ভারতীয় টেস্ট দলে জায়গা পেয়ে নীতিশ কুমার বেশ ভালোই ব্যাট করছিলেন। এমনকি উদীয়মান ব্যাটসম্যান হিসেবে সবার নজরেও চলে এসেছেন। কিন্তু ভালো খেলেও নীতিশ চতুর্থ টেস্ট ম্যাচে প্রায় বাদের তালিকায় চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু যে কারণেই হোক, নীতিশকে দলে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় একেবারে শেষ মুহূর্তে। বাদ চলে যান শুভমন গিল। নীতিশ কুমার চতুর্থ টেস্টে জায়গা পেয়ে নিজেকে প্রমাণ করে দিলেন, তিনি জাত ক্রিকেটার। তাঁর ব্যাট থেকে তৃতীয় দিনের শেষে ১০৫ রান এসেছে। অপরাজিত ব্যাটসম্যান হিসেবে উইকেটে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। নীতিশের এই শতরান করার ফলে ১২২ বছরের ইতিহাস পাল্টে গেল। তিনি মেলবোর্নের মাঠে অষ্টম ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতে নেমে শতরান করার কৃতিত্ব দেখালেন।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, মেলবোর্নের মাঠে আট নম্বরে বা তার নীচে কোনও ব্যাটসম্যান খেলতে নেমে এত বেশি রান করতে পারেননি। ১২২ বছরের নজির ভেঙে দিয়ে তিনি শিরোনামে উঠে এলেন। এর আগে এমন নজির গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার রেজিনাল্ড আলেকজান্ডার ডাফের। তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১০৪ রান করেছিলেন। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার জে এম গ্রেগরি এবং আর আর লিন্ডওয়ালে ১০০ রান করেছিলেন। নির্দিষ্ট আট নম্বরে খেলতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার মিচেল জনশন ৯২ রানে অপরাজিত ছিলেন ২০২২ সালে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে।
ভারতীয় দলের কোনও ব্যাটসম্যান আট বা তার নীচে নেমে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ রান করার কৃতিত্ব দেখালেন নীতিশকুমার রেড্ডি। এর আগে অনিল কুম্বলের রেকর্ড ছিল। অ্যাডিলেডে ২০০৮ সালে ৮৭ রান করেছিলেন তিনি। এছাড়া রবীন্দ্র জাদেজা, কিরণ মোড়ে, শার্দুল ঠাকুর এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ব্যাট থেকে এসেছিল ৫০ রান। কিন্তু কেউই শতরান করতে পারেননি। ভারতের সবচেয়ে কমবয়সি ক্রিকেটার বক্সিং ডে টেস্টে শতরান করার কৃতিত্ব দেখালেন নীতিশকুমার রেড্ডি। তাঁর বয়স এখন ২১ বছর ২১৬ দিন। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে তৃতীয় কনিষ্ঠতম ভারতের ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি শতরান করলেন। কিন্তু বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে এত কম বয়সে কেউ শতরান করেননি। তবে বক্সিং ডে টেস্ট ম্যাচে বীরেন্দ্র সেওয়াগের শতরান আছে। ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে তিনি ১৯৫ রান করেছিলেন। তখন শেওয়াগের বয়স ছিল ২৫ বছর ৬৭ দিন। শচীন তেণ্ডুলকরেরও শত রান আছে। তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর ২৪৬ দিন। বিরাট কোহলির ব্যাট থেকেও শতরান এসেছে। সেই সময় কোহলির বয়স ছিল ২৬ বছর ৫১ দিন।
এদিকে নীতিশ রেড্ডির ব্যাট থেকে শতরান এলেও ভারতীয় শিবিরে অন্ধকার এখনও মুছে যায়নি। নীতিশের শতরান হওয়াতে একাধিক রেকর্ড হলেও ভারতের সামনে দুঃস্বপ্ন খেলা করছে। নীতিশ কুমারকে অলরাউন্ডার হিসেবে অবশ্যই চিহ্নিত করা যায়। তাঁর এই শতরান ভারতীয় ক্রিকেটে ঐতিহাসিক মুহূর্ত হয়ে থাকবে। মেলবোর্নের মাঠে প্রায় ৮০ হাজার দর্শকের সামনে তিনি যেভাবে শতরান করেছেন, তা ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে। নীতিশকে একটা সময় প্রাক্তন ক্রিকেটারদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। তবে তাঁর নিজের উপরে আস্থা পেরেছিলেন, এটাই তাঁর কাছে বড় প্রাপ্তি। তবে তৃতীয় দিনের শেষে রোহিত ব্রিগেডের হাতে মাত্র একটি উইকেট রয়েছে। যে অবস্থায় দুই দল দাঁড়িয়ে আছে, তাতে মনে করা হচ্ছে, কোনও পক্ষই জয়ের ছবি দেখতে পাবে না। ভারতীয় দল যদি এই টেস্ট ম্যাচে জয় ছিনিয়ে নিতে না পারে, তাহলে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার ছাড়পত্র পেতে কঠিন হয়ে যাবে।