• facebook
  • twitter
Saturday, 19 October, 2024

ননীদা, ডিকেন্স ও আইপিএল ক্রিকেট কার্নিভাল

শোভনলাল চক্রবর্তী আইপিএল চলছে জোর কদমে৷ চাহাল, বুমরাহ কিংবা মোহিত শর্মা যখন বল হাতে হেঁটে যাচ্ছেন বোলিং মার্কে কিংবা দৌডে় যাচ্ছেন বল করতে ঠিক সেই সময় প্রতিবার আমার মনে ননীদার মুখটা ভেসে উঠছে৷ ননীদা হলেন কলকাতার ক্রিকেট ক্লাব অব হাটখোলা, সংক্ষেপে যা ‘সিসিএইচ’, তার প্রাণ৷ মতি নন্দীর ‘‘ননীদা নট আউট’’ উপন্যাসের নায়ক৷ উপন্যাস শুরু হচ্ছে

শোভনলাল চক্রবর্তী

আইপিএল চলছে জোর কদমে৷ চাহাল, বুমরাহ কিংবা মোহিত শর্মা যখন বল হাতে হেঁটে যাচ্ছেন বোলিং মার্কে কিংবা দৌডে় যাচ্ছেন বল করতে ঠিক সেই সময় প্রতিবার আমার মনে ননীদার মুখটা ভেসে উঠছে৷ ননীদা হলেন কলকাতার ক্রিকেট ক্লাব অব হাটখোলা, সংক্ষেপে যা ‘সিসিএইচ’, তার প্রাণ৷ মতি নন্দীর ‘‘ননীদা নট আউট’’ উপন্যাসের নায়ক৷ উপন্যাস শুরু হচ্ছে কলকাতা ময়দানে সিসিএইচ ক্লাবের ক্রিকেট পিচ তৈরির কাহিনি নিয়ে৷ উৎকলবাসী হেড মালি দুর্যোধন মহাপাত্র ঘাসবিহীন উইকেটের দিকে গর্ব ভরে চেয়ে বলল, ‘কী একখানা পিচো বনাইছি দেখো ননীবাবু, লড়ি চালাই দাও কিছু হবেনি৷’’ শুনে গম্ভীর মুখে ননীদা বললেন, ‘ক্রিকেট লরি ড্রাইভারদের খেলা নয় দুর্যোধন৷’ ওই কথা শুনে দুর্যোধন বলল, ‘মো কি সে কথা বলিছি৷ গত বৎসর আপোনি বলিলেন, কড়া ইস্তিরি-করা শার্টের মতো পেলেন পিচ না হলি ব্যাটোসম্যান স্টোরোক করি খেলবি কেমনে? তাই এ বছর ইস্তিরির মতো করি রোলার টানছি৷’ ননীদা আরও গম্ভীর মুখে বললেন, ‘ক্রিকেট ধোপাদের খেলা নয়৷’ দুর্যোধন ঘাবড়ে গেল৷ ক্ষুণ্ণও হলো৷ বলল, ‘গত বৎসরের আগের বৎসর বলিলেন, কী পিচ বানাইছিস, এ যে খেতি জমি, ধান ছড়াই দিলি গাছো হই যাবে৷’ ননীদার মন্তব্য, ‘ক্রিকেট চাষাদেরও খেলা নয় দুর্যোধন৷’ এবার দুর্যোধন ভ্রু কুঁচকে বিরক্ত চোখে ননীদার ভাবলেশহীন মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘কিরিকেট তবে কারা খেলে?’ ননীদার উত্তর, ‘‘ভদ্রলোকেরা খেলে৷ ক্রিকেটের পিচ হবে স্পোর্টিং৷ বোলার আর ব্যাটসম্যানকে ফিফটি-ফিফটি সুযোগ দেবে৷’’ ‘সিসিএইচ’ এর ঘিরে রাখা পিচের দিকে আনমনে হেঁটে আসছিল ক’জন৷ সন্ধ্যার আলো-আঁধারিতে তাদের পক্ষে দড়ি দিয়ে ঘিরে রাখা পিচ ঠাওর হওয়ার কথা নয়৷ কিন্ত্ত ননীদার নজর এড়ায়নি৷ হা হা করে সেদিকে ছুটে গেলেন, ‘বাইরে দিয়ে, বাইরে দিয়ে৷ বাহারসে যাইয়ে৷ ইহা ক্রিকেট দেবতাকা পূজা হোগা৷’ শুনেই লোকগুলো অবনত মস্তকে পিচের উদ্দেশে করজোড়ে প্রণাম করে মহমেডান মাঠের বেড়া ঘেঁষে হাইকোর্ট মাঠের দিকে চলে গেল, সম্ভবত চিড়িয়াখানা কি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের দিকে৷ ননীদা ফিরে এসে টিমের বোলারদের বললেন, ‘ব্যাটসম্যানকে কখনো সেটল হতে দেবে না বুঝলে৷ সব সময় চেষ্টা করবে জাঁকিয়ে বসার আগেই বিদেয় করতে৷ ব্যাটসম্যান যত সেটল হবে, তত বেশি রান উঠবে৷ খেলাটাও হাতের বাইরে চলে যাবে৷’ এদিকে টিভির পর্দায় একটার পর একটা ওভার কেটে যাচ্ছে, বিপক্ষের স্কোরবোর্ডও সচল৷ ননীদার কথাগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে৷ নবম ওভারে বিপক্ষের প্রথম ছন্দপতন৷ ২০ বলে ৫১ করে ফিরে গেলেন ব্যাটসম্যান৷ সঙ্গে করে নিয়ে গেলেন ম্যাচের ভাগ্যও৷

