নিজস্ব প্রতিনিধি— ইডেন উদ্যানে আবার কলকাতা নাইট রাইডার্সকে হারতে হলো। মঙ্গলবার লখনউ সুপার জায়ান্টসের সঙ্গে কলকাতার লড়াইটা দেখবার জন্যে চড়া রোদ্দুরকে উপেক্ষা করে ইডেনে ছুঁটে এসেছিলেন ক্রিকেট ভক্তরা। প্রত্যেকেরই আশা ছিল অজিঙ্কা রাহানের ব্রিগেড জয় উপহার দেবেন দর্শকদের। কিন্তু আশা হত প্রত্যেকেই। একটা সময় রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের মুখে দাঁড়িয়ে কলকাতা হয়তো স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল জয়ের। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভঙ্গ হয়ে গেল। মাত্র ৪ রানে লখনউয়ের কাছে হার মেনে নিতে হল কলকাতাকে। একটা সময় চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কলকাতার খেলোয়াড়রা ঝোড়ো ব্যাটিং শুরু করেছিলেন কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারলেন না। লখনউ দলের ২৩৮ রানের জবাবে কলকাতা খেলতে নামে জয়ে লক্ষ্যে। কিন্তু ২৩৪ রানে কলকাতা ২০ ওভারের খেলা শেষ করে। এই হারটা কিছুতেই মেনে পারেননি ক্রিকেট প্রেমীরা। তবে এদিন দু’দলের ব্যাটিংয়ের দাপটও দেখতে পেয়েছে ইডেন।
টসে জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন কলকাতার অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে। লখনউ যখন ব্যাট করছে তখন কলকাতা দলের বোলারদের সেই দাপট দেখতে পাওয়া যায়নি। গত ম্যাচে হায়দরাবাদকে যেভাবে কোনঠাসা করে দিয়ে বোলাররা জয় এনে দিয়েছিলেন। আর এদিন সেই ছবিটা দেখতে পাওয়া গেল না। কলকাতা দলে ছিলেন না মইন আলি। অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে বিশেষ করে পেসার জনসনের উপরেই বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু বোলার জনসন হতাশ করেছেন দলকে। আবার বৈভব অরোরা ও বরুণ চক্রবর্তীরা সেইভাবে দাগ কাটতে পারেননি। আসলে লখনউ দলের মিচেল মার্শ দারুন ফর্মে রয়েছেন। যার ফলে মার্শকে সেইভাবে ভয় দেখাতে পারেননি কেকেআরের বোলাররা। প্রথম উইকেটে যদি কোনও দল ৯৯ রান তুলে নিতে পারে সেক্ষেত্রে সেই দলের প্রতি জয়ের সম্ভাবনা থাকতেই পারে।
এমনকি এডেন মার্করামকে ফর্মে ফিরিয়ে দিয়েছে কেকেআরের বোলাররা। মার্করাম প্যভেলিয়নের ফিরত গেলেও কেকেআরের কাছে অস্বস্তি কমেনি। আবার নিকোলাস পুরান যেভাবে দাপট দেখিয়েছেন তা ভাবা যায় না। হর্ষিত রানা পরপর দুটি বলে ছক্কা মেরে মাত্র ২১ বলে অর্ধশত রান করেন। সুনীল নারাইন, বরুণ চক্রবর্তী থেকে শুরু করে ভেঙ্কটেশ আইয়ার ও রিঙ্কু সিংদের মতো পার্টটাইম স্পিনারদের পাত্তাই দেননি লখনউয়ের ব্যাটসম্যানরা। এমন কি বল করতে আসেন আন্দ্রে রাসেল। শেষ পর্যন্ত দেখা যায় পুরান ৭টি চার ও ৮টি ছক্কা মেরে ৩৬ বলে ৮৭ রানে অপরাজিত থাকেন। আর একটু সুযোগ পেলেই তিনি শতরান করার কৃতিত্ব দেখাতেন।
এদিন প্রথম ব্যাট করতে নেমে ২০ ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে ২৩৮ রান তোলে লখনউ। লখনউয়ের এই বড় রানের স্কোরবোর্ডকে সামনে রেখে কেকেআর দল শুরুটা খুব একটা খারাপ করেনি। কুইন্টন ডি’কক ও সুনীল নারাইন বেশ স্বচ্ছন্দে ব্যাট করছিলেন। কিন্তু তারপরেই ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন ভেঙ্কটেশ। এরপর নারিন আউট হলে সেই দায়িত্ব নেন নাইট অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে। তার ৩৫ বলে ৬১ রানের ইনিংস দেখে যখন মনে হচ্ছিল কেকেআরের জয় শুধুই সময়ের অপেক্ষা তখনই হঠাৎ ছন্দপতন। শার্দুল ঠাকুরের বলে পুরাণের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরলেন নাইট অধিনায়ক। আর এরপর থেকেই শুরু হলো আসা-যাওয়ার খেলা। রাহানের দেখানো পথ ধরে একে একে সাজঘরে ফিরলেন অঙ্গকৃশ রঘুবংশী, আন্দ্রে রাসেল, রমনদীপ সিং ও ভেঙ্কটেশ আইয়াররা। সেখান থেকে দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন রিঙ্কু সিং। হর্ষিত রানাকে সঙ্গী করে একটা শেষ চেষ্টা করেন তিনি। তবে, তা সফল হলো না। তবে আউট হওয়ার আগে ভেঙ্কটেশও একটা মরিয়া চেষ্টা করেছিল বটে, কিন্তু তা জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না। শেষপর্যন্ত, ৪ রানে লখনউয়ের কাছে হার স্বীকার করতে হলো রাহানেদের। এদিনের এই ম্যাচে হারের ফলে লিগ টেবলে একধাপ নেমে গেল নাইট রাইডার্স।
এদিন কলকাতায় লখনউয়ের অধিনায়ক ব্যাট পরে প্রস্তুত ছিলেন খেলতে নামার জন্য। কিন্তু মিচেল মার্শ ও পুরানের বিধ্বংসী ব্যাটিং করার পরে লখনউ দলে অন্য কোনও খেলোয়াড়দের মাঠে নামার প্রয়োজন হয় না। ঠিক ছিল আবদুল সামাদ আউট হয়ে যাওয়ার পরে মাঠে নামবেন ঋষভ পন্থ। কিন্তু ঋষভ ব্যাটিং না করে নিজেকে কেন লুকিয়ে রাখলেন তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেল।