• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

নৈহাটি ও কল‍্যানীতে আইলিগ তৃতীয় বিভাগের বড় আসর

গ্রুপ-বিতে গ্রুপস্টেজ চ‍্যাম্পিয়ান মিজোরামের চানমারি এফসি,চ‍্যাম্পিয়ান তেলেঙ্গানার আব্বাস ইউনিয়ন এফসির সাথে গ্রুপস্টেজের তিন রার্নাস দল যথাক্রমে নিউ দিল্লির দলভীর ফুটবল এ্যকাডেমি, মহারাষ্ট্রের জিএমএফসি,কেরলের স‍্যাট ত্রিতুর দলেরা আছে।

রনজিৎ দাস

আগামী ২৫শে সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর নৈহাটি ও কল্যাণী স্টেডিয়ামে আইলিগ তৃতীয় বিভাগের প্লেঅফের গুরুত্বপূর্ণ খেলার আসর বসতে চলেছে। ৫টি গ্রুপস্টেজ থেকে যোগ্যতা অর্জনকারী ১০টি দলকে নিয়ে এই প্লেঅফের খেলা শুরু হবে। ১০টি দলকে দুটো গ্রুপে ভাগ করে খেলা হবে। প্রতি গ্রুপের ৫টা দলের মধ্যে লিগ টেবিলের শীর্ষের দুটো করে মোট ৪টে দল সরাসরি এই ২০২৪-২৫ মরশুমেই আইলিগের দ্ধিতীয় বিভাগে খেলার সুযোগ পাবে। উভয় গ্রুপের লিগ টেবিলের তৃতীয় দল দুটি ২০২৫-২৬ মরশুমে আইলিগের দ্ধিতীয় বিভাগে খেলতে পারবে। দুটো গ্রুপের শীর্ষ দুটো দল আইলিগ তৃতীয় বিভাগের ফাইনালে খেলবে এবং ফাইনালের জয়ী দল ২০২৪-২৫ মরশুমের আইলিগের তৃতীয় বিভাগের চ্যাম্পিয়ান হিসেবে ঘোষিত হবে। ৬ অক্টোবর ফাইনাল ম্যাচ হবে।

৩ সেপ্টেম্বর থেকে ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইলিগের গ্রুপস্টেজের খেলা হয়েছে। লিগে অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর সাথে আলোচনার ভিত্তিতে প্রতি গ্রুপ থেকে দুটো করে দল প্লেঅফে খেলার সুযোগ পেল। ৫টা গ্রুপের মধ্যে গ্রুপ-বিতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। এই গ্রুপ থেকে আয়োজক গোয়ার সেসা ফুটবল এ্যকাডেমি ৮ পয়েন্ট পেয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। দ্ধিতীয় দল হিসেবে পাঞ্জাবের দলভীর ফুটবল এ্যকাডেমি প্লেঅফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। তারা নয়া দিল্লির গাড়োয়াল হিরোস এফসিকে হেড-টু-হেড পয়েন্টের ভিত্তিতে পিছনে ফেলে প্লেঅফে খেলার ছাড়পত্র পায়। গ্রুপ-এতে প্রত্যাশামত আয়োজক বাংলার ডায়মন্ড হারবার গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। এই গ্রুপ থেকে কেরলের স্যাট ত্রিতুর গোলপার্থক্যে মধ্যপ্রদেশের লেকসিটিকে পিছনে ফেলে প্লে অফের যোগ্যতা অর্জন করে। লেকসিটি অপেক্ষা তারা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান ডায়মন্ড হারবার এফসির কাছে কম গোলের ব্যবধানে হেরেছে। গ্রুপ-সিতে আয়োজক মিজোরামের চানমারি এফসি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। গ্রুপের শেষ ম্যাচে তারা কর্নাটকের হ্যাল স্পোর্টস ক্লাবকে হারিয়ে দেয়। এই ম্যাচ হেরে হ্যাল স্পোর্টস ক্লাব প্লেঅফের খেলা থেকে ছিটকে যায়। যদিওবা তারা লিগে যথেষ্ট ভালো ফুটবল উপহার দেয়। এই গ্রুপ থেকে মহারাষ্ট্রের জিমএফসি ক্লাব গোলপার্থক্যে প্লেঅফে খেলার সুযোগ পায়। গ্রুপ-ডিতে আয়োজক অসমের কার্বি আনলং মর্নিং স্টার ক্লাব মহারাষ্ট্রের কেঁকড়ে এফসিকে হারিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট অর্জন করে গ্রুপ থেকে দ্ধিতীয় দল হিসেবে যোগ্যতা অর্জন করে। এই গ্রুপ থেকে মণিপুরের কেএল স্পোর্টস ক্লাব গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান হয়। গ্রুপ-ইতে তেলেঙ্গানার আব্বাস ইউনিয়ন এফসি প্রথম ম্যাচে আয়োজক জম্মু ও কাশ্মীরের ডাউনটাউন হিরোস এফসির কাছে হেরে যায়। কিন্তু পরবর্তী ৩ ম্যাচে জয়লাভ করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান হয়। এই গ্রুপ থেকে ডাউনটাউন হিরোস এফসি দ্ধিতীয় দল হিসেবে প্লে অফে খেলার সুযোগ পায়।