ক্রিকেট নিয়ে লিখতে বসে মনে হচ্ছে ক্রিকেট নিয়ে লেখালেখি তো সব ভাষাতেই অন্তহীন৷ ইংরেজি ভাষায় ক্রিকেট তো সেই কবে থেকেই চরিত্র৷ চার্লস ডিকেন্স-এর দ্য পিকউইক পেপারস-এ ম্যাচ শুরুর বর্ণনার খানিকটা না-দেওয়ার লোভ সামলাতে পারছি না৷ খেলা অল মাগলটন-এর সঙ্গে ডিংলি ডেল-এর৷ ডিকেন্স লিখেছেন, ‘ডামকিনস ও পোডডার মাঠে নামলেন৷ হাতে ব্যাট৷ তারা যে যার উইকেটের দিকে এগিয়ে গেলেন৷ বল হাতে লুফি প্রস্তুত৷ ফিল্ডাররাও হাঁটুর ওপর হাত রেখে ঝুঁকে দাঁড়িয়ে৷ আম্পায়াররা নিজেদের স্থানে৷ স্কোরাররা খাতা ও কলম নিয়ে তৈরি৷ মাঠজোড়া এক অদ্ভুত নৈঃশব্দ্য৷ পোডডারের পাশ দিয়ে লুফি কয়েক কদম পিছিয়ে গেলেন৷ বলটা হাতে নিয়ে ডান চোখের ওপর কিছু সময় ধরে থাকলেন৷ ডামকিনসের নজর লুফির চোখে স্থির৷ ‘“প্লে” শব্দটা শোনামাত্র বলটা উড়ে গেল সোজা মিডল স্টাম্পের দিকে৷

ডামকিনসের ব্যাটের ডগায় লেগে ফিল্ডারের মাথা টপকে গেল৷ বাউন্ডারির দিকে বল যাচ্ছে, শোনা গেল “রান রান, আরেকটা, আরেকটা, ধর ধর, বলটা ধর, ছোঁড়” এই ধরনের আওয়াজ৷ ডামকিনস ও পোডডার যেন অজেয়৷ ছাড়ার বল তারা ছাড়লেন, মারার বল পাঠালেন মাঠের যত্রতত্র৷ বোলাররা ক্রমেই ক্লান্ত বোধ করলেন৷ হাতব্যথায় টনটন করে ওঠা পর্যন্ত তারা বল করে গেলেন৷ ডামকিনস ও পোডডার যখন যথাক্রমে ক্যাচ ও স্টাম্পড আউট হলেন, অল মাগলটনের স্কোর তখন ৫৪৷

বাংলা সাহিত্যের চিরস্মরণীয় বিনয় মুখোপাধ্যায় ‘যাযাবর’ ছদ্মনামে বেশি পরিচিতি পেয়েছেন৷ আম বাঙালির কাছে ক্রিকেটকে জনপ্রিয় করতে তিনি লিখলেন, ‘পাড়া গাঁয়ের ছেলেরা পাঠশালা থেকে বাড়ি ফেরার সময় ঢিল ছুঁড়ে পেয়ারা পাড়ে৷ যাদের তাক খুব নির্ভুল, তারা ঢিল ছুঁড়লেই পেয়ারা বোঁটা ছিঁড়ে টুপ করে তলায় পড়ে৷ আবার, কারওবা ঢিল ছোঁড়াই সার হয়৷ কারণ, পেয়ারার গায়ে লাগাতে প্রথমে ঢিলটাকে উপযুক্ত দূরত্বে ছোঁড়া চাই৷ এই দূরত্বকে ইংরেজিতে বলে লেংথ৷ আর চাই নিশানা৷ ইংরেজিতে তাকে বলে ডিরেকশন৷ ডিরেকশন ঠিক না হলে লেংথ উপযুক্ত হলেও ঢিল পেয়ারাটার ডাইনে বা বাঁয়ে গিয়ে পড়বে, তার গায়ে লাগবে না৷ বোলিং আসলে ঢিল ছোঁড়ারই রকমফের৷ ক্রিকেট শেখানোর দায় বা দায়িত্ব অবশ্য শঙ্করীপ্রসাদ বসুর ছিল না৷ রমণীয় ক্রিকেট-এ মেয়েদের ক্রিকেটপ্রেম নিয়ে লিখে পরে বুঝেছিলেন, সেটা হয়েছিল ঘোর ‘অবিবেচকের কাজ’৷ যদিও ক্রিকেটকেন্দ্রিক রস-রচনা ছাড়া সেটি অন্য কিছু ছিল না৷ রচনাটা এই রকমের : ‘দুটি মেয়েতে কথা হচ্ছে গ্যালারিতে বসে৷ মেয়ে দুটি সাজগোজ করে এসেছে৷ তারা শুনেছে, কলকাতায় ইদানীং ক্রিকেট নাগরিকতার একটা অঙ্গ৷ তাই বাধ্য হয়েছে আসতে৷ মেয়েদের নিজস্ব এক ধরনের বিস্ময় ও শিহরণ মেশানো “ঈ” ও “কী”-র মাঝামাঝি তীক্ষ্ণ কাকলি আছে, বহুবার তার দ্বারা সচকিত সচঞ্চল করেছে আশপাশের ক্রিকেট–রসিকদের৷ খেলা শেষ৷ আসন্ন অন্ধকারের ধূসর আলোতে মাথার দোলনে একটি মেয়ের কানের হিরে ঝিকিয়ে উঠল, আর একটি মধুর বিস্ময়ভরা প্রশ্ন শোনা গেল, আচ্ছা ভাই, কোন দল জিতল বল তো?’৷ আজ আর সে দিন নেই৷ গ্যালারি ভর্তি এখন ললনায়৷ তাঁরা এখন দলের মালকিন৷ তাঁদের কানে আজও হিরের ঝলক৷ ক্রিকেট এখন আগের থেকে অনেক রমণীয়, সন্দেহ নেই৷

