অতি আত্মবিশ্বাস এবং পয়েন্ট টেবলে নিচের সারিতে থাকা দলকে হালকা চালে নেওয়ার অর্থই নিজের দলে বিপদ ডেকে আনা। এমনই ঘটনা ঘটেছে সবুজ-মেরুন শিবিরে। হয়তো কোচ হোসে মোলিনা ভেবেছিলেন চেন্নাইয়িন এফসি’র বিরুদ্ধে ম্যাচ জেতাটা খুব একটা কঠিন হবে না। কিন্তু নিজের ভুল ছকে চেন্নাইয়ের কাছে পয়েন্ট হারাতে হলো। খেলা শেষ হয়েছে গোলশূন্যভাবে। পরপর দুটো ম্যাচে মোহনবাগান ড্র করল। খালিদ জামালের জামশেদপুরের সঙ্গে এগিয়ে থেকেও শেষ পর্যন্ত মোহনবাগান ১-১ গোলে শেষ করে। তখনই হয়তো সতর্ক হওয়া উচিত ছিল কোচ হোসে মোলিনাকে। কিন্তু তিনি সেদিকে না গিয়ে পরবর্তী ম্যাচে চেন্নাইয়ের বিরুদ্ধে কী পরীক্ষা করতে চাইলেন, তা স্পষ্ট হল না। দল সাজালেন একটু অন্যভাবে। তিনি কয়েকজন ফুটবলারকে প্রথম একাদশে রেখে নামি ফুটবলারকে অতিরিক্ত তালিকায় রেখে দিয়েছিলেন। সেখানেই ভুল হল। চেন্নাইয়ের মাঠে গোলশূন্যভাবে খেলা শেষ করে ফিরতে হল কলকাতায়। পরপর দুটো ম্যাচে পয়েন্ট নষ্ট হওয়ায় অবশ্য লিগ টেবলের শীর্ষস্থান থেকে সরে যেতে হয়নি মোহনবাগানকে। কিন্তু এই ভুলের খেসারতে দশম স্থানে থাকা চেন্নাইয়ের কাছে পয়েন্ট নষ্ট করাটা সমর্থকরা মেনে নিতে পারছেন না। তবুও কোচ হোসে মোলিনা মনে করছেন, ফুটবলাররা যে খেলা খেলেছেন, তাতে খুব একটা ভরসা হারানোর মতো নয়। তাই মোহনবাগান সুপার জায়ান্টসের ফুটবলারদের খেলা দেখে তিনি খুশিই হয়েছেন। নিঃসন্দেহে বলা যায়, মোহনবাগানের ভাগ্য ভালো চেন্নাইয়ের মাঠে হারতে হয়নি। চেন্নাইয়ের ফুটবলাররা যে সুযোগগুলি পেয়েছিলেন, সেই সুযোগগুলি কাজে লাগাতে পারলে মোহনবাগানের বিপদ হত।
চেন্নাইয়িনের বিরুদ্ধে সবুজ-মেরুন দল সেরা ছন্দে ছিল না। ক্লান্তির ছাপ ছিল তাদের খেলায়। গোটা ম্যাচে মাত্র আটটি গোলের সুযোগ তৈরি করে তারা। প্রতিপক্ষের বক্সে মাত্র ১৫ বার বল ধরে মোহনবাগান। এই পরিসংখ্যানগুলি বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, খেলায় তাদের তেমন আক্রমণের মেজাজ ছিল না। কোচ মোলিনা বলেন, ‘সব ম্যাচেই গোল করতে চাই আমরা। কিন্তু শেষ দু’ম্যাচে আমরা বেশি গোল করতে পারিনি। চেন্নাইয়িন ভাল ডিফেন্স করেছে। তা-ও আমরা গোলের সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু শেষ মুহূর্তের ভুলে গোল করতে পারিনি। শেষ দুটো ম্যাচ মোটেই সহজ ছিল না। তবে দল ভালই পারফরম্যান্স করেছে। আমাদের আরও পরিশ্রম করতে হবে।’ চেন্নাই পরিশ্রম করে খেলেছে এবং ঘরের মাঠে তাদের দাপট অবশ্যই দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
কোচ মোলিনা জানাচ্ছেন তাঁর দলের ফুটবলারেরা ক্লান্ত। সেই কারণেই প্রথম দল নামাননি। মোলিনা বলেন, ‘জামশেদপুর ম্যাচের পর খেলোয়াড়েরা পুরোপুরি ক্লান্তি কাটানোর সময় পায়নি। সেই কারণেই দলে পরিবর্তন করেছিলাম। যারা পুরো সুস্থ তাদের নামিয়েছিলাম। এটাই আমার ঠিক বলে মনে হয়েছে। প্রথমার্ধে বিপক্ষকে আমরা সে ভাবে খেলতেই দিইনি। তবে আমাদের ফাইনাল পাস, ফিনিশিং অনেক জায়গাতেই ভুল হয়েছে।’
গোলের সুযোগ হাতছাড়া করার জন্যই জন্য পয়েন্ট খোয়ালেন তাঁরা, তা স্বীকার করে নিয়ে মোলিনা বলেন, ‘প্রতিপক্ষের চেয়ে সব দিক থেকে এগিয়ে ছিলাম। ম্যাচের শেষ দিকে আমাদের প্রথম দলের খেলোয়াড়দের নামাই এবং গোলের সুযোগও পাই। কিন্তু ওরাও গোল করতে পারেনি। চেন্নাইয়িন শক্তিশালী দল, আগ্রাসী ফুটবল খেলেছে। তবে আমরা যদি তিন পয়েন্ট পেতাম তাহলে মানসিক দিক দিয়ে খেলোয়াড়রাও এগিয়ে থাকতেন। এটা মনে রাখতে হবে অনেক সময় পচা শামুকে পা কেটে যায়। কোচ মোলিনা সেদিকে নজর দেননি বলেই মনে হয়েছে। ভুল স্ট্র্যাটেজিতে খেলার খেসারত দিল মোহনবাগান।