জনের ইস্টবেঙ্গল লড়াই করেছিল মহমেডানের সঙ্গে, তা প্রশংসা করতেই হবে। ফিরতি লেগে দুই ক্লাবের পরিস্থিতি হতাশাজনক। মহমেডান এই মুহূর্তে লিগ টেবলে একেবারে সবার নিচে অবস্থান করছে। ইস্টবেঙ্গলের অবস্থাও খুব একটা ভালো জায়গায় নেই। তবুও লাল হলুদ ব্রিগেড প্লে-অফের আশা জাগিয়েও একের পর এক ম্যাচ হেরেছে। এই পরিস্থিতিতে রবিবার যুবভারতীতে মহমেডানকে হারিয়ে সম্মানরক্ষা ম্যাচে জিততে চায় ইস্টবেঙ্গল।

চেন্নাইয়িনের কাছে হারের পরেই কোচ অস্কার ব্রুজ়োত বলে দিয়েছিলেন, তাঁরা আর প্লে-অফের আশা করছেন না। মহমেডান ম্যাচের আগেও একই কথা বললেন। তবে এ বার পরিস্থিতি আরও খারাপ সমর্থকদের বিক্ষোভের কারণে। শনিবার সাংবাদিক বৈঠকের শুরুতেই এই ব্যাপারটা তুলে ধরেন কোচ অস্কার ব্রুজো। তিনি বলেন, “সমর্থকদের রাগ করার অধিকার রয়েছে। আমরা সত্যিই ভাল খেলতে পারিনি। এ বার আমাদের উচিত নিজেদের দিকে তাকানো। নিজেদেরই সমালোচনা করা উচিত। বুঝতে হবে, এ ভাবে হারতে থাকলে এই ক্লাবে থাকার যোগ্য নই আমরা। এত বড় ক্লাব কখনওই শেষ স্থানের জন্য লড়াই করতে পারে না। সমর্থকেরা এমন কাজ করেছেন মানে, আমরা নিজেদের কাজটা ঠিক করে করছি না। এই সমালোচনা মেনে নিতেই হবে। আমাদের কাছে বলার মতো কিছু নেই। তবে এটা চাপ নয়, আমাদের কাছে অনুপ্রেরণা। বাস্তব মেনেই এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।”

অস্কার আরও বলেছেন, “আমরা এখন যে জায়গায় রয়েছি তাতে আশা করতে পারি না লোকে এসে ফুল উপহার দেবেন না বা ভাল ভাল কথা বলবেন না। আমরা এখন সম্মানের জন্য লড়াই করছি। সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারিনি। কিন্তু মাঠের সমস্যাগুলো এড়াতে পারছি না। দলের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আশা করি এ ভাবেই শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকতে পারব। সবাইকে লজ্জায় ফেলেছি।”

অঙ্কের হিসাবে ইস্টবেঙ্গলের প্লে-অফের আশা বেঁচে থাকলেও অস্কারের নজরে এখন শুধুই সুপার কাপ এবং চ্যালেঞ্জ লিগে ভাল ফল করা। লাল-হলুদ কোচের উত্তর, ‘এখন প্রথম ছয়ে শেষ করা অসম্ভব। আগের ম্যাচ পর্যন্তও আশা ছিল। আমরা এখন পয়েন্ট তালিকায় উপরের দিকে শেষ করার চেষ্টা করতে পারি। যদিও এটা জানি, প্রথম ছয়ে শেষ না করলে আপনি ১০, ১১, ১২ যেখানেই শেষ করুন তার কোনও অর্থ নেই। এখন আমাদের সামনে সুপার কাপ, চ্যালেঞ্জ লিগ রয়েছে। সেখানে ভাল ফল করতে চাই আমরা। তাই আমাদের আশা এখনও বেঁচে রয়েছে। সেই ভাবনাতেই আমাদের লড়াইটা হবে আগ্রাসী ভূমিকায়। ফুটবল খেলায় একটাই কথা দলের জয়। আর এই জয়ের জন্য প্রয়োজন গোল। সেই গোলটা করতে না পারলে খেলার কোনও অর্থই বড় দেখা দিতে পারে না।’

শনিবারও জিকসন সিংহ এবং রিচার্ড সেলিসকে অনুশীলন করতে দেখা যায়নি। সাইডলাইনে বসে রিহ্যাব করলেন। অনুশীলন করেননি নাওরেম মহেশও। তাঁর পায়ে আইস প্যাক বাঁধা ছিল। রবিবার রক্ষণে আনোয়ার আলি এবং হেক্টর ইয়ুস্তেকে প্রথম একাদশে দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা। লালচুংনুঙ্গা নির্বাসিত থাকায় সেই জায়গায় খেলতে পারেন মহম্মদ রাকিপ। বাঁ দিকে খেলবেন নিশু কুমার। তবে নিশু কুমারকে কোচ বার বার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, খেলার সময় তাড়াহুড়ো করার কোনও প্রয়োজন নেই। প্রতিপক্ষ দলের আক্রমণকে প্রতিহত করার সময় ঠান্ডা মাথায় খেলতে হবে। গত ম্যাচে আত্মঘাতী গোল হয়েছে বলে হতাশ হবার কোনও কারণ নেই।
আক্রমণে দিমিত্রিয়স দিয়ামানতাকোস এবং রাফায়েল মেসি বোউলির উপরেই দায়িত্ব বর্তাবে। দু’জনকেই শুরু থেকে দেখা যেতে পারে। বাঁ প্রান্তে মহেশের জায়গায় ডেভিড লালানসাঙ্গাকে খেলাতে পারেন কোচ অস্কার।

চেন্নাইয়িনের কাছে হারের পর দলের একটা বদল হঠাৎ করেই চোখে পড়েছে অস্কারের। নিজেই বললেন, ‘এখন আমরা অনেক বেশি নিজেদের দিকে নজর দিচ্ছি। প্রতিপক্ষকে নিয়ে বেশি করে ভাবছি, ওদের কৌশল ভেঙে ম্যাচ জেতার পরিকল্পনা তৈরি করছি। তবে আগের ম্যাচে যা হয়েছে তার জন্য আমি লজ্জিত।’

প্রথম বার সাংবাদিকদের সামনে আসা মেসি বোউলির গলায় কিঞ্চিৎ অনুযোগ। তিনি বললেন, ‘যে কোনও দলে যোগ দেওয়ার পরে মানিয়ে নিতে একটু সময় লাগে। তবে ইস্টবেঙ্গলে সেই সময়টুকুও পাইনি। তাতে অসুবিধা নেই। পেশাদার ফুটবলাররা সবকিছু মানিয়ে নেন। দলের কথা মাথায় রেখে পারফর্ম করব। সবার আগে দলের কথা ভাবতে হবে।’

ফুটবলারদের কাছে এখন সবচেয়ে বড় সম্মান হয়ে দাঁড়াবে দর্শকদের মুখে যদি জয়ের হাসি ফোটাতে পারেন। সেই কারণেই ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোটিং ক্লাবের মধ্যে মর্যাদার লড়াইয়ে কে বাজিমাৎ করবে সেটাই এখন মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাদা কালো ব্রিগেডও চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে ইস্টবেঙ্গলকে চাপের মুখে রাখার চেষ্টা করবে।