নিছক ক্রিকেট রিপোর্টিংকে সাহিত্য ও শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছেন চিরস্মরণীয় নেভিল কার্ডাস, স্যার ডন ব্র্যাডম্যান সম্পর্কে যাঁর উক্তি, ‘…হি চেঞ্জড ব্যাটসম্যানশিপ ইন্টু অ্যান একজ্যাক্ট সায়েন্স, বাট আ সায়েন্স উইথ আ ডিফারেন্স; হি ডোয়ার্ফড প্রিসিডেন্ট অ্যান্ড নোন ভ্যালুজ৷ ’ কিন্ত্ত রিপোর্টিং বাদ দিয়েও নানা দেশে ক্রিকেট হয়ে উঠেছে জীবনের অঙ্গ৷ ‘‘মালগুড়ি ডেজ’’ খ্যাত আর কে নারায়ণ কিংবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভি এস নাইপল অথবা হালের চেতন ভগত, নিজের নিজের সময়ের ক্রিকেটকে করে তুলেছেন তাঁদের নানাবিধ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান উপাদান৷ উদারনীতি ও বিপণনের হাত ধরে ক্রিকেটের এই বহুরূপী হয়ে ওঠা চিত্রায়িত করেছিলেন শঙ্করীপ্রসাদ বসু৷ সুপারহিট ক্রিকেটিলায় তিনি লিখছেন, ‘…কী ছিল, আর কী হলো! ছিল পাঁচ দিনের ক্রিকেট, রুগ্ন হয়ে সেটি টিকে রইল বটে, কিন্ত্ত বাজার মাত করল একদিনের ধড়ফড়ে কাণ্ড৷ এখন আর পাঁচ দিনের পাঁচপাকে বাঁধা সম্পর্ক নয়, এখন প্রতিদিনের মালাবদল৷ একমাত্র এই খেলাকে নিয়েই সাহিত্য তৈরি হয়েছে৷ সাহিত্যের মূলে থাকে জীবন৷ সেই জীবনে থাকা চাই উত্তেজনার সঙ্গে গাঢ় আবেগ ও সঘন ধীরতার সুষম বিন্যাস৷ ক্রিকেটে তা মেলে৷ মহান অনিশ্চয়তা তার সর্বাঙ্গে৷ মেয়েদের মন ও পুরুষের ভাগ্যের মতো ক্রিকেটের চরিত্র দেবতাদেরও অজ্ঞাত৷… এখন হিসেবি উত্তেজনা৷ এখন ঘড়ির খেলা আর কড়ির খেলা৷ ওভার মেপে, ঘড়ি ধরে বলতে হবে, ওহে ব্যাটধারী, এইবার তুমি ঠ্যাঙাড়ে হও, খেপে যাও, এসে গেছে ধ্যাতানি পর্ব (স্লগ ওভারস)৷ এখন, মারকাটারি, ধুন্ধুমার৷ নবমীর পাঁঠাবলি৷ ড্যাডাং ড্যাডাং পাঁঠা পড়ছে আর রক্তপাগল ভক্তরা হিংস্র উল্লাসে মাঠ কাঁপাচ্ছে৷’ আইপিএল ম্যাচে রক্ত পাগল ভক্তদের অভাব নেই৷

এই রকমফের সত্ত্বেও কিছু কিছু মানুষ রয়ে গেছেন, আদি ও অকৃত্রিমের বাইরে যাঁরা যেতে চাননি৷ যেমন পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী প্রয়াত অশোক মিত্র৷ ‘আমি ভদ্রলোক নই, আমি কমিউনিস্ট’ বলা এই মানুষটি ‘ভদ্রলোকের খেলা’ ক্রিকেটে আমৃতু্য নিমজ্জিত ছিলেন৷ ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ এখনো মজে আছেন ক্রিকেটের মাধুর্যে৷ আইপিএলে খেলার জন্য শিল্পপতি বিজয় মালিয়া (বর্তমানে দেশত্যাগী) যখন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর মালিকানা পেলেন, রামচন্দ্র গুহ তখন পড়লেন এক অদ্ভুত দোটানায়৷ ২০১৩ সালে ‘নো গেম ফর গুড মেন’ নিবন্ধে লেখেন, ‘ক্রিকেটের এক নতুন ফরম্যাট ও নতুন ক্লাব মাথাচাড়া দেয় আমার জীবন ও আমার শহরে৷ আমি এক জটিল ভাবনায় আচ্ছন্ন হই৷ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর প্রতি কি অনুগত হব? অনেক ভেবে দেখলাম, না৷ হব না৷ কারণ, প্রমোটারকে আমার পছন্দ নয়৷ বিজয় মালিয়া কোনো দিন ক্রিকেট খেলেননি৷ তেমনভাবে ক্রিকেট দেখেনওনি৷ ক্রিকেটের টেকনিক ও ইতিহাস কিছুই জানেন না৷ ইগো, গ্ল্যামার ও সেলিব্রিটিদের দেখে তিনি এই খেলার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন৷’ রামচন্দ্র গুহ একবারের জন্যও চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে যাননি আইপিএল ম্যাচ দেখতে৷

