রনজিৎ দাস
২০২৪-২৫ মরশুমের আইএসএল কাপের সেমিফাইনালে ফিরতি ম্যাচে সোমবার জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলবে। লিগ-শিল্ড জয়ের পর এই কাপ জয়ের বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। একই মরশুমে লিগ শিল্ড ও আইএসএল কাপ জয়ের রেকর্ড একমাত্র মুম্বাই এফসির আছে। ২০১৯-২০ মরশুম থেকে আইএসএলের লিগ-শিল্ড ও আইএসএলের কাপ চালু হয়েছে। অর্থাৎ লিগ প্রক্রিয়ার মধ্যে দুটো প্রতিযোগিতা হচ্ছে। এই দুই প্রতিযোগিতায় মুম্বাই এফসি দুবার লিগ-শিল্ড ও দু’বার আইএসএল কাপ জিতেছে। মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস আইএসএল কাপ জিতলে মুম্বাই এফসির সেই রেকর্ডকেও স্পর্শ করবে। ২০১৯-২০ মরশুমে অবশ্য মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস লিগে ছিলনা। ফলতঃ মুম্বাই এফসি থেকে কমবার আইএসএলে অংশগ্রহণ করে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস এই কৃতিত্ব স্হাপন করতে পারবে। সেমিফাইনালের প্রথম পর্বের অ্যাওয়ে ম্যাচে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস জামশেদপুর এফসির কাছে ২-১ গোলের ব্যবধানে হেরে গেছে।খেলায় প্রাধান্য বিস্তার করেও একাধিক গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি।মাঝমাঠের দুই গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলার আপুইয়া ও মনবীর চোটের জন্য সে ম্যাচ খেলতে পারেনি। মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের কোচ মোলিনা মনবীরদের অনুপস্হিতিতে দলে ভিন্ন ফর্মেশনে খেলাতে বাধ্য হন।কিন্তু তাতে ম্যাচ বার করা যায়নি। আইএসএল কাপের ফাইনালে যেতে হলে,সোমবার যুবভারতী স্টেডিয়ামে ঘরের মাঠে জামশেদপুর এফসিকে হারাতেই হবে।
সাধারণত টানা লিগের খেলার কৌশল ও নকআউট খেলার কৌশলের মধ্যে বিস্তর ফাঁরাক থাকে। টিম স্কোয়াডে থেকে সঠিক আগ্রাসী প্রথম একাদশ বেছে নিতে হয়। চোট আঘাত এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। যেহেতু হোম ও এ্যওয়ের ভিত্তিতে দুটো ম্যাচের সুযোগ থাকছে,তাই অনেক প্লানিং করে খেলার সুযোগ থাকে। মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস তাদের গুরুত্বপূর্ণ দ্বিতীয় ম্যাচটা ঘরের মাঠে খেলার সুযোগ কি নিতে পারবে?
এই মরশুমে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসের টিম স্কোয়াডের গভীরতার প্রশংসা করা হচ্ছে।টিমে গুরুত্বপূর্ণ তিন জুনিয়র ভারতীয় ফুটবলার উঠে এসেছে। তথাপি দলে ভারতীয় ফুটবলারদের যথার্থ বিকল্প নেই। বিশেষত প্রান্তিক ফুটবলারদের বিকল্প নিয়েই সমস্যা দেখা দিচ্ছে। চোট আঘাত ছাড়া মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস দলের প্রথম একাদশে ভারতীয় ফুটবলার ও বিদেশি ফুটবলারদের মানের ক্ষেত্রে দারুন সামঞ্জস্য আছে। দলের সাফল্যের ক্ষেত্রে টিমের এমন ব্যালেন্স জরুরি হয়। এই মরশুমে আইএসএল লিগে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস দলের সাফল্যের ক্ষেত্রে আপফ্রন্টের