নাম প্রত্যাহার করে নিল ডায়মন্ড হারবার এফসি

কলকাতা ফুটবল লিগের অবশিষ্ট খেলা ভেস্তে যেতে চলেছে। ইতিমধ্যেই আইএফএ’র শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি ইস্টবেঙ্গল ও মহমেডান স্পোর্টিংয়ের খেলায় চার ভূমিপুত্রকে খেলানো হয়নি বলে, ইস্টবেঙ্গলকে পুরো পয়েন্ট দিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, খেলার দ্বিতীয় পর্বের শেষের দিকে মহমেডান স্পোর্টিং তিনজন ভূমিপুত্রকে দলে রেখেছিলেন। সেই অপরাধেই ওই ম্যাচটি পুরো পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গলকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই নিয়ে কলকাতা ফুটবলে আরও বেশ কয়েকটি ক্লাবের কর্মকর্তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বিশেষ করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাব চ্যাম্পিয়নশিপের মুখে যখন দাঁড়িয়ে, ঠিক তখনই ইস্টবেঙ্গলকে পুরো তিন পয়েন্ট দেওয়ায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে তাদের আর কোনও বাধা রইল না। ডায়মন্ড হারবার ক্লাবের পক্ষ থেকে বুধবার রাতেই নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবং আইএফ’তে চিঠিও পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিমত, আইএফএ কোনওভাবেই নিরপেক্ষতা বজায় রাখেনি।

ইচ্ছাকৃতভাবে ইস্টবেঙ্গলকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথকে প্রশস্ত করে দেন। যখন সুপার সিক্সে চ্যাম্পিয়নশিপের লড়াইটা একেবারে দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, ঠিক তখনই এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পিছনে অন্য কোনও চক্রান্ত আছে কিনা, সেটা দেখার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওই ম্যাচটি ড্র হয়েছিল। কিন্তু মাত্র শেষের দিকে তিনজন ভূমিপুত্র যদি মহমেডানে খেলে থাকে, তার জন্য পুরো পয়েন্ট ইস্টবেঙ্গলকে দিয়ে দেওয়া, এটা শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি কখনওই ঘোষণা করতে পারে না। আইএফএ’র এই সিদ্ধান্তকে কোনওভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। সেই কারণেই ডায়মন্ড হারবার ফুটবল ক্লাবের অন্যতম কর্মকর্তা ও সহসভাপতি আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আইএফএ’তে এখন ব্যাপক নোংরামি শুরু হয়েছে। এইভাবে খেলা সম্ভব নয়। তাই আমরা নাম প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। শুধু তাই নয়, আগামী বছরে কলকাতা ফুটবল লিগে খেলব কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কলকাতা লিগের পয়েন্ট টেবল অনুযায়ী একমাত্র ডায়মন্ড হারবারের পক্ষেই ইস্টবেঙ্গলকে টপকে যাওয়া সম্ভব ছিল। ডায়মন্ড হারবার নাম প্রত্যাহার করে নেওয়ায় আর ইস্টবেঙ্গলের কোনও চিন্তা থাকল না চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ক্ষেত্রে।

অন্যদিকে কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্স অ্যাসোসিয়েশনকে যে কারণে শো-কজ করা হচ্ছে, তারও কোনও ভিত্তি নেই। বলা হচ্ছে, বেটিং চক্রের কোনও একজন ব্যক্তি ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন এবং তাকে মাঠেও দেখা যাচ্ছে। এই বিষয়ে আগামী ২১ অক্টোবরের মধ্যে চিঠি দিয়ে জানাতে হবে ঘটনাটি সত্যি কিনা। আইএফএ’র এই সিদ্ধান্তের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্সের অন্যতম ফুটবল কর্মকর্তা ও কোষাধ্যক্ষ চিন্ময় চ্যাটার্জি বলেছেন, ওই ব্যক্তি যে বেটিং চক্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তা কি প্রমাণ করতে পেরেছে আইএফএ? মাঠে যে কেউ আসতে পারে খেলা দেখার জন্য। আইএফএ’র কর্মকর্তারা দর্শকদের কি আসতে বারণ করছেন? তারপরেও বলতে হবে, পুজোর ছুটির ঠিক একদিন আগে মঙ্গলবার মিটিং ডাকা হয়েছিল। আর আইএফএ’র পক্ষ থেকে মেল করে ওই মিটিংয়ে হাজির থাকতে বলা হয় সোমবার রাতে। আইএফএ যে সঠিকভাবে চলছে না, তা স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অবশ্যই আমরা চিঠি দিয়ে জানাব কেন আমাদেরকে এ ব্যাপারে শো-কজ করা হয়েছে।


এদিকে মোহনবাগান ক্লাবের সহসভাপতি কুণাল ঘোষ আইএফএ’র এই সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছেন, আইএফএ কি বাংলার ফুটবলের অভিভাবক, নাকি শুধু ইস্টবেঙ্গলের অভিভাবক? সেই ভাবে মহমেডান স্পোর্টিংয়ের যুক্তি না শুনে কেন ইস্টবেঙ্গলকে তিন পয়েন্ট দিয়ে দেওয়া হল? এইভাবে আইএফএ চলতে পারে না। আইএফএ’তে বদল দরকার। তিন-চারজন মিলে দিনের পর দিন এই কাজ চালিয়ে যাবেন, তা ঠিক নয়। এসব বন্ধ হোক। মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেছেন, আমরা আইএফএ’র এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। ফিল্ডে আমরা খেলব না। আইএফএ’র কর্মকর্তাদের পদত্যাগ করা উচিত। বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভবানীপুর ক্লাবও আর খেলবে না কলকাতা ফুটবলে। অন্যসূত্রেও জানা গেছে, মহমেডান স্পোর্টিং আইএফএ’র সিদ্ধান্ত নিয়ে চিঠি পাঠাচ্ছে। তাই আইএফএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইস্টবেঙ্গলকে তিন পয়েন্ট দিয়ে দেওয়ায় ময়দানে বড় গুঞ্জন শুরু হয়েছে।