বাংলা সাহিত্যে ক্রিকেট দিয়েই লেখাটা শেষ করি৷ যুগ পাল্টেছে৷ টিভির স্ক্রিন এখন ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ডিসেকশন টেবিল৷ ক্যামেরা ও সাবেক ক্রিকেটাররা যখন প্রতিটি বল কাটাছেঁড়া করছে, তখন প্রভাতি দৈনিকের রিপোর্ট কী রকম হবে? তিরিশ বছর আগে সেই দোলাচল বিভ্রান্ত করেছিল মতি নন্দীর দ্বিতীয় ইনিংসের পর উপন্যাসের নায়ক সাবেক ক্রিকেটার বর্তমানে সাংবাদিক সরোজকে৷ সে কানপুর গেছে ভারত-নিউজিল্যান্ড টেস্ট কভার করতে৷ শঙ্কর সহ–সাংবাদিক৷ তার প্রতি অবচেতনে বিতৃষ্ণা ঘনিয়ে উঠেছে সরোজের৷ কারণ, ‘ছেলেটি সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট বোঝে না৷ অথচ সে জন্য কোনোরকম জড়তা বা কুণ্ঠা ওর মধ্যে নেই৷ ও এসেছে ঝগড়াঝাঁটি, রসালো কথাবার্তা, অপ্রীতিকর ঘটনা অর্থাৎ কেচ্ছা জোগাড় করার জন্য৷ সেসব খবর তারিয়ে তারিয়ে পাঠকরা পড়বে, যেসব খবরের সঙ্গে খেলার মূল উদ্দেশ্য বা প্রেরণার কোনো সম্পর্ক নেই৷ কাগজের বিক্রি বাড়ানোর এই পন্থা সরোজ কখনো মেনে নিতে পারেনি৷ ইদানীং এই পথে অনেকেই যাচ্ছে, সরোজের যাওয়ার ইচ্ছা নেই৷ খেলার মাঠে খেলা হচ্ছে, তুমি দেখছ, খেলার দোষত্রুটি, ভালোমন্দ যা দেখলে সেটাই তোমার রিপোর্ট করার বিষয়৷ কিন্ত্ত কী একটা হাওয়া যেন আসছে, শুধু মাঠের মধ্যে খেলা নয়, তার আড়ালে যে জগৎ রয়েছে তার খবরও প্রকাশ্যে টেনে আনা দরকার হয়ে পড়ছে৷ এটাও নাকি জরুরি ঘটনা৷ সরোজ এই ধরনের খবর সংগ্রহের বিরোধী৷ সে শুনেছে, আড়ালে তার সম্পর্কে “মান্ধাতাপন্থী… নীতিবাগীশ… আধুনিক রিপোর্টিংয়ের কিসসু জানে না”—এসব বলাবলি হয়৷ এ–ও শুনেছে, জার্নালিজম যেখানে এসেছে, তাতে ও এখন হলে চাকরিই পেত না৷ টোটালি মিসফিট৷’ ক্রিকেট বদলেছে৷ সাহিত্যও৷ দুই বাংলার পাড়ায় পাড়ায় ননীদারা কিন্ত্ত আজও ক্রিকেট-অন্তঃপ্রাণ হয়ে টিকে রয়েছেন৷ জহুরির চোখ নিয়ে খুঁজে যাচ্ছেন হবু ক্রিকেটারদের৷ উপদেশ দিচ্ছেন, ব্যাটসম্যানকে থিতু হতে দিয়ো না৷ চাহাল, বুমরাহ, মোহিত শর্মা সহ অন্য দলের বোলাররা কি ননীদার উপদেশটা শুনতে পাচ্ছে? আইপিএল— হায়, এ যে শুধুই ব্যাটসম্যানদের দাপাদাপি!