ফুটবলাররা যেমন গোলের মধ্যে থেকেছে,তেমনিই ক্লিনশিট ধরে রাখার ক্ষেত্রে রক্ষনভাগের ফুটবলাররা অসাধারণ কৃতিত্ব দেখিয়েছে। আইএসএলের ইতিহাসে লিগে সর্বাধিক ১৫টা ক্লিনশিট রাখার নজির তারা রেখেছে। সেটপিস মুভমেন্টে রক্ষনভাগের ফুটবলাররা গোল তুলে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। এভাবেই লিগে দলের ৪৭টা গোলের মধ্যে রক্ষণভাগের ফুটবলাররা ১৪টা গোল তুলে নিয়েছে। অধিনায়ক শুভাশিস বসু আলরেড, রডরিগেজ ও দীপেন্দু সকলেই গোল করেছে। আক্রমণভাগের ফুটবলাররাও গোলের মধ্যে থেকেছে। দলের ৪৭টা গোলের মধ্যে ৩০টা গোল তারা করেছে। ম্যাকলারেন, কামিংস, দিমিত্রি, মনবীর, লিষ্টনেরা সবাই গোল করেছে। অর্থাৎ টিমের রক্ষন ও আক্রমণভাগ দারুন সচল এবং দল আক্রমনাত্মক ফুটবল খেলছে। এক্ষেত্রে কোচ মোলিনার টিম পরিচালনায় দূরদর্শীতার তারিফ করতে হয়। যেকোনো দলের সাফল্যের ক্ষেত্রে মাঠে ফুটবলারদের শৃঙ্খলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।
দলের কাঠামোকে শক্তিশালী রেখে পরিকল্পনায় ফুটবল খেলা তবেই সম্ভব হয়। এক্ষেত্রে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস টাফ ফুটবল খেলে সর্বাধিক ৬৬টা হলুদ কার্ড দেখলেও, টিমের শেফ ধরে রাখতে সমস্যা হয়নি। বিদেশি ফুটবলারদের ব্যবহারের ক্ষেত্রেও কোচ মোলিনা তার সিদ্ধান্তে কোনোপ্রকার দ্ধিধা রাখেননি। গত মরশুমের দলের সবোর্চ্চ গোলদাতা ও প্রপুলার ফুটবলার দিমিত্রি পেত্রাতসকে প্রথম একাদশের ভাবনায় রাখেননি। গ্রেগ স্টুয়ার্ট চোটে থাকলে অবশ্যই সেই দিমিত্রিকেই তিনি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু গ্রেগ স্টুয়ার্ট সুস্থ থাকলে সে প্রথম একাদশে থেকেছে। সেক্ষেত্রে দিমিত্রি পেত্রাতোস পরিবর্ত ফুটবলার হিসেবে ১৫/১৭ মিনিটের সামান্য কোটায় ব্যবহার হয়েছে। জেসন কামিংসের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। দিমিত্রি ও কামিংস গতবারের তুলনায় অনেক কম ম্যাচটাইম পেয়েছে। টিমের গুরুত্বপূর্ণ ফুটবলারদের কোচ মোলিনা এভাবে পরিচালনা করলেও দলে অসন্তোষ তৈরি হয়নি।
লিগ শিল্ড জয়ের পর কাপ জয়ে মোহনবাগান সুপার জায়েন্টসকে নিয়ে সদস্য সমর্থকদের মধ্যে প্রত্যাশার পারদ চড়েছে। জামশেদপুর এফসির বিরুদ্ধে ম্যাচে মোহনবাগান সমর্থকদের গ্যালারিতে বিপক্ষ সমর্থকদের হাতে শারীরিক নিগ্রহের ঘটনা হয়েছে। নিরাপত্তার অযাচিত বাড়াবাড়ির প্রসঙ্গ উঠেছে। ফলে ঘরের মাঠের যুবভারতীর ম্যাচ ঘিরে প্রবল উত্তেজনার রয়েছে। সমর্থকদের প্রতি লাঞ্ছনার জবাব দিতে ফুটবলাররা মাঠে বাড়তি উদ্দ্যেগ নিশ্চয়ই নেবে। কিন্তু চোট সারিয়ে আপুইয়া ও মনবীর দলে ফিরতে পারবেন কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। আইএসএল কাপে খেলতে নেমেই মোহনবাগান সুপার জায়েন্টস কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।দল ব্যর্থ হলেই এতদিন যে টিমের গভীরতা নিয়ে তারিফ হচ্ছেছিল, সেই টিমের রির্জাভ বেঞ্চ নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে।