নিজস্ব প্রতিনিধি— আইপিএল ক্রিকেটে ৫৪টি ম্যাচ হয়ে গিয়েছে৷ রবিবার কলকাতা নাইটরাইডার্স লখনউ সুপার জায়ান্টসে হারিয়ে লিগ টেবলে এই মুহূর্তে শীর্ষস্থান দখল করে নিয়েছে৷ তবে, এখনও পর্যন্ত প্লে অফ ম্যাচ খেলার জন্য কোনও দলই পাকা কথা বলতে পারছে না৷ অবশ্য ছিটকে যাওয়ার সম্ভাবনাও সেইভাবে দেখা দেয়নি৷ প্লে অফে উঠতে গেলে প্রতিযোগিতার ১০টি দলের সামনে বেশ কিছু অঙ্ক রয়েছে৷ আইপিএল ক্রিকেটে প্রথম দু’টি দল এই মুহূর্তে রয়েছে কলকাতা নাইটরাইডার্স ও রাজস্থান রয়্যালস৷ দু’টি দলেরই একই পয়েন্ট (১৬)৷ এরপরে যে তিনটি দল রয়েছে প্রত্যেকেরই ১২ করে পয়েন্ট রয়েছে৷ এই তিনটি দল হল চেন্নাই সুপার কিংস, সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ও লখনউ সুপার জায়ান্টস৷ অর্থাৎ বলতেই পারা যায়, প্রতিযোগিতা বেশ জমে উঠেছে৷ সব দলেরই চোখ রয়েছে প্লে অফ ম্যাচ খেলার দিকে৷
কলকাতা নাইট রাইডার্স ইতিমধ্যে ১১টি ম্যাচ খেলে ফেলেছে৷ তার মধ্যে তারা তিনটি ম্যাচে হার স্বীকার করেছে৷ অর্থাৎ তাদের সংগ্রহে রয়েছে ১৬ পয়েন্ট৷ রানরেট ১.৪৫৩৷ মুম্বই ক্যাপিটালস, পাঞ্জাব কিংস ও রাজস্থানের সঙ্গে খেলা বাকি রয়েছে কলকাতার৷ আইপিএল ক্রিকেটে পয়েন্টের তালিকায় প্রথম পাঁচ দলের সুযোগ রয়েছে প্লে অফ ম্যাচ খেলার৷ তাদের এখন পয়েন্ট করতে হবে ১৮৷ এই পাঁচ দলের মধ্যে নিজেদের মধ্যেও খেলা রয়েছে৷ এটা ঠিক, এই ম্যাচগুলির মধ্যে কোনও না কোনও দল পয়েন্ট নষ্ট করবে৷ সেই জায়গায় একটি ম্যাচ জিতলেই কেকেআর প্রথম চারে জায়গা পাকা করে নেবে৷ আগামী ১১ মে, শনিবার কলকাতার ইডেন উদ্যানে কলকাতা খেলবে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে৷ কলকাতার সুযোগ রয়েছে প্রথম দুইয়ের মধ্যে শেষ করার৷ তার জন্য তিনটি ম্যাচ জিততে হবে শ্রেয়স আইয়ারদের৷ তখন কলকাতার পয়েন্ট দাঁড়াবে ২২৷ একমাত্র রাজস্থান সেই পয়েন্টে পৌঁছতে পারবে৷ যদি কেকেআর দু’টি ম্যাচ জেতে, তাহলে তাদের আশা করতে হবে, হায়দরাবাদ যেন অন্তত একটি ম্যাচ হারে৷ তাহলেই প্রথম দুইয়ে শেষ করবে কেকেআর৷
অন্যদিকে রাজস্থান রয়্যালস ১০ ম্যাচে ১৬ পয়েন্ট৷ নেট রানরেট ০.৬২২৷ দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও কেকেআরের থেকে একটি ম্যাচ কম খেলেছে রাজস্থান৷ তাদের বাকি ম্যাচ দিল্লি, চেন্নাই, পাঞ্জাব ও কলকাতার বিরুদ্ধে৷ কেকেআরের নয়মেই আর একটি ম্যাচ জিতলে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে রাজস্থানের প্লে-অফ পাকা৷ চারটির মধ্যে তিনটি ম্যাচ জিতলে প্রথম দুইয়ে শেষ করবেন সঞ্জু স্যামসনরা৷ সেক্ষেত্রে তাদের পয়েন্ট হবে ২২৷ কেকেআর ছাড়া কোনও দল সেই পয়েন্ট পৌঁছতে পারবে না৷
আবার চেন্নাই সুপার কিংসের ১১ ম্যাচে ১২ পয়েন্ট৷ নেট রানরেট ০.৭০০৷ বাকি তিনটি ম্যাচ গুজরাত, রাজস্থান ও বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে৷ সেই তিনটি ম্যাচ জিতলে চেন্নাইয়ের পয়েন্ট হবে ১৮৷ হায়দরাবাদ ও লখনউয়েরও সুযোগ রয়েছে ১৮ পয়েন্টে পৌঁছনোর৷ তাই মহেন্দ্র সিং ধোনিদের আশা করতে হবে লখনউ যাতে একটি ম্যাচ হারে৷ তাহলেই প্লে-অফ পাকা হবে চেন্নাইয়ের৷
সেই সুযোগ রয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদেরও৷ ১০ ম্যাচে তারে পয়েন্ট ১২৷ নেট রানরেট ০.০৭২৷ বাকি চারটি ম্যাচ মুম্বই, লখনউ, গুজরাত ও পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে৷ চারটি ম্যাচ জিতলে ২০ পয়েন্ট হবে প্যাট কামিন্সদের৷ সেক্ষেত্রে প্লে-অফে ওঠার জন্য অন্য কোনও দলের দিকে তাকাতে হবে না তাদের৷ তিনটি ম্যাচ জিতলেও ১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফে উঠতে পারবে হায়দরাবাদ৷ সেক্ষেত্রে চেন্নাই ও লখনউয়ের মধ্যে একটি দলকে একটি ম্যাচ হারতে হবে৷
লখনউ সুপার জায়ান্টস ইতিমধ্যে ১২ পয়েন্ট পেয়েছে ১১ ম্যাচ খেলে৷ বাকি তিনটি ম্যাচ তাদের খেলতে হবে হায়দরাবাদ, দিল্লি ও মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে৷ তিনটি ম্যাচ না জিতলে তাদের প্লে-অফ ম্যাচে খেলা পাকা হবে না৷ তার কারণ হল, চেন্নাই ও হায়দরাবাদ থেকে তাদের নেট রানরেট অনেকটা কম৷ সেই কারণেই অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের আশা করতে হবে চেন্নাই যাতে একটা ম্যাচ হেরে যায়৷ তাহলে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে প্লে-অফ ম্যাচ খেলার সুযোগ তাদের থাকবে৷
তবে দিল্লি ক্যাপিটালস ১০ পয়েন্ট পেয়েছে ১১ ম্যাচ শেষে৷ তারা রাজস্থান, বেঙ্গালুরু ও লখনউয়ের বিরুদ্ধে খেলবে৷ ঋষভ পন্থদের তিনটি ম্যাচেই জিততে হবে৷ তখন তাদের পয়েন্ট হবে ১৬৷ চেন্নাই, লখনউ যেন তাদের তিনটি ম্যাচের মধ্যে একটির বেশি জিততে না পারে সেদিকে চোখ থাকবে৷ সেক্ষেত্রে দু’দলের পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়াবে ১৪-তে৷ তখন দিল্লি প্লে-অফে খেলার সুযোগ পেতে পারে৷
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু ১১ ম্যাচ খেলে ৮ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে৷ তারা এখন খেলবে দিল্লি, পাঞ্জাব ও চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে৷ তিনটি দলকে হারাতে পারলে বিরাট কোহলিদের পয়েন্ট হবে ১৪৷ পাশাপাশি তাদের এটাও লক্ষ্য রাখতে হবে, চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও লখনউ যাতে একটির বেশি আর দিল্লি দু’টির বেশি ম্যাচ জিততে না পারে৷ সেক্ষেত্রে চারটি দলের পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়াবে ১৪৷ তখন নেট রান রেটে প্লে-অফ ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকবে বেঙ্গালুরুর৷
পাঞ্জাব কিংসের ১১ ম্যাচ খেলে ৮ পয়েন্ট৷ তাদের কিন্ত্ত ম্যাচ বাকি আছে৷ তাদের খেলতে হবে বেঙ্গালুরু, রাজস্থান ও হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে৷ তিনটি ম্যাচ জিতলে তাদের পয়েন্ট গিয়ে দাঁড়াবে ১৪৷ তখন তাদের আশা রাখতে হবে চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও লখনউ যাতে একটির বেশি আর দিল্লি দু’টির বেশি ম্যাচ জিততে না পারে৷ তখন তাদের পয়েন্ট ১৪ হলেও নেট রান রেটের বিচারে পাঞ্জাবের প্লে-অফ ম্যাচ খেলার সুযোগ থাকবে৷ গুজরাট টাইটানস সমসংখ্যক খেলায় সমসংখ্যক পয়েন্ট সংগ্রহ করেছে৷ অর্থাৎ ১১ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট৷ গুজরাটকে খেলতে হবে চেন্নাই, কলকাতা ও হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে৷
যদি তিনটি ম্যাচই জেতে, তাহলে শুভমন গিলদের পয়েন্ট হবে ১৪৷ তখন তাদের অপেক্ষা করতে হবে চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও লখনউ যাতে একটির বেশি আর দিল্লি দু’টির বেশি ম্যাচ না জিততে পারে৷ আবার বেঙ্গালুরু ও পাঞ্জাবকেও পয়েন্ট নষ্ট করতে হবে৷ তখনই সম্ভব হবে নেট রানের বিচারে শুভমনদের প্লে-অফ ম্যাচ খেলার৷ কিন্ত্ত ব্যাপারটি বেশ কঠিন৷
মুম্বই ইন্ডিয়ান্স এখনও পর্যন্ত লিগ টেবলে সবচেয়ে নীচে রয়েছে৷ তারা ১১ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট পেয়েছে৷ বাকি রয়েছে তিনটি ম্যাচ৷ খেলতে হবে হায়দরাবাদ, কলকাতা ও লখনউয়ের বিরুদ্ধে৷ যদি তিনটি ম্যাচই জেতে, তাহলে হার্দিক পাণ্ডিয়াদের পয়েন্ট হবে ১২৷ তারপরে অনেকটা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে থাকতে হবে চেন্নাই, হায়দরাবাদ ও লখনউয়ের ম্যাচগুলির দিকে৷ দিল্লি একটির বেশি, বেঙ্গালুরু, পাঞ্জাব ও গুজরাটকে একটি করে ম্যাচ হারতে হবে, তাহলেই তাদের পয়েন্ট হবে ১২৷ তখন নেট রান রেটের বিচারে মুম্বইয়ের প্লে-অফে ওঠার একটা সুযোগ থাকলেও থাকতে পারে৷ কিন্ত্ত এটা আরও কঠিন ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ এককথায় বলা যায়, মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের প্লে অফ ম্যাচ খেলার কোনও সুযোগই নেই৷