আইলিগের তৃতীয় বিভাগে ২৫টা ক্লাব অংশগ্রহণ করেছিল। ১০টা ক্লাব প্লেঅফে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। বাকি ১৫টা ক্লাব সরাসরি তাদের নিজ নিজ রাজ্য লিগে অবনমন হয়ে গেল। পরের মরশুমে তাদের আবার রাজ্য এ্যশোসিয়েশনের লিগ থেকে যোগ্যতা অর্জন করে আসতে হবে। আইলিগের তৃতীয় বিভাগের ৫০টা খেলায় ১৬৬টা গোল হয়েছে। গড়ে প্রতি গ্রুপে ১০টা করে খেলায় ৩০টা গোল হয়েছে। গ্রুপ-ডিতে সবোর্চ্চ ৪২টা গোল হয়েছে। এই গ্রুপে অসমের কার্বি আনলং মণিংস্টার ক্লাব সবোর্চ্চ ১৬টা গোল করেছে। তাদের আক্রমণভাগের কেভি ও রবিনসন যথাক্রমে ৫টা ও ৪টা গোল করেছে। এই গ্রুপের খেলায় প্রচুর দর্শক তাদের প্রতি ম্যাচে গ্যালারিতে উপস্থিত থেকে দলকে উৎসাহিত করেছে। এই গ্রুপে উত্তরপূর্বে আরেকটি ক্লাব ছিল। ফলে রাতের প্রায় প্রতি খেলায় প্রচুর দর্শক মাঠে উপস্হিত থেকেছে। মণিপুরের কেএলএসএ ৪ ম্যাচে ১২ গোল করে। ওদের নির্দিষ্ট কোনো খেলোয়াড় একাধিক গোল করেনি। মোট ১২ গোল দলের ৮ জন খেলোয়াড় মিলে করেছে। ৫টা গ্রুপ চ্যাম্পিয়ান দলের মধ্যে গ্রুপ-ইতে আব্বাস ইউনিয়ন এফসি সবচাইতে কম গোল করেছে। তারা ৪ খেলায় মাত্র ৪টে গোল করেছে। তারাই ২৫ দলের একমাত্র দল যারা ৪ ম্যাচের মধ্যে ৩টে ম্যাচে কোনো গোল খায়নি। দলের ৪ গোলের মধ্যে স্টাইকার ইমরান আলি ২টো গোল করেছে। প্রথম ম্যাচে হারার পর তারা পরবর্তী ৩ ম্যাচেই জয় পেয়েছে। গ্রুপ-এতে বাংলার ডায়মন্ড হারবার এফসি খেলেছে। ৪ ম্যাচে তারা ১১টা গোল করেছে। এই ১১ গোলের মধ্যে বাংলার নরহরি শ্রেষ্ঠা একাই ৪টে গোল করেছে। দলের ১১টা গোলই আক্রমণভাগের খেলোয়াড়রা করেছে। জবি জাষ্টিন ও গিরিক খোসলা ও আইমর এ্যডমরা ২টো করে এবং সুপ্রিয় পন্ডিত ১টা গোল করেছে। গোলে সুব্রত সাঁতরা ৪টে ম্যাচের মধ্যে ৩টে ম্যাচ খেলেছে। ৩টে ম্যাচেই বারপোষ্টের নীচে অনবদ্য ছিল। এই ৩ ম্যাচের মধ্যে ২টো ম্যাচে সে কোনো গোল খায়নি। কলকাতা লিগের খেলায় সুব্রত ম্যাচ খেলার সুযোগ পায়নি। কিন্তু আইলিগে সুযোগ পেয়েই সে নিজের সেরা খেলাটা দিয়েছে। এই গ্রুপে কেরলের স্যাট ত্রিতুর ভালো ফুটবল উপহার দিয়েছে। কেরলের কোটি কোটি টাকার সুপার লিগের মধ্যেও অধিকাংশ কেরল ছেলেদের নিয়ে স্যাট টিমের লড়াই প্রসংশা পাবেই। ৪ ম্যাচে তারা ৭ গোল দিয়েছে। এরমধ্যে আদেদুল বাসির একাই ৩টে গোল করে। ডায়মন্ড হারবার বিরুদ্ধে তার দলের হয়ে দ্ধিতীয় গোল প্লেঅফে খেলার দরজা খুলে দেয়।

