আইএফএ-র উদাসীনতায় কলকাতা ফুটবল লিগ কবে শেষ হবে কেউই জানেন না

প্রতীকী চিত্র

কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের ৩টে ম্যাচের জন্য প্রিমিয়ার ডিভিশনের চ্যাম্পিয়নশিপের মীমাংসা হচ্ছে না। গত মরশুমেও কলকাতা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগের চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা নিয়ে এভাবেই ডামাডলের সৃষ্টি হয়েছিল। ২৫শে জুন থেকে লিগের খেলা শুরু হয়েছে। প্রাথমিক পর্বের খেলাগুলো তড়িঘড়ি করে ২মাসের মধ্যে শেষ করে দেওয়া হয়েছে।২মাসের মধ্যে ২৬ দলের লিগের প্রতিটা দল ১২টা করে ম্যাচ খেলেছে। কিন্তু ৬দলের সুপার সিক্সের চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা বিগত ৩মাসের মধ্যে শেষ করা গেলনা।শেষ ২মাস কোনো খেলা হয়নি।১টা ম্যাচের জন্য ভবানীপুর ক্লাব তাদের খেলোয়াড়দের কিভাবে ধরে রাখতে পারবে? ভবানীপুর ক্লাবের সামনে গত ২মাস কোনো খেলাই ছিলনা।

কলকাতা প্রিমিয়ার ডিভিশনের ক্লাবগুলোর পক্ষে এভাবে টিম পরিচালনা করা যায় না। বড় দলগুলো ছাড়া এভাবে টিম ধরে রাখার বাজেট সুপার ডিভিশনের কোনো ক্লাবেরই থাকেনা। সুপার সিক্সের এমন নমুনা দেখে প্রিমিয়ার লিগের কটা ক্লাব সুপার সিক্সে খেলার আগ্রহ দেখাবে? ছোট দলগুলোর কথা ছাড়াও মোহনবাগানের মত ঐতিহ্যবাহী দল সুপার সিক্সের খেলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। এবার মোহনবাগানের সুপার সিক্সে না থাকাটা অনেকের মনেই রহস্যজনক মনে হয়েছে। গভীরভাবে এর পর্যালোচনা কি হয়েছে? আইএসএলে টিমগুলোর কাছে লিগের সূচীর সুনির্দিষ্ট রূপরেখা না থাকলে তাদের পক্ষে এভাবে লিগে অংশগ্রহণ করা নিশ্চয়ই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কলকাতা লিগের এই কাঠামো পরিবর্তন নিয়ে আইএফএকে দ্রুত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হতো।

আইএফএ প্রিমিয়ার ডিভিশনের খেলাকে পরিচালনার ক্ষেত্রে তাদের দৈন্যদশা দেখাচ্ছে। সাধারণত যে ফর্মুলায় প্রিমিয়ার লিগের খেলা হয়, সেখানে অধিকাংশ টিমের ক্ষেত্রে তিন বড় দলেরই বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ সাধারণত নেই বললেই চলে।অথচ,সব ছোটদলের ফুটবলারদের বড়দলগুলোর বিরুদ্ধে খেলার স্বপ্ন থাকে। ক্লাবের স্পনসেরাও চায় তাদের টিম তিন বড় দলের বিরুদ্ধে খেলুক। আইএফএর খামখেয়ালি সিদ্ধান্তের দরুন খেলোয়াড় ও ক্লাবগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


বারেবারে আইএফএ তাদের সিদ্ধান্তের পরিবর্তন করছেন। কখনও প্রিমিয়ারের দুটো বিভাগকে একত্র করে দেওয়া হ’ল! কখনও প্রিমিয়ার ও প্রথম ডিভিশনে ওঠানামার সংখ্যার ৪ কিংবা ২করে দেওয়া হলে।একেরপর এক এমন দ্রুত সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে ফুটবল মহল রাজনৈতিক প্রভাবের কথা বলছে।গত ২বছর ধরেই প্রিমিয়ার লিগের বিভিন্ন ম্যাচ নিয়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ উঠে আসছে।একদিকে রাজনৈতিক প্রভাব ও অপরদিকে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের মত গুরুতর অভিযোগ –কোনও ক্ষেত্রেই আইএফএ কঠোর মনোভাব নিতে পারছেনা।একটা স্বাধীন সংস্থা ক্রমশ তাদের নিজস্বতা হারিয়ে ফেলছে। কলকাতা লিগ তার অতীত গুরুত্ব ধরে রাখতে পারছেনা।

একসময় কলকাতা লিগের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকায় দেশের বিভিন্নপ্রান্তের প্রতিভাবান ফুটবলাররা বাংলায় ছুটে আসতো।এখন কলকাতা লিগে অতি সাধারন মানের ভিন্নরাজ্যের ফুটবলারা অনায়াসেই খেলার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আইএফএর এত বিশাল সংখ্যার টিম নিয়ে প্রিমিয়ার লিগ করানোর সিদ্ধান্তকে দায়ী করা হচ্ছে।২৬টা দল নিয়ে প্রিমিয়ার ডিভিশনের খেলা করার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংখ্যায় কোচ ও ফুটবলার বাংলায় আছে কিনা তার পর্যালোচনা ছাড়াই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।ফলে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের মান যেমন কমেছে,তেমন লিগের খেলায় নানা অভিযোগ উঠে আসছে।

কলকাতা লিগের গুরুত্বের নিরিখে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ফুটবলারদের বাংলায় ছুটে আসার ক্ষেত্রে ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার কারন গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ভারতীয় দলে বাংলার ফুটবলারদের প্রাধান্য সেক্ষেত্রে দেশের প্রতিভাবান উঠতি ফুটবলারদের প্রভাবিত করতো। বর্তমান সময়ে ভারতীয় দলে এখন বাংলার ফুটবলার বিশেষতঃ বাঙালি ফুটবলারদের আধিপত্য কেবল কমেনি, ক্রমশঃ শূন্যে গিয়ে পৌঁছেছে। কলকাতা প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে বর্তমান টালবাহানা চোখে আঙুল দিয়ে আইএফএর উদাসীনতা দেখিয়ে দিচ্ছে।