মিজোরামে গ্রুপ-সির খেলাতেও ভালো দর্শক হয়। মিজোরামের চানমারি এফসির প্রতিটি খেলা রাতে অনুষ্ঠিত হয়। ওরা একমাত্র দল হিসেবে প্রতিটি ম্যাচ জিতেছে এবং ৪ ম্যাচে ১২টা গোল করেছে। কিন্তু গ্রুপ-বিতে নিউ দিল্লির গাড়োয়াল এফসিতে বাংলার একাধিক খেলোয়াড় খেলেছে। বাংলার স্টপার সন্দীপ পাত্র দলের অধিনায়ক ছিল। টিডি হিসেবে কাষ্টমসের কোচ বিশ্বজিৎ ভট্রাচার্য দায়িত্বে ছিলেন। সোনু মন্ডল, মোহন সরকার, অমিত এক্কা, জুয়েল আহমেদ, রাজেন ওরাও, বাবুয়া সিংরা দলের শক্তি বাড়ালেও দলভীর এ্যকাডেমির কাছে হার তাদের প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে দেয়।

১১ দিনের খেলার শেষে যোগ্যতা অর্জনকারী ১০টা ক্লাবকে নিয়ে প্লেঅফের খেলার গ্রুপ বিন্যাস হয়ে গেছে। গ্রুপ-এতে আয়োজক বাংলার ডায়মন্ড হারবার এফসি নৈহাটিতে খেলবে। গ্রুপে ডায়মন্ড হারবার ছাড়াও গ্রুপস্টেজ চ্যাম্পিয়ান গোয়ার সেসা ফুটবল এ্যকাডেমি, চ্যাম্পিয়ান মণিপুরের কেএলএসএ এবং গ্রুপস্টেজের রার্নাস দল যথাক্রমে জন্মু ও কাশ্মীরের ডাউনটাউন হিরোস এফসি, অসমের কার্বি আনলং মর্ণিংস্টার এফসিরা আছে। এই গ্রুপটা বেশ শক্তিশালী গ্রুপ বলা যায়। গ্রুপ-বিতে গ্রুপস্টেজ চ্যাম্পিয়ান মিজোরামের চানমারি এফসি, চ্যাম্পিয়ান তেলেঙ্গানার আব্বাস ইউনিয়ন এফসির সাথে গ্রুপস্টেজের তিন রার্নাস দল যথাক্রমে নিউ দিল্লির দলভীর ফুটবল এ্যকাডেমি, মহারাষ্ট্রের জিএমএফসি, কেরলের স্যাট ত্রিতুর দলেরা আছে। এই গ্রুপের দলগুলো তুলনামূলকভাবে সমমানের বলা যায়।

এখন দেখার বিষয় প্রতি গ্রুপের কোন তিনটে করে দল লিগ টেবিলের প্রথম তিনটে স্হান দখল করে এবং তাদের মধ্যে কোন ৪টে দল এই মরশুমেই আইলিগ-টুতে খেলার যোগ্যতা পায়। এছাড়া আইলিগের তৃতীয় বিভাগে কোন দল চ্যাম্পিয়ান হবে, তা নিয়ে ফুটবলপ্রেমীরা আগামী কয়েকদিন নৈহাটি ও কল্যাণী স্টেডিয়ামের ম্যাচের প্রতি নজর রাখবে।